বাংলাদেশে কত কিছুর রদবদল হয়ে গেল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার বিদায় নিল। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। তাদের বয়সও প্রায় ৯ মাস হয়ে এল। কত সংস্কারকাজ চলছে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে। বিদেশ থেকে বাঘা বাঘা সব বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশে নিয়ে এসে কাজে লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কার সাধনের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ জোর গতিতে চলছে। ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হয়েছে এবং সে বৈঠকে দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষসহ বিশ্ব বিবেক আশা করেছিল, ভারত এত দিনের বৈরিতা পরিহার করে প্রকৃত প্রতিবেশী দেশের আচরণের হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু ভারতকে সেই পুরোনো চরিত্রেই দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের স্বভাব পাল্টায়নি। ভারত প্রতিবেশীর কাছ থেকে কেবলই পেতে চায়। দিতে চায় না কিছুই। প্রতিবেশীর ন্যায্য প্রাপ্য মেটাতেও ভারত সব সময় বিমুখ। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশকে সহযোগিতার মাসুল ভারত শেখ হাসিনার শাসনকালে এমন করেই কড়ায়-গন্ডায় আদায় করেছে যে, শেখ হাসিনাও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘ভারত যা চেয়েছে তার সবই তাকে দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ফুটো কড়িও পাওয়া যায়নি ভারতের কাছ থেকে।’
সীমান্ত বিরোধের নামে ভারত কাকপক্ষীর মতো মানুষ মারছে সীমান্তে। শুধু হত্যা করেই সাধ মেটেনি, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখে বিকৃত উল্লাসে মেতেছে। ফারাক্কায় বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে বর্ষায় ডুবিয়ে মেরেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বাংলাদেশ চাষাবাদ পর্যন্ত করতে পারে না। তিস্তা নদীর পানি নিয়ে ন্যায়সংগতভাবে মীমাংসা করে ফেলার জন্য বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা দেখাল না ভারত। তিস্তা সংকট তাই আজও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
এ ছাড়া ভারতীয় মিডিয়া খুললে মনে হয়, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষও জীবিত নেই। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে ঘটে না, সে দাবি কেউ করবে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে এখনো বলা হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম একটি উদাহরণ বিশ্ব দরবারে। অন্যদিকে ভারতে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার ঘটনা তো লেগেই আছে। এখনো প্রবলভাবে চলছে মুসলমানদের ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে দাঙ্গা। এ ছাড়া বিজেপির মুসলিম বিতাড়নের হুমকির মুখে সব সময় একটা ভীতির মধ্যে বাস করতে হয় ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে। বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতেও ভারতের আচরণ মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। প্রথমত, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া এবং সেই আশ্রিত অবস্থাতেও বাংলাদেশে তার দলীয় মানুষদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার ব্যাপারে তারা কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়েও অন্যায় ও অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করছে না ভারত। তাদের আচরণ দেখলে মনে হবে, তাদের বশংবদ শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের ক্ষমতায়। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এখনো দাবি দেখায়। ‘আগে নির্বাচন পরে ট্রান্সশিপমেন্ট’Ñএমন কথাও তাদের মুখে শোভা পায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল অর্থাৎ ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশ আর বিদেশে মালামাল সরবরাহ করতে পারবে না। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি বিমানবন্দরও ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। ভারত বলছে, বাংলাদেশে এখন চলছে অনির্বাচিত সরকার। এ অবস্থায় বিদেশে, বিশেষ করে ভুটান ও নেপালে মালামাল রপ্তানিতে অনেক অসুবিধা ও অধিক ব্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাসে ভারত ভুলেই গেছে, এখন আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় নেই যে ভারতের ইশারায় বাংলাদেশ নাচবে, উঠবে, বসবে। ড. ইউনূস বাঘের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে দ্বিধা করেন না। আর নিজেদের ন্যায্য দাবির প্রশ্নে তো আপোস করে চলার প্রশ্নই ওঠে না। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশ নতুন এক দেশ। ভারত এ সত্য অনুধাবন করতে না পারলেও বিশ্বজগৎ এরই মধ্যে নতুন এই বাংলাদেশের খবর পেয়ে গেছে।
 
                           
                           
                            
                       
    
 
 


                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
