প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, বাইপার্টিশন বর্ডার সিকিউরিটি বিল প্রশ্নে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কাদা-ছোড়াছুড়ির মাত্রাও ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী বৈতরণি সাফল্যের সঙ্গে উতরানোর অব্যর্থ হাতিয়ার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ কার্যকরভাবে ঠেকানোর নামে বাইডেন প্রশাসন বাইপার্টিশন বর্ডার সিকিউরিটি বিল পাসের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। টেক্সাসের ব্রাউন্সভিলে এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবারের বিলকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা কার্যকর, যুগোপযোগী ও নিখুঁত সীমান্ত নিরাপত্তা বিল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং কংগ্রেসে বিলটি পাসে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বাইডেন বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অশুভ উদ্দেশ্য পরিহার করে আমাদের উভয় পক্ষের উচিত বিলটি পাসে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, মেঘে মেঘে বেলা অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। তাই আর কালক্ষেপণ না করে হাউস স্পিকার মাইক জনসনের উচিত ফ্লোরে বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরু করা। বাইডেন বলেন, হাউসের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান বিলটি সমর্থন করেন। তবে আমেরিকার স্বার্থ বিসর্জনকারী এবং নিছক ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দানকারী কেউ এর বিরোধিতা করতে পারেন। তাই দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব বাইপার্টিশন বর্ডার সিকিউরিটি বিল পাসে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া ও একত্রে কাজ করা।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, জনসন ও রিপাবলিকানদেরও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। বাইডেন বলেন, মনে রাখা উচিত, আমরা ডেমোক্র্যাট পার্টি কিংবা রিপাবলিকান পার্টির জন্য কাজ করি না; আমরা কাজ করি আমেরিকার জনগণের জন্য। আমরা ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান নই, আমরা আমেরিকান। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বর্ডার প্যাট্রোল এজেন্টদের কর্মতৎপরতার প্রশংসা করেন।
প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার ডেপুটি কমিশনার পিটার ফ্লোরস সীমান্তে নার্কোটিকস ও আগ্নেয়াস্ত্র জব্দের ক্ষেত্রে এজেন্সির কর্মকাণ্ডের রূপরেখা তুলে ধরেন এবং এজেন্সির জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আর ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের (ইউএসসিআইএস) ডেপুটি ডিরেক্টর জেনিফার হিগিনস এবং অ্যাসাইলাম কর্মকর্তা ক্যাটিসা জ্যাকসনও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। অ্যাসাইলাম কর্মকর্তা জ্যাকসনের বক্তব্যের পটভূমিতে বাইডেন বলেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সমর্থিত বাইপার্টিশন লেজিসলেশনের জন্য আমরা শয়তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেও প্রস্তুত। অবশ্য বাইডেন ক্যাম্পেইন অভিযোগ করেছে, সিনেট রিপাবলিকানদের বাইপার্টিশন বর্ডার সিকিউরিটি বিল সমর্থন না করতে বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিক ফায়দা লোটার খেলায় মেতে উঠেছেন।
বর্তমান আমেরিকা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের অভয়ারণ্যÑডোনাল্ড ট্রাম্প : টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ডে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমিগ্রেশন আইনকানুনের যুগোপযোগী সংস্কার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তীব্র নিন্দা করেন। ট্রাম্প বলেন, বাইডেনের বিগত তিন বছরের কার্যকালে সীমান্ত অরক্ষিত এবং উন্মুক্ত থাকায় আমেরিকা বর্তমানে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, সীমান্ত এলাকা এবং গোটা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে এবং সর্বত্র নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ট্রাম্পের নাম ধরে শোরচিৎকারকারী মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থানকারী লোকজন প্রসঙ্গে ট্রাম্প টেক্সাস গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট কিছুসংখ্যক বর্ডার কর্মকর্তাকে বলেন, মূলত তারা আমাকে ভালোবাসেন। আর ট্রাম্পের জনৈক মুখপাত্র বলেন, বাইডেনের উন্মুক্ত সীমান্তের অপরাধ স্থানগুলো ট্রাম্প সশরীরে পরিদর্শন করেছেন এবং দপ্তরে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আমেরিকার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সহসাই সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
