মোহাম্মদ জাকির হোসেন খসরু রোজা রেখে গিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইল করতে। ৫ এপ্রিল ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়াই ছিল তার শেষ বের হয়ে যাওয়া। আর ঘরে ফিরতে পারেননি। ট্যাক্স প্রিপারের অফিসের নিচ থেকে সরাসরি পাঠানো হয় হাসপাতালে। সেখানেই পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এক দুর্বৃত্ত তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
শেরপুর জেলা সমিতির সভাপতি মুহ. আনোয়ার হোসেন জানান, জ্যামাইকা এলাকায় দুর্বৃত্তের ধাক্কায় মাথা ফেটে যাওয়া মোহাম্মদ জাকির হোসেন খসরু (৭৬) মারা গেছেন। গত ৫ এপ্রিল তিনি দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন এবং ১০ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি কুইন্সের জ্যামাইকা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, গত ৫ এপ্রিল শুক্রবার জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউ ১৬৭ স্ট্রিটে খসরুর সিপিএ মাহমুদুল হাসানের অফিসে ট্যাক্স ফাইল করার জন্য যান। তিনি ওই অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করেন। এ সময় সেখানে আরেকটি পার্কিংয়ের জায়গায় আরেকজন লোক গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই গাড়ি পার্কিংটি ছিল তার সিপিএর। এ কারণে তিনি ওই লোককে গাড়ি পার্ক করতে নিষেধ করেন। গাড়ি পার্কিং নিয়ে বাগ্্বিতণ্ডায় ওই কৃষ্ণাঙ্গ তাকে বুকের মধ্যে ঘুষি মারেন। এতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এতে খসরুর মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এ সময়ে সিপিএ মাহমুদুল হাসানও নিচে নেমে আসেন। তিনি পুলিশের কাছে ৯১১-এ কল করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুরুতর অবস্থায় তাকে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করে। অচেতন অবস্থা থেকে আর জ্ঞান ফেরেনি তার। গত ১০ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
জাকির হোসেন খসরুর জন্মস্থান ময়মনসিংহে। তার বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার। তার বাবার পোস্টিং ছিল জামালপুর জেলায়। সেখানেই থাকতেন খসরু। তার বাবা জামালপুর জেলা সদরের পোস্ট অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রয়াত মোহাম্মদ হুসেন। খসরুর স্ত্রী শামিমা আকতার শিউলির জন্মস্থান শেরপুরে। তিনি শেরপুর জেলা সমিতির সাবেক উপদেষ্টা।
এদিকে এ ঘটনায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে দুর্বৃত্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাবেন তিনি।
মুহ. আনোয়ার হোসেন জানান, ১২ এপ্রিল শুক্রবার বাদ মাগরিব জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে খসরুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শেরপুর জেলা সমিতির নিজস্ব কবরস্থান নিউজার্সির মালবরোর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মুহ. আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ৪৪ বছর আগে খসরু যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি এ দেশে আসার পর প্রায় ৩০ বছর ধরে জ্যামাইকাতে আছেন। তিনি ও তার স্ত্রী- এই দুজনের সংসার। তাদের কোনো সন্তান নেই। খসরু অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। রোজাও রাখতেন। ঘটনার দিনও তিনি রোজা ছিলেন। ঘটনার পর তার স্ত্রীকে ফোন করে জানানো হয়। খবর পেয়ে তার স্ত্রী ছুটে আসেন। তিনি বলেন, পরিবারের উদ্যোগেই দাফন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা তাদের সহায়তা করেছি। শেরপুর সমিতির পক্ষ থেকে আমরা কবরের ব্যবস্থা করেছি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। তারা সেখানকার ভিডিও ফুটেজ থেকে একজনকে শনাক্ত করেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তিনি বলেন, কমিউনিটির সবার কাছে আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে আমরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।