Thikana News
০২ নভেম্বর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫





 

ট্রাম্পের সেকেন্ড টার্ম

একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা চালু রাখা ও মামলায় তাকে সাজা প্রদান করা যায় কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় এ ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। একই কারণে তার বিরুদ্ধে আনীত অন্য একাধিক মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার বা তুলে নেওয়া হয়েছে
ট্রাম্পের সেকেন্ড টার্ম





 
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক হবে। এই অনুষ্ঠানকে দর্শক উপস্থিতি ও নানা দিক থেকে অনন্য করে রাখার জন্য অভিষেক কমিটি ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করার জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হবে, যার জোগান দিতে এরই মধ্যে কমপক্ষে ১১টি বৃহৎ কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে আমাজন, গোল্ডম্যান শ্যাকস, জেনারেল মোটরস, ফোর্ড, টয়োটা, ব্যাংক অব আমেরিকা, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফাইজার ইলাই (EIi), লিলি (Lily) ইত্যাদি। ফোর্ড ১০০টি যানবাহন দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে (ক্যাপিটল ভবনের পশ্চিম দিকের লন ও ন্যাশনাল মল এলাকা) জনসমাগমে সহায়তা করবে। অন্য কোম্পানিগুলোর বেশ কয়েকটি এক মিলিয়ন ডলার করে চাঁদা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
বলা নিষ্প্রয়োজন, ট্রাম্পের সঙ্গে এসব কোম্পানির সখ্য সৃষ্টির চেষ্টা বিনা স্বার্থে হচ্ছে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। ট্রাম্প করপোরেট ট্যাক্স হ্রাস ও ব্যবসার নিয়ম-নীতি (Deregulation) শিথিল করবেন বলে তারা আশা করছে, যা তাদের ব্যবসার আয়-উন্নতিতে বিশেষ সহায়ক হবে। তা ছাড়া ট্রাম্প কর্তৃক বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে ট্যারিফ আরোপের ফলে দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পের প্রটেকশনের বিষয়টিও তাদের মাথায় রয়েছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ ভাগ ও চীনা পণ্যের ওপর ১০ ভাগ ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে বড় বড় কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও বিদেশি সাশ্রয়ী (Affordable) পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একধরনের বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা হতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না বলে কেউ কেউ মনে করেন।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে দুবার অভিসংশিত হন, যদিও সিনেটে সেই প্রস্তাব পাস না হওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হওয়া থেকে তিনি বেঁচে যান। তা ছাড়া ফৌজদারিসহ (Criminal) বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। দুটি যৌনতার (পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও লেখক ই. জিন ক্যারল) মামলায় আদালত তাকে বিপুল অঙ্কের অর্থদণ্ড দেন। জালিয়াতির মাধ্যমে বিজনেস রেকর্ড পরিবর্তনের গুরুতর অপরাধের (Felony) মামলায় তিনি ৩৪টি অভিযোগে জুরি কর্তৃক অভিযুক্ত হন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় রায় দানের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা চালু রাখা ও মামলায় তাকে সাজা প্রদান করা যায় কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় এ ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। একই কারণে তার বিরুদ্ধে আনীত অন্য একাধিক মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার বা তুলে নেওয়া হয়েছে। বিজনেস রেকর্ড জালিয়াতির মামলাটির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত বলে প্রতীয়মান হয়। ট্রাম্প জায়গা। এটি তাঁর বহুধা বিস্তৃত আন্দোলন ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। মার্কিন সাগরের ৬২৫ মিলিয়ন একরের বিস্তীর্ণ স্থানে আমেরিকার উপকূলীয় তেল খনন করার ব্লকের জন্য বাইডেনের সর্বশেষ ঘণ্টায় ১১তম পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান আমেরিকাকে গ্রহের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিণত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একই সময়ে বৃহত্তর আমেরিকা প্রকল্প হলো, একুশ শতকের মুনরো মতবাদ, যা চীন ও রাশিয়ার নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্পষ্ট প্রভাব ফেলবে। যদিও তারা এটিকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কঠোর চাপে থাকবে। ট্রাম্প ‘নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা’র কবর দিয়েছেন। তিনি সফল হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিছক জনসংখ্যা এবং ভূখণ্ডের দিক থেকে রাশিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে এবং সম্পদের হিসাবে দেশটির সমান হবে কিংবা এমনকি ছাড়িয়ে যাবে। স্পষ্টত ট্রাম্পের একাধিক পরাশক্তি কিংবা বহু বিদেশি শক্তির প্রতি আগ্রহ নেই- এমন ধারণা বৈদেশিক নীতিতে বিভ্রান্তিকর একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য বানানো আলোচনা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই পুরো আঞ্চলিক সংযোজনের পরিকল্পনাকে ‘একটি নতুন সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা’ বলে অভিহিত করেছে। সিএনএন এ উদ্যোগকে ‘আমেরিকান সম্প্রসারণবাদের জন্য ধাক্কা’ এবং ‘সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখল’ বলে চিহ্নিত করেছে।  মস্কো ও বেইজিং মূলধারার আমেরিকান মিডিয়ার সেই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবে না। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন, ট্রাম্পের এজেন্ডা সম্ভবত দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। দিন শেষে হংসের জন্য যা ভালো, তা হংসীর জন্যও ভালো। 
(ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর) 
লেখক : ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


 

কমেন্ট বক্স