🎄ভোট-বিলম্বের রহস্যফাঁস🎄মার্কিনবলয়ে রোহিঙ্গারাষ্ট্র 🎄ভারত-বিএনপি’র লক্ষ্য গুডবাই ইউনূস
‘সুভাষণ নয়, সুশাসন দাবি’
সেনাপ্রধান জে. ওয়াকারুজ্জামান বলেছিলেন ‘১৮ মাসেই নির্বাচন’। সে মতে ৫ আগস্ট থেকে ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারি গাইডলাইন। অন্তর্বর্তী সরকার-প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন ২০২৬-এর জুন-এর কথা। আগামী ২৮ জুন জন্মতিথি বা ৮৫ বছর বয়সে পদার্পণকালে ক্ষমতা থেকে নিস্কৃতি। বলেছেন রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংস্কার শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে নির্বাচনী শিডিউল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঝুলে যাচ্ছে নির্বাচনী আয়োজন। ক. মার্কিন বলয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা; খ. জুলাই আন্দোলনে অপরাধী আওয়ামী লীগারদের বিচার সম্পন্ন করা এবং গ. জুলাই আন্দোলনের দল এনসিপি নেতাদের নির্বাচনী জয় নিশ্চিৎ করা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিষয়ক এক গোপন গবেষণায় বিষয়গুলো উঠেছে। ‘রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা ঠেকাতে ভারত অতীব তৎপর। মানবিক করিডোর, মার্কিন কোম্পানিকে বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রদান, বা সংস্কার শেষে সেন্টমার্টিন দ্বীপ মার্কিনীদের না দিতে সৃষ্টি হচ্ছে চাপ। মিয়ানমারকে পক্ষে নিতে ভারত প্রস্তাব করেছে নতুন রোডম্যাপ। ফলে, বাণিজ্যিক যুদ্ধের পরে বাংলাদেশের সঙ্গে এখন চলছে কূটনৈতিক যুদ্ধ।
ভোট-বিলম্বে হাসিনাপন্থীদের বিচার ও নিষিদ্ধ আ.লীগ
প্রসঙ্গ : প্রবীণ বনাম তরুণ উপদেষ্টাদের বিভাজন
গত ১০ মে নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের অবাধে বিদেশযাত্রা ছিলো ইস্যু। ছাত্রশক্তি, এনসিপি তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে। প্রবল দাবির মুখে আওয়ামী কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। বলেন, জুলাই’২৪ আন্দোলনে অপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ।
এমন ঘোষণায় আন্দোলনকারীরা বিশেষভাবে আনন্দিত। কিন্তু প্রধান দল বিএনপি সমর্থন জানালেও কার্যত আতংকিত। কারণ বিচারকার্য কতোদিনে শেষ হবে- তার কোনো সময়সীমা নেই। বিএনপির মতে, উপদেষ্টা পরিষদ কৌশলে সময়-সীমা বাড়িয়ে নিয়েছে।
উল্লেখিত সিদ্ধান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদেও বিতর্ক রয়েছে। প্রবীণ উপদেষ্টারা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দায়মুক্ত হতে চান। কিন্তু মধ্যবয়স্ক, তরুণ ও তরুণতমরা সময় নেয়ার পক্ষে। তাদের মতে ‘সেভ এক্সিট’ সহজে পাওয়া যাবে না। ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’ বা এনসিপিকে দাঁড় করাতে হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মতো ‘সাবালকত্ব’ প্রয়োজন। এজন্যে ২/৩ বছর সময় দিতে হবে। তাই ‘হাসিনাপন্থীদের বিচারের নামে’ মেয়াদকাল বাড়াতে পারে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোন সুনিদিষ্ট মেয়াদকাল নেই। সংবিধানের ১০৬ ধারা মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সে গঠিত হয়েছে। আর যাই হোক, রাষ্ট্রপতির চলমান মেয়াদকাল পর্যন্ত থাকা যাবে। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মেয়াদ আছে আরো সাড়ে তিন বছর।
ড. ইউনূসের স্বপ্ন : মার্কিন
বলয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্র
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মাঝে নতুন দেশ হবে। একটি ইহুদি রাষ্ট্র গড়ার জন্যে পাশ্চাত্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই নতুন রাষ্ট্র বিষয়ে ড. ইউনূস সরকারও তুমুল আগ্রহী। তথ্যমতে, ভারতের সহযোগিতায় ইহুদি রাষ্ট্রের প্রক্রিয়া চলছিলো। পাক-ভারত যুদ্ধে ইসরাইল সরাসরি অস্ত্র দিয়েছে ভারতকে। যুদ্ধটি প্রলম্বিত হলে সেই রাষ্ট্রের ভিত্তি রচিত হতো। কিন্তু ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে এনে পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছেন। ভারতকে পাহারা দিতে জাতিসংঘের ‘মানবিক করিডোর’ বসাতে চান। ভারতের সহযোগিতায় যেভাবে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে, সেভাবে বাংলাদেশের আশীর্বাদে মিয়ানমার ভেঙে আরাকান রাষ্ট্র হোক। রোহিঙ্গাদের কারণে রাষ্ট্রটি মুসলিম প্রধান হতে পারবে।