আইডাহো ককাস : ২০২৩ সালের অধিবেশনে আইডাহোর স্টেট আইনসভার সদস্যরা প্রাইমারি নির্বাচন বাতিল করেছিলেন। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাক্তন বিধানটি পুনর্বহাল না হওয়ায় ২ মার্চ শনিবার রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনের জন্য আইডাহোতে রিপাবলিকান প্রাইমারির পরিবর্তে স্টেটের রিপাবলিকান স্টেট সেন্ট্রাল কমিটি ভোটের মাধ্যমে তাদের ৩২ জন ডেলিগেট নির্বাচিত করেছে। শনিবারের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৩২টি ডেলিগেট এবং ৮৫ শতাংশ বা ৩৩ হাজার ৬০৩ ভোট পেয়েছেন। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হ্যালি শূন্য ডেলিগেট এবং ১৩ শতাংশ বা ৫ হাজার ২২১ ভোট পেয়েছেন।
নতুন সিনেট রিপাবলিকান নেতা জন থুন : সিনেট রিপাবলিকান নেতা মিটচ ম্যাককনেল দুই সপ্তাহ আগে পদত্যাগ করেছেন। ম্যাককনেলের শূন্য আসন অলঙ্কৃত করতে যাচ্ছেন নভেম্বরে পদত্যাগকারী সিনেটর জন থুন। নবনির্বাচিত সিনেট রিপাবলিকান নেতা থুন প্রসঙ্গে সাউথ ডাকোটার রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস বলেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার এবং নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা রয়েছে নতুন নেতা থুনের। এবিসি নিউজ দিস উইক কো-অ্যাঙ্কর জোনাথন কার্লকে রাউন্ডস বলেন, জন থুন যুগোপযোগী কর্মদক্ষ নেতা এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী। আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে নিজের ওপর দায়িত্ব অভাবনীয় পারঙ্গমতার সঙ্গে নির্বাহের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তার রয়েছে। মিটচের মতো তিনিও সিনেটে গৌরবোজ্জ্বল অবদান রাখবেন এবং দেশ ও জাতির সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।
ইমিগ্রেশন-বিষয়ক জরিপ ফলাফল : গ্যালপআপ পরিচালিত এক জনজরিপে গত বছরের আগস্টে সামগ্রিকভাবে ৯ শতাংশ আমেরিকান এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২০ শতাংশ আমেরিকান ইমিগ্রেশনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। পক্ষান্তরে ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত গ্যালআপের নতুন জরিপে ২৮ শতাংশ আমেরিকান অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ইমিগ্রেশনকে জাতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জানুয়ারিতে ৩৭ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ শতাংশ রিপাবলিকান ইমিগ্রেশনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে জানুয়ারিতে ৯ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ১০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ইমিগ্রেশন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর ইন্ডিপেন্ডেন্টদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১৬ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারিতে ২২ শতাংশ ইমিগ্রেশনকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত কুইনিপিয়াকের অপর এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, ১৭ শতাংশ রেজিস্টার্ড ভোটার ইমিগ্রেশনকে, ২০ শতাংশ অর্থনীতিকে এবং ২১ শতাংশ গণতন্ত্র সংরক্ষণকে জাতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে শনাক্ত করেছেন এবং আশু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ রেজিস্টার্ড রিপাবলিক, ৪ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ১৬ শতাংশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভোটার ইমিগ্রেশনকে মূল সমস্যা হিসেবে এর আশু সমাধান প্রত্যাশা করেছেন। এবিসি নিউজ/ইপসসের সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বাইডেন প্রশাসনের ইমিগ্রেশন পরিচালনা ব্যবস্থার পক্ষে ২০২১ সালের জুনে অনুমোদনের হার ছিল ৬৩ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি অনুমোদনের হার দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশ। আর গ্যালআপের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদন অনুসারে, ২৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান বাইডেনের ইমিগ্রেশন-ব্যবস্থাকে অনুমোদন এবং ৬৭ শতাংশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। অথচ গত বছরের আগস্টে একই সংস্থার জরিপে অনুমোদনের হার ৩১ শতাংশ এবং প্রত্যাখ্যানের হার ৬৬ শতাংশ ছিল।