পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, ইবলিসের (শয়তানের) ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে রুষ্ট হয়েই পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন এবং বেহেশত থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। অন্যদিকে আদি পিতা আদম (আ.) এবং বিবি হাওয়া (আ.) দম্পতিকে বেহেশতে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন। আদম দম্পতিকে মহান আল্লাহ কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছিলেন নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকটবর্তী না হতে এবং আরও জানিয়ে দিয়েছিলেন, শয়তান তাদের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তানের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ না হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবে আদম দম্পতি নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল আস্বাদন করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করলেন এবং আল্লাহর আদেশ অমান্যকারীর তালিকাভুক্ত হলেন। অবশেষে অনুশোচনাগ্রস্ত চিত্তে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার পর আদম দম্পতি গোনাহ মাফ পেলেও বেহেশতে বসবাসের যোগ্যতা হারালেন এবং ভূপৃষ্ঠের মাশরেক ও মাগরেবে নিক্ষিপ্ত হলেন। ভূপৃষ্ঠে কয়েক শ বছর অবিরত কান্নাকাটি ও আল্লাহর কৃপাভিক্ষার পর পরিশেষে আদম দম্পতি আরাফাত ময়দানে পুনর্মিলিত হলেন। তারপর ঊষর ধরাপৃষ্ঠে বংশবিস্তার শুরু করলেন। গোড়ার দিকে বিবি হাওয়া (আ.) বিপরীত লিঙ্গধারী যমজ সন্তান প্রসব করতে থাকেন এবং এক বছরের পুত্রসন্তানের সঙ্গে পরের বছরের মেয়ের এবং আগের বছরের মেয়ের সঙ্গে পরের বছরের ছেলের বিয়ে-শাদির আয়োজন করতেন। আদম (আ.) এর পুত্র কাবিল নিজের বোন আকলিমাকে বিয়ে করার হীন লক্ষ্য চরিতার্থতার খাতিরে নিজ ভ্রাতা হাবিলকে খুন করে এ প্রথার ব্যত্যয় ঘটাতে চাইল এবং সৃষ্টিজগতে সর্বপ্রথম খুনের সূত্রপাত করল।
সংগত কারণেই উল্লেখ করতে হয়, মূলত প্রেম-ভালোবাসা, বাৎসল্য-মমত্ববোধ-পরোপকারিতা, সহমর্মিতা-সদ্বিবেচনা শক্তি, মনুষ্যত্ববোধ, সুকুমার বৃত্তিরাজি ইত্যাদি বিশ্ববিধাতা-প্রদত্ত। সৃষ্ট জীবের প্রতি স্রষ্টার অপরিমেয় রহমত বা মমত্ববোধের বিন্দুতুল্য নিদর্শন হিসেবেই মহান স্রষ্টা এই মহৎ গুণাবলি সৃষ্ট জীবের অন্তরে সঞ্চারিত করে থাকেন। আর সিন্ধুর মাঝে বিন্দুতুল্য অতুলনীয় রহমতের জ্বাজল্যমান নিদর্শনস্বরূপ বিশ্ববিধাতা-প্রদত্ত স্নেহ-ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত হয়ে মানুষ প্রিয়জনদের খাতিরে হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। সেই মানদণ্ডে সৃষ্ট জীবের প্রতি বিশ্বস্রষ্টার রহমত-ভালোবাসা, দয়াদাক্ষিণ্য, অনুকম্পা সাধারণ মানুষের চিন্তা ও বোধশক্তির অতীত ও অকল্পনীয়। মনস্তত্ত্ববিদদের ভাষায়, প্রতিটি মানবশিশু প্রকৃতি-প্রদত্ত র্যাশন্যালিটি বা সুকুমারবৃত্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। পক্ষান্তরে দুর্বৃত্তপনা, হিংসুটে মনোবৃত্তি, পরশ্রীকাতরতা, কলহপ্রিয়তা, আত্মকেন্দ্রিকতা ইত্যাদিও মনোবিজ্ঞানের ভাষায় সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে স্বীকৃত। মনোবিজ্ঞানীদের বর্ণনা অনুসারে, সৌহার্দ্য, পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ, শিক্ষিত ও ধর্মপ্রাণ পিতা-মাতা-অভিভাবকত্ব, স্নেহসান্নিধ্য ও আদর-আতিথ্যে শিশুর সহজাত সুকুমারবৃত্তির সুষম ও সামগ্রিক বিকাশ এবং কুপ্রবৃত্তির সমূল উৎপাদন ঘটে। বিপরীতক্রমে কলহপূর্ণ পরিবেশ-সমাজ, পিতা-মাতার দ্বন্দ্ব, শৈশব-কৈশোরে প্রয়োজনীয় সেবাযত্ন ও স্নেহ-মমতার অভাবে শিশুর সুকুমারবৃত্তির অকালমৃত্যু এবং কুপ্রবৃত্তি বা অ্যানিমেলিটির বিকাশ ঘটে, যা সময়ের অগ্রযাত্রায় ডালপালা মেলে কালের বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়। মূলত অনাদর-অবহেলাপুষ্ট শিশুরাই কৈশোর ও যৌবনে চিহ্নিত ও ঘৃণিত অপরাধীতে পরিণত হয়। যাহোক, ধান ভানতে মহীপালের গীত না গেয়ে মুখ্য আলোচনায় আসা যাক।
ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে অর্থ লোটার মহোৎসব : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কার এবং বাণিজ্যের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার সনাতনী স্বর্গীয় ভালোবাসাকে বাণিজ্যিক পণ্যে রূপ দিয়ে অর্থ লোটার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপন এবং আবেদনধর্মী প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী মহল সুকৌশলে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী থেকে সত্তরোর্ধ্ব যুগলদের মস্তিষ্ক ধোলাই করে রাশি রাশি অর্থ পকেটজাত করেছে। অর্থগৃধ্নু বণিকগোষ্ঠী কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থব্যয়ে স্বর্গীয় ও নিখুঁত প্রেম-ভালোবাসা প্রকাশের অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। বস্তুত, বিশ্ব বণিক সম্প্রদায়ই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষিত যুগলদের অন্তরে এই ধারণার বীজ বপনে সক্ষম হয়েছেন যে মূল্যবান উপহারসামগ্রীর লেনদেন ছাড়া নিখুঁত ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় না। এভাবেই ভ্যালেন্টাইন দিবসের উদ্ভাবন এবং দিবসটি উপলক্ষে মূল্যবান উপহারসামগ্রীর বিশ্বজোড়া বাজার সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকের সুচিন্তিত অভিমত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার নামে সর্ববয়সী যুগলদের চোখ-ঝলসানো অনুষ্ঠান, রং-বেরঙের ফুল ও মূল্যবান উপহারসামগ্রী কেনাকাটায় রাশি রাশি অর্থের শ্রাদ্ধের পেছনে রয়েছে ব্যবসায়িক লুটেরাদের দুরভিসন্ধি। এমনকি উপহারসামগ্রীর মূল্য এবং ফুলের বর্ণ ও গাঢ়ত্বের ওপর ভালোবাসার গভীরত্বও নির্ভরশীলÑএমনতর ধারণা বাজারজাত করে প্রেমিক-প্রেমিকা এবং যুগলদের পকেট কাটার মহড়াও বর্তমানে চলছে পুরোদমে। আর দিবসটি পালনের খোঁড়া যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কিছু অনুমানসিদ্ধ লোকপ্রবচন-কেচ্ছাকাহিনি ইত্যাদি। প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত অনুসারে একদা ভারতবর্ষে স্বয়ম্বরা (রাজকন্যাদের নিজস্ব বর বাছাই) প্রথা প্রচলিত ছিল। তৎকালে রাজা-রাজাধিরাজগণ নিজেদের রসে টলমল ও পুষ্পিতা যৌবনা কন্যাদের নিজেদের পছন্দের পাত্রকে স্বামী হিসেবে বরণ করার আয়োজন করতেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে কন্যাকে পাত্রস্থ করার উদ্দেশ্যে তারা দেশ-বিদেশের সুদর্শন রাজপুত্রদের অংশগ্রহণে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। ফুলের তোড়া হাতে রাজকন্যা উপস্থিতদের মাঝে চক্রাকারে ঘুরে বেড়াতেন এবং পছন্দের রাজপুত্রের গলায় মালা পরিয়ে দিতেন। পরে ঢাকডোল পিটিয়ে মহা ধুমধামে বিয়ের আয়োজন করা হতো। অবশ্য সময়ের অগ্রযাত্রায় রাজতন্ত্রের যবনিকাপাত ঘটেছে এবং স্বয়ম্বরা প্রথাও ভারতবর্ষ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। ভারতীয় স্বয়ম্বরা প্রথার পাশাপাশি প্রাচীন রোমে লুপারক্যালিয়া অনুষ্ঠান চালু ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
