Thikana News
২৩ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

দানবীয় আচরণের কার্যকারণ

দানবীয় আচরণের কার্যকারণ
ব্যক্তি বা বস্তুর অভ্যন্তরীণ ও বস্তুগত গুণাগুন নির্বিশেষে চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে তার বাহ্যিক আচরণ ও গুণগতমানের পরিবর্তন/পরিবর্ধন হয়ে থাকে। এক খন্ড লোহা সাধারণভাবে জড় পদার্থ হিসেবে গণ্য কিন্তু লোহাখন্ডকে যদি ঢাল হিসেবে তৈরি করা হয়, তার ব্যবহারিক চরিত্র হবে এক রকম, পক্ষান্তরে বেয়নেট বা বুলেট হিসেবে তৈরি করা হলে তার চরিত্র হবে ভিন্ন রকমের। অথচ লৌহ খন্ড জড় পদার্থ ভিন্ন কিছু নয় এবং তার বৈশিষ্টগত পরিবর্তনের জন্য তার নিজের করণীয় কিছু নেই। অথচ বহিরাগত হস্তক্ষেপের ফলে তার বৈশিষ্টগত পরিবর্তনের কারণে এক সময় নিরাপত্তা প্রদানকারী ও পরক্ষণে নিরাপত্তা বিঘ্নকারী মারণাস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত। তবে যারা ব্যবহার করে, তাদের নিরাপত্তা প্রদানকারীও বটে। বিষয়টি নির্ভর করে চারিত্রিক বৈশিষ্টের প্রয়োগের উপর। এক্ষেত্রে লৌহখন্ডের নিজস্ব কোন ইচ্ছা বা এখতিয়ার নেই। যে বা যাদের হাতে লৌহখন্ডের বৈশিষ্ট প্রদানের দায়িত্ব, তাদের ইচ্ছা এখতিয়ার ও তাদের প্রতি লৌহ দ্বারা নির্মাণের নির্দেশনা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই কোন কিছুর ভালো বা মন্দ হবার পেছনে চারিত্রিক বৈশিষ্ট পরিবর্তকারী চালকের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শিশু জন্মের সময় তার ডিএনএ কি বহন করেÑ তা অজ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও তাকে নিস্পাপ ও নিষ্কলুষ বিবেচনা করা হয়। যদিও ডিএনএ’র প্রভাবে পরবর্তীতে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট কি হবেÑ এ সম্বন্ধে কারোরই আগাম ধারণা করার কোন সুযোগ নেই। শৈশব থেকে ক্রমবর্ধমান পর্যায়ে উন্নীত হবার সাথে সাথে তার শিক্ষা, সাহচার্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তার চরিত্র গঠন নির্ভরশীল। আবার মাঝ পথে হঠাৎ কোন বিশেষ প্রভাবের কারণে চরিত্রের পরিবর্তন হতে পারে। তবে প্রাপ্ত বয়সে ভালো-মন্দ বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও লোভ-হিংসা-পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বহু বিষয় চরিত্রের ওপর প্রভাব বিস্তারের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্টের আমূল পরিবর্তন হতে পারে। ইতিহাসে যার ভুরি ভুরি প্রমাণ বিদ্যমান। বাস্তব জীবনে ভালো-মন্দ উভয় পথ অবলম্বনের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রেক্ষাপট ধর্মীয় ও আইনগত অনুশাসন ভালো কাজের জন্য প্রশংসা ও পুরস্কার এবং মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ও শাস্তি প্রদান- এসব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান ও তার প্রয়োগ মানুষকে লোভ, হিংসা ও অন্যান্য খারাপ চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে অন্যায় পথ অবলম্বন থেকে বিরত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নিঃসন্দেহে।
অপর পক্ষে ব্যক্তির ক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত আস্থা এবং ক্ষমতার কারণে আইনের উর্দ্ধে অবস্থান করার মত ধারণা পোষণ ও বাস্তবে তা ঘটার কারণে ব্যক্তি নিজের অবস্থান ধরা ছোঁয়ার বাইরে জেনে অপরাধে লিপ্ত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যার বাস্তব চিত্র বিদ্যমান। এক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি বিশ্বাস ও ভয়তো কাজ করেই না, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থাও তাদের কাছে নস্যি।
