জানা গেছে, সুপার হোস্টেলের ওয়াশরুমের দরজা খুলে মৃত অবস্থায় তাকে দেখতে পাওয়া গেছে। শুক্রবার সোয়া ২টার দিকে ওয়াশরুমের দরজা খোলা হয়। তিনি ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন।
ওই হোস্টেলের আবাসিক বর্ডার শিক্ষার্থী কনক সরকার বলেন, তিনি হেলাল হাফিজের পাশের রুমেই থাকেন। আমরা ৩০ মিনিট ধরে চেষ্টার পর দরজা ভেঙে দেখি উনি পড়ে আছেন। ওনার মাথায় আঘাত লেগেছিল, রক্ত বেরিয়েছিল।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় হেলাল হাফিজের জন্ম হয়। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
১৯৬৫ সালে হেলাল হাফিজ নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতায় যোগদান করেন।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।
কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।
কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুন কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যে জলে আগুন জ্বলে' লেখার ঠিক ২৬ বছর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ লিখেন। বহুল প্রতীক্ষিত সেই 'কবিতা একাত্তর'ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের পরই হেলাল হাফিজের নাম ছড়িয়ে পড়ে সাহিত্যজগতে। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—এই এক লাইনই তাকে নিয়ে গেছে কালজয়ী কবিদের সারিতে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি শুধু কবি নন, এক অনুপ্রেরণা। বাংলা সাহিত্যের এই কিংবদন্তি তার লেখনীতে যে প্রভাব সৃষ্টি করেছেন, তা চিরকাল বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমলিন থাকবে।
ঠিকানা/এনআই



ঠিকানা অনলাইন