হাড়কাঁপুনে শীতের শেষে ও ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বিশ্বপ্রকৃতি নিজস্ব নিয়মেই স্বয়ং প্রাণপ্রাচুর্যে মেতে ওঠে এবং মনোলোভা রূপে সজ্জিত হয়। আর কোকিল সুমধুর গানে বসন্তের আগমন বার্তা ধ্বনিত করে এবং বৃহঙ্গকুল পুরোনো নীড় ছেড়ে নতুন নীড় রচনায় মরিয়া হয়ে ওঠে। বসন্তের মৃদুমন্দ মলয় উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী, ষোড়শী-অষ্টাদশীদের মনে নতুন আনন্দের পুলক শিহরণ ও হিল্লোল জাগায় এবং তারা প্রেম-প্রণয়ে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। প্রাচীন রোমের অষ্টাদশীরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি মনমাতানো বসুন্ধরার সঙ্গে সংগতি বজায় রেখে লটারির মাধ্যমে যুগলবন্দী এবং ঘর-সংসার রচনা ও প্রসূতি হওয়ার প্রবল তাড়না বোধ করত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। জনশ্রুতি অনুসারে, প্রাচীন রোমের সমাজব্যবস্থায় মধ্য ফেব্রুয়ারিতে রোমান লুপারক্যালিয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রমাণ মেলে। পঞ্চম শতাব্দীর শেষে পোপ গেলাসিয়াস লুপারক্যালিয়া অনুষ্ঠান উদ্্যাপন নিষিদ্ধ করেন এবং সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে প্রবর্তন করেন। অবশ্য চতুর্দশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও ব্যাপক আয়োজনে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনের তেমন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, খ্রিষ্টধর্মের চরম যুগসন্ধিক্ষণে ভ্যালেন্টাইন নামধারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাজককে ধর্মের জন্য আত্মাহুতি দিতে হয়েছিল। তবে তাদের নামানুসারে ভ্যালেন্টাইনের উদ্ভব এমনতর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ইতিহাসের পৃষ্ঠায় মেলে না। বরং সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস গথিকাস কর্তৃক ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো যাজক ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই দিবসটির নামকরণ হয়েছে বলে অনেকের বিশ্বাস। প্রবাদ-প্রবচন অনুসারে, যাজক ভ্যালেন্টাইন ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে কারা কর্মকর্তার অন্ধ কন্যাকে আরোগ্য দান করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে গভীর প্রেম-প্রণয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। অবশেষে কারারুদ্ধ যাজক ভ্যালেন্টাইন প্রেমিকার উদ্দেশে লিখিত পত্রে ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন স্বাক্ষর করেছিল। অপর এক বর্ণনা অনুসারে, টার্নির বিশপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এবং যাজক ভ্যালেন্টাইন মূলত একই ব্যক্তি। অন্য একটি জনশ্রুতি অনুসারে, সম্রাটের আদেশ অমান্য করে স্বামীদের যুদ্ধ থেকে বাঁচানোর জন্য গোপনে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যুগলদের বিয়ে করেছিল।
যাহোক, পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভ্যালেন্টাইন উদ্্যাপন শুরু হয় এবং সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ছাপানো বাণিজ্যিক কার্ডের লেনদেনের সূত্রপাত হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে ছাপানো বাণিজ্যিক ভ্যালেন্টাইন কার্ডের যাত্রা শুরুর নির্ভরযোগ্য কিছু প্রমাণ রয়েছে। এ পর্যায়ে ভ্যালেন্টাইন কার্ডে রোমের ভালোবাসার দেবী কুপিডের সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে আবেগ-অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে হৃদ্্যন্ত্র বা হার্টকেও সংযোজন করা হয়। অনেকের ধারণা, বন্য পাখিরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পুরোনো নীড় ছেড়ে নতুন নীড় বাঁধার লক্ষ্যে যুগলবন্দী হয়। এমনতর চিন্তা-চেতনার আলোকে সময় বিশেষে পাখিও ভ্যালেন্টাইন দিবসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যগত উপহারসামগ্রীর তালিকায় রয়েছে ক্যান্ডি ও ফুল, বিশেষত গভীর সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ।