শক্তি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন চিরাচরিত নিয়ম, তবে আদর্শহীন দুষ্ট লোকের ক্ষমতা প্রদর্শন এর বিপরীত কারণেও হতে পারে। শক্তি প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়মতান্ত্রিক ও অনিয়মতান্ত্রিকÑ এ দু’ধরনের। আইনানুগ শক্তিপ্রয়োগ বৈধ এবং সবার কাছে প্রশংসিত। পক্ষান্তরে বেআইনী শক্তি প্রয়োগ অবৈধ, যা জুলুমের পর্যায়ভূক্ত এবং নিন্দনীয়। যখন কোন বৈধ কর্তৃপক্ষ অনিয়ম রোধকল্পে বৈধভাবে শক্তি প্রয়োগে বাধ্য হয়, তখন তা জনমনে প্রশংসিত হয় এবং তার মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা ও জনতুষ্টি নিশ্চিত হয়। পক্ষান্তরে শক্তির অবৈধ প্রয়োগে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত ও সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। হীন স্বার্থে ক্ষমতা ব্যবহার করে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যের স্বার্থহানী করা যে কোন মানদন্ডে অন্যায় এবং নিন্দনীয়। এমন নিন্দনীয় কাজ না করার মানসিকতা অর্জনের জন্য আদর্শবাদী হওয়ার বিকল্প নেই। 
ন্যায়পরায়ণতা এমন একটি গুণ, যা অর্জনের জন্য অনেক বেশি শিক্ষিত, বিত্তশালী বা ক্ষমতাধর হবার প্রয়োজন নেই। সমাজে বহু সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায়বোধের জন্য খুবই প্রশংসিত। পক্ষান্তরে একই সমাজভূক্ত বহু উচ্চশিক্ষিত, ধনবান ও ক্ষমতাবান লোক তাদের সমমর্যাদার হয় না। আবার এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। সুতরাং ভালো বা মন্দ চরিত্রের অধিকারী হওয়া অনেকটা ব্যক্তির নিজস্ব অনুভূতি নির্ভর। ধারণ ব্যতীত ধর্ম ব্যক্তি জীবনে কার্যকর নয়। শুধুমাত্র ঐশীবাণী ব্যতীত পৃথিবীতে সব কথারই যুক্তি পাল্টা যুক্তির অবকাশ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ ভুল বক্তব্যকে সঠিক প্রমাণের জন্য পুনরায় উত্থাপিত যুক্তিও অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য না হয়ে বরং ভুলের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে নিজেদের যারা অতি বেশি জ্ঞানী ও চতুর মনে করেন, তারা এই যুক্তি উপস্থাপন করেন যে ‘মিথ্যা বারবার সত্য বলে প্রচার পেলে এক সময় মানুষ তা সত্য বলেই ধরে নেয়’ এক্ষেত্রে তারা হিটলারের প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রধান জোসেফ গোয়েবলসের কথা বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য বিবেচনা করলেও ইতিহাসে তা বরং ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত না হয়ে সমালোচিতই হয়েছে। তা সত্ত্বেও তার অনুসারী কিছু ব্যক্তি যুগে যুগে সেই অপচেষ্টা চালিয়ে যান, যদিও তা খুব বেশি সময় ধোপে টেকে না। তাদের এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস তাদের সহজ-সরল পথ থেকে বিপথে পরিচালিত করে এবং স্বভাবে দানবীয় অনুসঙ্গ যুক্ত করেÑ যা সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্র সংকুচিত করে। ফলে এর দ্বারা তারা নিজেদের যুক্তি দর্শন ও দূর্বল চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটান। যদিও নিজেদের তারা খুব উচ্চমার্গীয় বুদ্ধিজীবী ও কৌশলবিদ হিসেবে মনে করে থাকেন। নিজের প্রচার নিজে যতই করুক না কেন, দর্শক-শ্রোতার কাছে তা কতটা গ্রহণযোগ্য ও শ্রুতিমধুর, সে বিবেচনা না থাকলে দর্শক শ্রোতাদেও কাছে তা গ্রহণযোগ্য না হয়ে বরং শোরোগোল বা অতিকথন হিসেবে বিরক্তিকর বিবেচিত হয়। যার ফলে এহেন কার্যকলাপ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি না করে বরং মর্যাদাহানীকর হিসেবে বিবেচিত হয়। এবং বারংবার এভাবে হতে থাকলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অকল্পনীয়ভাবে হ্রাস পায়, যা তাদের এবং তাদের প্রতি আস্থাশীলদের জন্য মোটেই পরিতৃপ্তির নয়। তাই কথা, কাজ ও চলাফেরায় সবারই হওয়া উচিৎ সমাজে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। সেন্ট এলবান্স, নিউইয়র্ক।

কমেন্ট বক্স