আরাকান বাহিনীকে বশীভূতকরণ এবং রোহিঙ্গা পুণর্বাসন। সে লক্ষ্যেই মার্কিন প্রতিরক্ষা শক্তি সক্রিয় হয়েছে। মার্কিন কূটনীতিক এরিক গিলান এখন বাংলাদেশে। সঙ্গে এসেছেন ডিফেন্স অ্যাটাশে লে. কর্নেল মাইকেল ডিমিচে। সেনাপ্রধান জে. ওয়াকারুজ্জামান সকাশে বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বৈঠকগুলো সমন্বয় করছেন। সঙ্গে আছেন প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ আফিসার লে. জে. কামরুল হাসান। এমন তৎপরতা বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনাও রয়েছে।
বিএনপি বলছে, জনগণের সম্মতি ছাড়া করিডোর দেবেন কেনো? বন্দর-ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেবেন কেনো? ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা গোপন উদ্বেগ জানিয়েছে। মার্কিন কোম্পানি বন্দর-ব্যবস্থাপনায় থাকলে বিপদ হতে পারে। বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র আসবে। গোপনে খালাস করে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করবে। শুধু মিয়ানমার-বার্মা নয়। ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিরাপত্তা হুমকিতে থাকবে। মার্কিন কোম্পানিকে বন্দর-ব্যবস্থাপনা লিজ প্রদান নিয়ে চতুর্দিকে আলোচনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মুখ খুলেছেন। বলেছেন, শতান্দী প্রাচীন বন্দরটির আধুনিকায়ন প্রয়োজন। মান্ধাতার আমলের সিস্টেম, প্রশাসন বাংলাদেশকে পশ্চাৎপদ করছে। ডিজিটালাইজড ও সর্বাধুনিক করতে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের তদারকি প্রয়োজন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারী উৎসাহিত হবে। এ কারণে বিশ্বখ্যাত কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করতে হচ্ছে। তাছাড়া, আমাদের দেশের বন্দর, আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। বাইরের দেশের নাক গলানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
‘সেভেন সিস্টার্স’কে ডেডলক বলেছিলেন ড. ইউনূস। এজন্যে নেপাল-ভুটানসহ ‘সেভেন সিস্টার্স’কে সামুদ্রিক সুবিধে দিতে চেয়েছিলেন। মহাচীনকে বলেছিলেন একটি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন বানাতে। ভারত এমন বক্তব্যে আতংকিত হয়। মনে করে, বাংলাদেশ এই সাতরাজ্যে স্বাধীনতা এনে দিতে চায়। অথবা চীন-আমেরিকার সহযোগিতায় দখলেও নিতে পারে! সেই আশংকা থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে।
‘সেভেন সিস্টার্স’কে সামুদ্রিক সুবিধা দিতে ভারত নিয়েছে নতুন উদ্যোগ। হাজার কোটি রুপি খরচে গড়তে চায় নতুন রুট। সাতরাজ্যের শিলং, শিলচর, আইজল থেকে রাস্তা যাবে মিয়ানমারে। লভটালাই, জোড়িনপুই, পালেটয়া হয়ে সিট্রে সমুদ্র সৈকত। মিয়ানমারে দেড়শ কিলোমিটার সড়ক ট্রানজিট প্রয়োজন। তাতেই সমুদ্র ছুঁতে পারবে সাতরাজ্য। এছাড়া বঙ্গোপসাগর ধরে পশ্চিমে এগুলেই কলকাতা বন্দর। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংরক্ষণ করতে চায় ভারত।
ভারত-বিএনপি’র লক্ষ্য- গুডবাই ইউনূস হ ইশরাককে
মেয়র বানানো নিয়ে সরকার-বিএনপি যুদ্ধ
