ঠিকানা অনলাইন 
‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ ও 'ইসলামি খেলাফত' নিয়ে মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড সম্প্রতি ভারত সফরে এসে যেসব কথা বলেছেন তা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেছে। এর জন্য দ্রুত তার মন্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়েছে- ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি আরো বলছেন, এই বক্তব্যের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না। আর উগ্রবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তার প্রশংসাও করেছেন, দাবি করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
২০ মার্চ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) এই টকশো সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে। যেখানে অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ভারত থেকে পাকিস্তান, মিয়ানমার থেকে চীন- বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত ভূরাজনীতির নানা বিষয়ে ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এবার আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ও পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো টুইট করে, কখনো বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে একাধিকবার নেতিবাচক কথা বলেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছিল, সবশেষ তার এমন মন্তব্য দেশে-বিদেশে আলোচনা তৈরি করে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) কেন বলেছেন, এটা বিচার করার যোগ্যতা আমার নাই। নিশ্চয়ই কোনো কারণে এটা বলেছেন। আমি অনেক সময় তার বক্তব্য বুঝিও না।’ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ‘ম্যাকানিজমে’ খোঁজ নিয়ে এমন কোনো অর্থায়নের তথ্য পাওয়া যায়নি, বলেন মো. তৌহিদ হোসেন।
এদিকে বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে উগ্রবাদ প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নইলে বিদেশে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উগ্রবাদ আছে এটা বলেননি তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, উদ্বেগের ব্যাপার আছে।
“আমাদের দেশের মানুষ ধার্মিক, কিন্তু উগ্রবাদী না। তাই দেশে উগ্রবাদিতা বড় আকারে দেখা দেবে, এমন সুযোগ নেই। যতটুকু থাকবে নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।”– যোগ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যে টানাপোড়েন চলছে, টকশোতে অনেকটা স্বীকার করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ অবস্থায় শেষ পর্যায়ে থাকা ৩০ বছর মেয়াদি পদ্মা-গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি নবায়ন করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আরো একটু ভালো চুক্তি করতে চাই। তা যদি না হয়, তবে মন্দের ভালো হিসেবে চলতি চুক্তিটি নবায়ন করতে পারলেও খারাপ হবে না।’
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অর্থনীতির যদি উপকার হয়, তাহলে এতে সমস্যার কিছু নেই।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তায় চীন সফরে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক চীন। তাদের দিক থেকে প্রচুর বিনিয়োগ আসুক। তারা বাংলাদেশে কারখানা স্থানান্তর করুক, বা নতুন কারখানা স্থাপন করুক।’
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বিদেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কোনো চাপ রয়েছে কি না, সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ নেই। তারা বরং সংস্কার উদ্যোগ সমর্থন করছেন। নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, সরকার থেকে এমন কথা বলা হচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।’
-
ঠিকানা/শই
