রাজনীতিতে খুন নতুন কথা নয়। মানবজন্মের শুরু থেকেই এই খুনের ইতিহাস। মানুষের মানুষ খুন। আজকের সম্পাদকীয়তে খুনের প্রসঙ্গে উঠল বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। কোনো মানুষের এমপি হিসেবে অবশ্য এটাই নতুন খুন নয়। এর আগেও অনেক রাজনীতিকের হত্যাকাণ্ড হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ আরও দুই ছেলে এবং দুই পুত্রবধূ সবাই সেই ১৫ আগস্টের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মোট ১৯ জন সদস্য সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে মানুষের হাতে মানুষ খুন শুরু হয় মানুষের সমাজ শুরুর আদি থেকেই। প্রথম পুরুষ হজরত আদম (আ.) এবং প্রথম নারী হাওয়ার (আ.) সময় থেকেই। হাবিল-কাবিল তাদের দুই সন্তান একে অপরের হাতে নিহত হন সমাজ সভ্যতা শুরুর আগে থেকেই। নবীদের সময়েও যেমন অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নবীরা ছাড়াও অনেক সাহাবি, অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস মেলে। এরপর রাজা-বাদশাহ, প্রধানমন্ত্রী, নিম্ন সারির মন্ত্রী-এমপিরা অস্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ক্ষমতার লোভ-লালসায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতায়, পারিবারিক কলহে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বহু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো তার ধারাবাহিকতা চলমান রয়েছে। প্রতিদিন হত্যাকাণ্ডের বহু ঘটনা ঘটেছে, যা হয়তো এক দেশের ঘটনা আরেক দেশ জানতে পারে না। এমনকি এক দেশে যে ঘটনা তোলপাড় তুলছে, সেই ঘটনা আরেক অঞ্চলের মানুষ জানতে পারে না।
আমরা মানুষের হাতে মানুষ খুন হওয়ার ঘটনা জানতে পারি আমাদের জানামতে লিখিত ইতিহাস শুরু হওয়ার আগে থেকে। বর্তমান সভ্যতায় মানুষের উপনীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব ইতিহাসেই পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন চরিত্রের খুন। সর্বশেষ আনোয়ারুল আজিম আনারÑযার হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তদন্তে এ পর্যন্ত জেনেছি, গত ১২ মে আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন এবং বহরামপুরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে ‘দরকার আছে’ বলে কোথাও চলে যান, যার ঠিকানা কারও জানা নেই বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়। আর তৃতীয় ব্যক্তি গোপাল বিশ্বাসের আনোয়ারুল আজিমের হত্যাকাণ্ডে কোনো হাত আছে কি না জানা নেই। জনাব আনার গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে এটুকু জানিয়ে যান, তিনি হয় ১২ মেতেই ফিরে আসবেন, নতুবা অবশ্যই পরের দিন আসবেন। কিন্তু ফিরে আসা দূরে থাক, তার আসার কোনো খবরও নেই। আনার এমপি যে কলকাতায় খুন হয়েছেন, সেটা বলা যায় এ কারণে যে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের সেফটিক ট্যাংক থেকে তার মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার হওয়ায়। সুতরাং এ থেকে এ কথা বলাই যায়, তার মৃত্যু নিশ্চিতভাবেই হয়েছে। জনাব আনারের হত্যাকাণ্ড রহস্যে ঘেরা। এখন জরুরি বিষয় হচ্ছে, কারা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। এ রকম মৃত্যু বন্ধ হবে কবে? আনারের হত্যার পেছনে কারা প্রকৃত দায়ী।
 
                           
                           
                            
                       
    
 
 


                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
