Thikana News
১৮ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
রাজনীতির ধামাকা ►ফুঁসছেন ব্যবসায়ীরা

অর্থফাঁদে বাংলাদেশ

অর্থফাঁদে বাংলাদেশ



 
নির্বাচন, সংস্কার, জুলাই চার্টার ইত্যাদি জাতীয় এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার তোড়ে তলিয়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতির হালদশার তথ্য। অর্থপাচার, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও লুটপাটে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সরকারের নেওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মার খাচ্ছে চরম মাত্রায়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শিল্পে শ্রম অসন্তোষ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে  নেতিবাচক ধারা, বিপুল খেলাপি ঋণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বাজারে অস্থিরতার মতো পুরোনো সংকটগুলোর একটু-আধটু লাগাম টানতে না টানতেই সামনে আসছে আরেকটি। ফুঁসছেন ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা। কোথাও কোথাও শ্রমিক-কর্মচারীরাও।
ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্প খাতে সংকট কেবল প্রকট হচ্ছে। চরম খরা বিনিয়োগ। নতুন কোনো কর্মসংস্থান নেই। বরং ছাঁটাইয়ের তালিকা দীর্ঘ। চাকরি হারিয়ে যোগ হয়েছে নতুন লাখ বেকার। অর্থনীতির একটা বাজে অবস্থাকে উত্তরাধিকারের মতো সঙ্গী করে ক্ষমতা নিয়েছে সরকার। যে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থনীতির খ্যাতি-জ্যোতি জগৎজোড়া, তার সঙ্গে সহকর্মী হয়ে আছেন দেশসেরা অর্থনীতিবিদেরা, তারা প্রায়ই পেরে উঠছেন না।
ক্ষমতায় নতুন সরকার আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে, কিছু শুল্ক কমানোসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিলেও মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা যায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নীতি সুদহার বাড়িয়ে মুদ্রা সংকোচন নীতির মাধ্যমে বাজারে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সেটা সফলতা আনেনি। উল্টো মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলছে। আর বিনিয়োগ কেবল কমছে। বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা নেমেছে। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসা না থাকায় মানুষের মধ্যে অর্থের প্রবাহও নেই। তৈরি পোশাক মালিকেরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।
সব হিসাব ওলটপালট হয়ে গেছে আরও বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীদের। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা চলছে। সামনে রাজনীতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। আবার কারা ক্ষমতায় যেতে পারে, তা-ও তারা বিবেচনায় রাখছেন। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিংয়ের মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস নেতিবাচক হিসেবেই বহাল থাকছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (এপিএসি) সার্বভৌম আউটলুকে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী আরও দুই বড় প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এবং মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশের দুর্বল অর্থনীতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আরও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘুরছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসও নেতিবাচক। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সুবর্ণ সুযোগের দেখা পেয়েও সরকার সেভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। বিগত সরকার দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে গেছে, সঠিক হলেও এ তথ্য আর মানুষ বারবার শুনতে চাচ্ছে না। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া করে গোটাবায়ে রাজাপাকসেও দেশ ছেড়ে পালান। অবস্থা অনেকটাই বাংলাদেশের মতো হয়। বিক্রমাসিংয়ের সরকার এক বছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। ম্যাজিকের মতো বেড়ে যায় দেশটির পর্যটন ও রেমিট্যান্স আয়। বাড়ে শিল্প ও কৃষি খাতের উৎপাদনও। বিশ্বব্যাংকের বেল আউট সুবিধাও নেয়। কিছু সংস্কার, কিছু কর ছাড়-বৃদ্ধি ইত্যাকার নানাবিধ উদ্যোগের মাধ্যমে দেড় বছরের মধ্যেই দেশকে একটি স্বস্তিকর অবস্থানে নিয়ে আসে বিক্রমাসিং সরকার । বাংলাদেশে অন্তর্বতী সরকারের ১০ মাসেও সে ধরনের লক্ষণ নেই। দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি নেই কোনো খাতেই। চোখে পড়ার মতো কার্যক্রম হচ্ছে ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য বিশ্ব উড়ে বেড়ানোর খবর। ঘনঘটার বিনিয়োগ সম্মেলনে সুফল আসেনি। শিল্প-কারখানা স্থাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি না আসায় রাজস্ব আদায় কমেছে। শিল্প-কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের কর-শুল্ক দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে। একদিকে ব্যাংকের ঋণ, অন্যদিকে শিল্প-ব্যবসা ঠিকমতো না চলার কারণে তারা মারাত্মক বিপাকে। এর বাইরে হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। যাদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, তারা শিল্প-ব্যবসায়ে তা কাজে লাগাতে পারছে না। তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ভয়াবহ। শিল্প-কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবাহের শর্তে অতিরিক্ত মূল্য দিতে রাজি হলে পতিত সরকার যেমন, তেমনি বর্তমান সরকারও গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে শিল্প-কারখানা চালানো ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার মাঝে ঈদের আগে সরকার প্রথাগত বাজেট দিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে এবারের বাজেট চাপাও পড়ে গেছে। তবে আলোচনায় চাপা পড়লেও বাজেটের প্রভাব চলছে। যে স্বপ্নকে ধারণ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, বাসযোগ্য আবাসস্থল গড়ার স্বপ্ন দেখানো হলেও নমুনা বড় চ্যালেঞ্জিং। রাষ্ট্রের আয়ের উৎসগুলো আগের মতোই আছে। নাগরিকদের কাছ থেকে নানাভাবে কর আদায় করাই রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস। নানা নামে সেটা চলছে আগের মতোই। গ্রামে কাজ নেই, শহরে চলে আসছে কর্মক্ষম মানুষ। এখানেও চাকরি হারিয়ে নতুন বেকার যোগ। বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত শ্রমিকেরা মজুরি চায় মালিকদের কাছে, সরকারের কাছে চায় বাজারদর নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি। রেশন দরে খাদ্য, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি খাত, ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর উন্নতির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাত আর বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প সহায়ক অর্থনীতির প্রত্যাশা এবারের বাজেটেও না থাকার জের সইতে হচ্ছে তাদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে খোলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লুটপাট ও পাচারের ‘সংস্কৃতি’ নেই। আগে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে গৃহীত উদ্যোগেরও কোনো সুখবর নেই। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাড়লেও এখন এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এ আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

কমেন্ট বক্স