বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অথরিটির বিভিন্ন অভিযান ও শেয়ারবাজারে লোকসান-মূলত এই চার কারণে এবার নিউইয়র্কের ট্রাভেল এজন্সির ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। এসব কারণে সামারেও মানুষ অন্যান্য বছরের তুলনায় ভ্রমণ করা কমিয়েছেন। ফলে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকেরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকার সময়ে অর্থাৎ সামারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী ও বাংলাদেশি আমেরিকান নিজে এবং কেউ কেউ সপরিবারে দেশে যান। কোনো কোনো পরিবার থেকে ১০-১৫ জন সদস্যও একসঙ্গে দেশে যান। আবার কেউ কেউ ছেলেমেয়ের বিয়ে দেওয়া কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য দেশে যান। কিন্তু এবার বৈশ্বিক ও দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় দেশে যাচ্ছেন না অনেকেই। এদিকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে আইসের অপারেশন। সেই সঙ্গে চলছে ডিপোর্টেশন। যারা অবৈধভাবে এ দেশে বসবাস করছেন, তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে ধরপাকড় চলছে। ফলে যারা ওয়ার্ক পারমিট ও গ্রিনকার্ডধারী, তাদের অনেকেই দেশে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকে টিকিট কেটেও বাতিল করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা। একাধিক এজেন্সির মালিক বলেছেন, এবারের সামারে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ মানুষ কম দেশে গিয়েছেন। এ কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবসায় লোকসান হয়েছে।
ডিজিটাল ট্রাভেল এস্টোরিয়ার সিইও নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ। দেশ থেকে বলে, ভাই এখন আইসো না। দেশে মবের উৎপাত চলছে। যখন তখন মানুষের ওপর হামলা হচ্ছে। মানুষ মেরে ফেলছে। পরিস্থিতি ভালো হোক, তখন আইসো। নির্বাচনের পরে আইসো। এ কারণে অনেকেই যাচ্ছেন না। টিকিট কেনার পরও বাতিল করছেন। দ্বিতীয় কারণ হলো আইসের ধরপাকড়। তার ওপর এখান থেকে অনেক আইনজীবী ও কিছু কিছু মিডিয়া প্রতিনিয়ত মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশে না যেতে এবং দেশে গেলে ফেরত আসা কঠিন হবে। তৃতীয় কারণ হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ। কিছুদিন আগে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর মানুষ ভয় পেয়ে যায়। তখন দুই সপ্তাহ ফ্লাইটে অনেক সমস্যা হয়। ফলে অনেক মানুষ তখন যেতে চাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ তো আছেই, এখন আবার নতুন করে যোগ হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ। এসব কারণে অনেকেই দেশে যাচ্ছেন না এবং কেউ কেউ টিকিট কিনেও বাতিল করেছেন। চতুর্থ কারণ হলো শেয়ারবাজার। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই শেয়ার ব্যবসায় লোকসান গুনেছেন। ফলে অর্থাভাবে তারা দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ১২ জুন আমার ১৭টি টিকিট বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে যাত্রীরা বলছে, শেয়ারবাজারে তাদের লোকসান হয়েছে। এ কারণে তারা বাংলাদেশে যাওয়া বাতিল করেছেন। নজরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিবছর হাফ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করি। এবার মাত্র এক লাখ ডলার করতে পেরেছি। বাকি তিন লাখ ডলার আমার লোকসান। এই অর্থ কে দেবে।
তিনি বলেন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে সামারে। এই সময়ে বেশির ভাগ মানুষ লম্বা ছুটি পান। সন্তানদের স্কুল বন্ধ থাকে। ফলে অনেক মানুষ দেশে যান। সেখানে তারা সময় অতিবাহিত করেন। কেউ কেউ এক মাস থেকে দেড় মাস থাকেন। এই সময়ে তারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। আর টিকিটগুলো কেনা হয়ে যায় মার্চ, এপ্রিল, মে মাসের মধ্যে। এ বছর আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। কারণ এখন ভ্রমণকারীরা ভ্রমণ বাতিল করছেন। এই টিকিট মানুষ লোকসান দিয়ে রিফান্ড করছে। আমাদেরও লোকসান হচ্ছে।
বাংলা ট্রাভেলসের কর্ণধার মোহাম্মদ বি হোসেন (বেলাল) বলেন, কমিউনিটিতে অনেক মানুষ নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন, আইসের অভিযানের কারণে ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার কড়াকড়ির কারণে অনেককেই দেশে যেতে বারণ করছেন। এ কারণে অনেকেই দেশে যাচ্ছেন না। টিকিট কেটেও ডেট পরিবর্তন করছেন। কেউবা রিফান্ড নিচ্ছেন। আসলে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা থাকতে পারে। যারা গ্রিনকার্ড বৈধভাবে পেয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড নেই, তাদের দেশে যেতে-আসতে অসুবিধা নেই। যাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ স্ট্যাটাস নেই, তারা দেশে যাওয়া-আসা করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, এসব কারণে আমাদের ব্যবসা অনেক খারাপ যাচ্ছে। ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবসা কম হয়েছে। এতটাই লোকসান হয়েছে যে তা কাটানো কঠিন হবে।