ভোট-বিলম্বের রহস্য ফাঁস হওয়ায় দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত। দ্রুত নির্বাচনের জন্যে চাপ দিচ্ছে প্রধান দল- বিএনপি। প্রয়োজনে ড. ইউনূসের বাসভবন ‘যমুনা’ ঘেরাওয়ের হুমকি দিচ্ছে। বক্তব্য-বিবৃতিতে ড. ইউনূসকে তাড়ানোর ইঙ্গিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র পদে চলছে আস্থিরতা। আওয়ামী মেয়র ফজলে নূর তাপস পলাতক। আদালত রায় দিয়েছে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের পক্ষে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করছে না। বলছে, সারাদেশের স্থানীয় সরকার পদ স্থগিত রয়েছে। ঐ মেয়র পদের মেয়াদও ১৫ মে শেষ। এছাড়া হইকোর্টে রিট আবেদন আছে। তাই আইন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য প্রয়োজন । তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এমনটিই বলছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা তীব্র প্রতিবাদে নেমেছে। ইশরাক হোসেনের বিষয়টি ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে ‘জয় বা পরাজয়’ এমন দোলাচলে দুলছে।
ভারতও বাণিজ্যযুদ্ধ, কূটনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছে সমানে। মানুষ পুশইন করছে চতুর্দিকে। সরকারপক্ষ বলছে পায়ে পড়ে বিরোধ বাঁধানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান প্রায়শ ‘নির্বাচিত সরকারে’র কথা বলছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে সামরিক বা অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতা নয়। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন মানে ড. ইউনূসের বিদায়। সেটি নিশ্চিৎ করতে নানামুখী প্রক্রিয়া চলমান। আওয়ামী লীগের প্রায় ৩৪ হাজার নেতা-কর্মী ভারতে পলাতক। নতুন আইনের মাধ্যমে তাদেরকে ফেরৎ পাঠানোর চেষ্টা চলছে। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এতে উদ্দেশ্য রয়েছে। আওয়ামীপন্থীরা যেনো দেশে ফিরে সরকার বিরোধী কার্যক্রমে নামে। ইউনূস সরকারকে অকার্যকর করতে একটি ঝাঁকুনি দিতে হবে। ১৯৭২ সালেও ভারতের সহযোগিতায় ‘জাসদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থিতিশীল করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে সংগঠনটি। আসন্ন জুনে ১০ দিন ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি। রাজধানী ঢাকা থাকবে অনেকটা জনমানবহীন। এ সময়ে জোরালো কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিও চলছে।
অরক্ষিত গ্রামীণ জনপদ
‘সুভাষণ নয়, সুশাসন দাবি’
জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা মেয়র পরিষদ। ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে সবকিছু বাতিল। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চালু থাকলেও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি পলাতক। ফলে গ্রামবাংলার পুরো জনপদ অভিভাবকহীন। প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব থাকলেও লোকবলের তীব্র অভাব। কোনো কোনো ডিসি, এসপি, ইউএনও ৩/৪টি পদে আসীন। তাদের সিংহভাগই ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে অনেকের উদাসীনতায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল দশা। প্রায় প্রতিটি স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে প্রশাসন। নিজ অফিসের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন। ফলে শিক্ষাঙ্গনেও চরম অবনতি বিরাজমান।
চাঁদাবাজি, হাট-মাঠ, বাজার-ঘাট ইজারা। সর্বত্রই ‘জোর যার মুল্লুক তার’ পরিস্থিতি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। খুন, ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার আশংকা বাড়ছে। গ্রামবাসীদের কথা, অভিভাবক থাকলে ভরসাও থাকে । জেলা, উপজেলা চেয়ারম্যান বা মেয়র প্রয়োজন। এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা শুধু নয়, অভাব অভিযোগ দেখা, সাহায্য করাও তাদের কাজ। আমরা দল বুঝি না, এলাকার নেতা বুঝি। দেশের নেতা ড. ইউনূস বিদ্বান মানুষ। সারা পৃথিবীতে নাম-ডাক আছে। উনি সব বিষয়ে সুভাষণ দিতে পারেন। কিন্তু জনগণের জন্য সুশাসনও চাই। স্থানীয় জনপদের নির্বাচিত নেতা অচিরেই চাই। না হলে সুশাসন আসবে না। এই সহজ কথাটি কেনো ক্ষমতাসীনরা বোঝে না। না বুঝলে নগর-বন্দর-গ্রাম রসাতলে যাবে। অভাব, দুর্ভিক্ষ আর অরাজকতায় দেশটা মুখ লুকাবে।



সালেম সুলেরী


