আমাদের গ্রামের বাড়িতে একজন লোক দেখতে পেতাম। সহজ-সরল এবং বোকা। প্রতিবন্ধী বলা যায় না। আবার মানসিক ভারসাম্যহীন বলা যাবে না। হিসাব জানতো না। রক্তের কেউ না। আমাদের পরিবারের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। নাম ছিল টেনু। আমরা টেনু চাচা বলেই ডাকতাম। টেনু চাচা একটু অস্বাভাবিক একজন।
কালবৈশাখির সময়। আমরা আম কুড়াতাম। টেনু চাচাও আমাদের সঙ্গে আম কুড়াতো। টেনু চাচার জ্বর, গ্রামের বাড়ির অন্য সবাই খোঁজ নিত। বাড়ির গৃহকর্মীরা পরিচর্যা করত। বাড়ির অন্য সবার মতো একজন সদস্য এমনি ধারণা হতো।
আসলে টেনু চাচা কে? কবে আসল? কিভাবেই বা আমাদের বাড়িতে আগমন। আমি আজও জানি না। অনেক আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু আমরা এখনও তাকে মনে করি। আমাদের সবার টেনু চাচার জন্য এখনও মায়া হয়। (ঢা.বি) বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন মাস্টার্স করছি। একটি লোক প্রায়-ই পাঁচ টাকা। দশ টাকার জন্য বায়না ধরত। নিরাশ করতেন না। ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের আশপাশেও ঘুর ঘুর করত। এ রকম অনেক টোকাই আছে। যারা বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পদচারণা। সাহায্য চাইতে আসে। আমরা কার্পণ্য করতাম না। অনেকের মাঝেই আমি এমন ধারণা দেখতাম। বলো কি এমন ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে দিয়ে
দুর্বল মানুষ যদি।
মেয়েটির মন খারাপ। মায়ের কাছে জানতে চায়-
একটি মোবাইলের দাম কত?
এটা উত্তর দেন- বিভিন্ন রকম।
মায়ের কাছে অনুরোধ রাখেন
বাস্তব এত কঠিন সে অনুরোধ রাখা গেল না। মেয়েটির মন খারাপ হয়ে পড়ল। মোবাইলের দামটি পাঠানো গেল না। ততক্ষণে তোফাজ্জল গেছে অনেক দূরে। অনেক বছর পর।
আমাদের সেই টেনু চাচার সঙ্গে তোফাজ্জলের মিল খুঁজে পেলাম। টেনু চাচাকে দেখার অনেকেই ছিল। তোফাজ্জলের আশপাশে কেউ ছিল না।
এহান সৃষ্টিকর্তা জীবন দান করেছেন। তার ইচ্ছে হলেই আবার নিয়ে যাবেন- এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
জীবন মূল্যবান। সবার কাছেই সবার জীবন প্রিয়। এ জীবন কেড়ে নেয়ার অধিকার কেউ রাখে না।
তোফাজ্জল চলে গেছে না ফেরার দেশে। যেখানে নিরীহ বেচারা সবই চেনা এই গান। অনেক কেঁদেছিÑ কাঁদিতে পারি না- বুক ফেটে ভেঙে যায় মা। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাতের ছায়ায় রাখুন।
ভোটবেলা- একটি বাংলা ছবি দেখেছিলাম। ছবির গানের একটি লাইন-
‘ভালোবাসার মূল্য কত সেতো আমি জানি না, আমি বলতে চাই- জীবনের মূল্য কত সেতো আমি জানি না। আমি কেন কেউ জানে না-
জীবন প্রাইস লেস
শামীম আরা ডোরা, ফরমার অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদশ।
(ঢা.বি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।



শামীম আরা ডোরা


