Thikana News
২২ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

এবার মুখ খুললেন শরীয়তপুরের ডিসি ও সেই নারী

এবার মুখ খুললেন শরীয়তপুরের ডিসি ও সেই নারী ফাইল ছবি



 
বর্তমানে টক অব দ্য টাউন শরীয়তপুরের ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন-কাণ্ডের ঘটনা। শুধু জেলায় নয়, দেশব্যাপী এই ঘটনা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মূলত এক নারীর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ অবস্থায় আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

যদিও ওই নারী প্রথম থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন ডিসি আশরাফ উদ্দিন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এখন প্রতারণা করছেন। তবে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। উল্টো তার অভিযোগ, ওই নারী তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরবর্তীতে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে পূর্বের কিছু ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেন।

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার সকালে। প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক  ও টেলিগ্রামে এক ব্যক্তি ও এক নারীর কিছু  আপত্তিকর ছবি ভিডিওটি পোস্ট করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা সেলিনা ইসলাম লিজা। তিনি ঢাকার মিরপুরে স্বামী মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের সঙ্গে থাকতেন। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন লিজার স্বামীর বড় বোনের জামাই।

জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় এবং বাসায় যাতায়াতের একপর্যায়ে দুজন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এদিকে বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। পরে দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছিলেন শরীয়তপুরের এক আইনজীবী।

ভুক্তভোগী ওই নারী ডিসির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি দাবি করে বলেন, উনি (ডিসি) আমার নিকটাত্মীয়। সে আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স করিয়েছে। সে আমার সংসার, সমাজ ধ্বংস করে পথে বসিয়েছে। সে এখন আমাকে বিয়ে না করে উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে এ ঘটনার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তার দাবি ওই নারী তাকে ব্ল্যাকমেল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিল। তাকে কয়েক দফায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দেওয়াও হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি সম্পর্কের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। ব্ল্যাকমেলটি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। সেই টাকা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তখন সে শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, কীভাবে টাকা আদায় করা যায়। একপর্যায়ে সে আমার ডিসি পোস্টিংয়ের অনেক আগের কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ডিসি পোস্টিংয়ের পর থেকে সে টাকার জন্য অনেক চাপাচাপি করছিল। পরে মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সে একে তো আমাকে ব্ল্যাকমেল করেছে, অন্যদিকে এগুলো (গোপন ছবি) সব জায়গায় দিল। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই আইনজীবী জানান, ওই নারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানায়, ডিসি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কে তৈরি করে এখন তাকে বিয়ে করছে না। পরে আমিও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। দুজনই আমাকে আইনজীবী হিসেবে মানে। তখন আমি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুজনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিই। তখন ওই নারী বলেন, বিয়ে করলে উনি (ডিসি) আমাকে মারধর করবে ও তালাক দেবে। পরে তিনি বিয়ের পরিবর্তে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসক না মানলে প্রতি মাসে এক লাখ করে হাতখরচের টাকা দাবি করেন। আর টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার কথা জানান। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক কিছু টাকা তাকে দেন। তবে একপর্যায়ে পুরো পাঁচ কোটি দাবি করলে জেলা প্রশাসক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যক্তিগত ভিডিও ভাইরাল করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, কারও ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া অপরাধের শামিল। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী এটি একটি অপরাধ। যেহেতু জেলা প্রশাসক ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়েছে, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ২৭তম বিসিএস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে নিউরো ডেভেলপমেন্ট, প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক ছুটি নিয়েছেন উল্লেখ করে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসাইন বলেন, স্যার (জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন) কর্মস্থলে নেই। যতদূর জানি, ওনি দরখাস্ত দিয়ে কমিশনার স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স