একদা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, মেক্সিকোসহ উন্নত বিশ্বে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্্যাপন করা হলেও বর্তমানে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে মহা সাড়ম্বরে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্্যাপন করা হয়। অনস্বীকার্য যে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বিশ্ববাসীর চিন্তা- চেতনায় অভিনবত্বের জোয়ার বইতে শুরু করে। মান্ধাতার আমলের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে বিস্ময়কর পরিবর্তনের ঢেউ খেলে যায়। অনবদ্য কারণে স্মরণাতীত কালের অনাচার মুক্তবাজারে আচারে, বেআইন আইনে, কপটারিতা বা বকধার্মিকতা নিখুঁত ধার্মিকতায়, অনিয়ম নিয়মে, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা-মায়া-মমতা-বাৎসল্য ইত্যাদি বাণিজ্যিক পণ্যের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। ফলে আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, সাউথ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্্যাপন বিবাহবার্ষিকী উদ্্যাপনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে কোটিপতি/উঠতি কোটিপতির সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও বস্তুত ৮৫% দেশবাসী আইনশৃঙ্খলার অবনতি, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য এবং নিত্যপণ্যের আকাশস্পর্শী দামে রীতিমতো দিশেহারা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% দুবেলা-দুমুঠো পেটপুরে খেতে পায় না বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। গো-মাংসের নাম শোনামাত্র মুখে লালা এলেও মোট জনসংখ্যার ১৫% থেকে ২০% কোরবানির ঈদ এবং কাঙালিভোজ ছাড়া এর স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পায় না। অথচ লুটেরা, সরকারি কোষাগার আত্মসাৎকারী কুলাঙ্গার সম্প্রদায় রাশি রাশি অর্থব্যয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্্যাপন করছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ।
যাহোক, ফুল যতই রঙিন এবং চোখ ঝলসানো হোক না কেন, সপ্তাহের ব্যবধানে পুরোপুরি বিবর্ণ ও ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং পাপড়িগুলোও ঝরে যায়। অন্যদিকে আধুনিক বিশ্বের ৯৫% নামীদামি প্রেম-প্রণয়-ভালোবাসা-সংসার অল্প দিনেই বালির বাঁধের মতো হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। বিশেষত, উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব সিঙ্গেল পিতা, সিঙ্গেল মাতা, অনাথ শিশু-কিশোরের গুরুভারে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। বর্তমানের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী সিকি/অর্ধশতকে জগতে পারিবারিক ও বিবাহবন্ধনের অস্তিত্ব জাদুঘরে স্থান পাবে। মূলত ক্ষুধা-কষ্ট, দুঃখবোধ, বাৎসল্য-মমত্ববোধ, সহমর্মিতা-ভালোবাসা ইত্যাদি দুরপনেয় সত্য হলেও বস্তুত দুর্নিরীক্ষ। ধরাছোঁয়াও স্পর্শের অতীত। বাইরে থেকে দেখা যায় না, হৃদয় দিয়েই উপলব্ধি করতে হয়। তাই ভালোবাসার বিপণনের নামে অর্থ লোটার যবনিকাপাত কামনা করছি।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।