ঠিকানা টিভি ডেস্ক
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলেছিল’ এই অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গ্রামীণে সরকারের শেয়ার শূন্য করে দিলেই ভালো হতো। কারণ তখনকার সরকার হস্তক্ষেপ করতে পেরেছিল নিজেদের মালিকানা থাকার কারণেই।
ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে বিশেষ সাক্ষাৎকারে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। ১৯ এপ্রিল শনিবার এই সাক্ষাৎকার ঠিকানা টিভির স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় নিউইয়র্ক সময় বেলা ১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়)। যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে দেশের আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এই সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে সংশোধনী এনে এতে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বিষয়টি ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর মধ্যে পড়ে কি না, জানতে চাইলে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মোটেই তা নয়। এটা জনগণের প্রতিষ্ঠান। সরকারের তো ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানে থাকাই ঠিক নয়। সরকারের গ্রামীণ ব্যাংকে যাওয়ার দরকার কী? ব্যাংক চালানো সরকারের কাজ নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাবা যেমন ছেলেকে একেবারে ছেড়ে দিতে পারে না, ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি তেমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি রাখতেই পারেন। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন, ব্র্যাকে স্যার ফজলে হাসান আবেদ যেমন, তেমনটি গ্রামীণেও থাকতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল পুরস্কার পেয়েছে ড. ইউনূসের কারণেই।’
ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাচার করা সম্পদের বড় অংশ জব্দ করা হবে, সম্প্রতি এমন কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ বিষয়ে ঠিকানা টিভিকে তিনি বলেন, কোথায়, কার কত সম্পদ আছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য নিশ্চিত করা যাবে। সেখান থেকে পাচার অর্থ ফেরাতে যৌথ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এই কাজের জন্য যুক্ত করা হবে।
‘বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ১০-১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে। এটা ব্যয় করে যদি ২০ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে পারি, তাহলে ক্ষতি কী?’, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি আরও বলেছেন, অর্থ উদ্ধার সাপেক্ষে সেই টাকা থেকে ২০ শতাংশ দেওয়া হবে, বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে এমন চুক্তিতেও কাজ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যয়ের কোনো রকম ঝুঁকি নেই।
এদিকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের পরবর্তী দুটি কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম) ঝুলিয়ে রেখেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শর্ত পূরণে চার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, এই পর্যবেক্ষণ তাদের। এ প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কিছু মতপার্থক্য থাকলেও আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই গঠনমূলক। এখনই তারা ডলারের দর বাজারভিত্তিক করতে বলছে। বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ আমরাও চাই। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, এখন নয়, সময় হলেই আমরা করব।’
এদিকে ডাক বিভাগের মোবাইলভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ অন্তর্বর্তী সরকারের সময় চাপে রয়েছে বলে যে আলোচনা, তা উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, ‘নগদকে আমরা আরও শক্তিশালী করছি। এটাকে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে চাই আমরা। তবে বিকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে অবশ্যই নগদকে রাখতে হবে।’
বিশেষ ওই সাক্ষাৎকারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান।
ঠিকানা/এনআই