Thikana News
১৮ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

হঠাৎ বৃষ্টি

হঠাৎ বৃষ্টি



 
প্রতিদিনের মতো মায়ের ডাকে রিতু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। নতুন চাকুরী আবার দেশের বাইরে যাবে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য। রিতুকে অনেক পড়াশোনা করতে হচ্ছে। কাগজ পত্র সবকিছু ঠিকঠাক করতেও মাথায় অনেক চাপ। পড়াশোনা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আর্থিক সচ্ছলতার জন্য একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জয়েন করে রিতু।

পাশাপাশি রিতু ভাইকে দেখাশোনা করে এবং ভাইয়ের পড়ালেখার ব্যপারেও রিতু অনেক বেশি সহায়তা করে। রাজু এসএসসি পরীক্ষা দিবে তাই রিতু মাকে বলে দিয়েছে ভাইকে যেনো কোন ধরনের মানসিক চাপ না দেয়া হয়,ভাইয়ের নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ যেন নষ্ট নাহয় তাই রিতু আজকাল বাসায় এসে টিভি দেখে না।একসময় রিতু প্রতিদিন নিয়মিত টিভিতে খবর এবং টুকিটাকি অনেককিছু দেখতো।একেতো নতুন চাকরি, আবার নিজের অনেকরকম ব্যস্ততা, ভাইয়ের পরীক্ষা সবমিলিয়ে রিতু কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। চঞ্চলতা কমে গেছে অনেকখানি। তবে ভাইয়ের ব্যপারে অনেক কেয়ারিং রিতু আপু।
বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে ভাই আর মা’কে নিয়ে কয়েকবার হলে গিয়ে সিনেমাও দেখেছে অথচ এখন রিতু নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রিতুর বাবা মাঝেমধ্যে বলে, রিতু বাবাকে ভুলে গেছিস না-কি? রিতু তখন হেসে বলে না বাবা ভুলবো কেন? তোমার মতো ভালো বাবাকে কেউ কখনো ভুলতে পারে।রিতু এবার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বাবা, আই লাভ ইউ বাবা।
বাবা হাসতে হাসতে বলে, আমার সেই ছোট্ট রিতু অনেক বড়ো হয়ে গেছে। বাবা তখন বলে,মা তুই দেশের বাইরে গেলে আমি কেমনে থাকবো তোকে ছাড়া, কলিজা।

রিতুর দুচোখ ঝাপসা হয়ে যায়।রিতু বাবাকে বুঝতে না দিয়ে বাবা যাচ্ছি বলে আফিসের জন্য বের হয়।
রিতু অফিসের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। লিফটে ওঠা মাত্র রিতু দেখে রিতুর স্কুল বন্ধু রাফি! রিতু চিৎকার করে বলে উঠে, কি..রে তু...ইইই। রাফি আর রিতু একই স্কুলে পড়লেও কলেজ আলাদা। রাফি কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। তবে স্কুল লাইফে রিতু,রাফি কিংবা অন্য কারো সাথেই কথা বলতো না।

রাফি এবং রিতু দুজনেই পড়ালেখায় খুবই ভালো ছিলো এবং দুজনের মধ্যে চলতো প্রতিযোগিতা। রিতু যেই অফিসে চাকরি করে সেই একই অফিসের উপর তলায় রাফির বোনের বাসা। রাফি বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। দুজন আজ অনেক কথা বললো, রাফি রিতুকে বোনের বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করলো। রিতু বললো আচ্ছা যেকোনো সময় যাবো। এইভাবে নাম্বার আদানপ্রদান হলো, শুরু হলো কথাবার্তা....।
রিতুর কাগজ পত্র সবকিছু ঠিকঠাক হলো। আগামী সপ্তাহে রিতু দেশের বাইরে রওনা দিবে। এদিকে সাময়িক সময়ের জন্য করা চাকুরী হতে রিতুকে বিদায় নিয়ে নিতে হবে এমন চুক্তিতেই রিতু জয়েন করেছিল। বিদায় নিয়ে আজ রিতু রাফির বোনের বাসায় গেল বিদায় নিতে এবং ব্যক্তিগত কিছু সহযোগিতা জানতে। রাফির বোন আবার পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন সেই হিসেবে যাওয়া।

বাসায় রাফি নেই কিন্তু রিতু পরিচয় দিলে রেহানা আপু অনেক আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলেন।
একসাথে বসে চা খাচ্ছে এমন সময় রাফির আগমণ।
রিতুর চলে যাওয়ার কথা শুনে রাফির চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। রাফি যেনো আর কোন কথা বলতে পারছে না। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই রিতু রেহানা আপুকে বলে বিদায় নিয়ে নিল।
রাফিকে বললো আসি, ভালো থাকিস।

রাফির বোন রেহানা আপু হঠাৎ বলে উঠলেন, রাফি যা তো রিতুকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়।
রাফি রিতুর সাথে বিল্ডিংয়ের নিচে আসতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। অঝোর ধারায় বৃষ্টি আবার অন্ধকার হয়ে গেছে পুরো আকাশ।

এদিকে সন্ধ্যা ঘিরে আসছে পুরো শহর জুড়ে কিন্তু লাইট গুলো ঠিকই আলো দিয়ে যাচ্ছে। রাফি বলল, চলো রিতু আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি, এই অবস্থায় একা যাওয়া নিরাপদ হবে না।রিতু আর না করলো না। একটা সিএনজি তে দুজন উঠে বসলো।দুজনেই কিন্তু ভিজে চুপসে গেছে। রাফির মন ছটফট করছে রিতু দেশের বাইরে চলে যাবে শোনার পর থেকে। তাদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা কিছুই নেই কিন্তু হঠাৎ কেন জানি খুব মায়া হচ্ছে রিতুর জন্য রাফির।রিতু কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই আছে তবে রাফি ভালো ছেলে তাই বিশ্বাস করে অনেক কথা শেয়ার করেছে। রিতুদের বাসার সামনে থেকে রাফি চলে গেল রিতুকে নামিয়ে দিয়ে। রিতুর দেরি হয়েছে দেখে মা বাবা জিগ্যেস করলে রিতু অকপটে সবকিছু সত্যি সত্যি বলে দেয়।রিতুর বাবা তখন বলে ওঠে, কিরে রিতু, রাফি ছেলেটা কে অন্তত বাসায় এসে এককাপ চা খেয়ে যাওয়ার অনুরোধ তো করতে পারতিস।দুদিন পরেই রিতু জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। সবকিছু ঠিক, সকাল এগারোটায় রিতুর ফ্লাইট। 

রিতুর সাথে মা বাবা এবং ভাই রাজু এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে। আদরের একমাত্র ভাই রাজুকে বুকে জড়িয়ে রিতু এবং রাজু অনেক কান্নাকাটি করেছে। রাজুকে বারবার অনুরোধ করেছে যেন মন দিয়ে পড়াশোনা করে।রাজু বোনের কথা সবসময় শোনে। রিতু ভাইকে বলেছে, তোকে আর মা বাবাকেও আমি একদিন আমার কাছে নিয়ে যাবো। 

এয়ারপোর্টে ঢুকতেই রিতুর চোখ পড়ে রাফির চোখে। রাফি এবং রেহানা আপু এসেছে রিতুকে বিদায় দিতে। রাফির হাতে অনেকগুলো ফুল! 
সবার সাথে সবার কথাবার্তা শেষ করে রিতু সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।রাফি ফুলগুলো তুলে দিল রিতুর হাতে।আনন্দ অশ্রু নিয়ে রিতু জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা দিল...।

 

কমেন্ট বক্স