Thikana News
২৬ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

নির্বাচন সাতাশে নেওয়ার ম্যাটিকুলাস

নির্বাচন সাতাশে নেওয়ার ম্যাটিকুলাস সংগৃহীত



 
ডিসেম্বর থেকে সরে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চক্করে ঘুরলেও ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে দেশের এ সময়ের প্রধান দল বিএনপি। কেন্দ্র থেকে নানা কথা বলা হলেও এ সময়ে নির্বাচন না হওয়ার মেসেজ আছে বিএনপির তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে। জামায়াতে ইসলামী সব আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও নির্বাচনের গরজ নেই। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে দেশে দ্বিতীয় ফ্যাসিস্ট জন্ম নেবে বলে প্রকাশ্যে জানিয়েছে জামায়াত। ইসলামী আন্দোলনসহ দক্ষিণপন্থী দলগুলোর মনমর্জিও এমনই। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিবন্ধনের আবেদন জমা দিলেও এখন নির্বাচনে নারাজ।
আওয়ামী লীগও নির্বাচন প্রশ্নে অপ্রাসঙ্গিক নয়। তাদেরকে বাদ রেখে শেষতক নির্বাচন সম্ভব কি না, এ প্রশ্নের জবাবও এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তিহীন। গত ১০ মাসে আওয়ামী লীগের যত লোকের নামে মামলা হয়েছে, সারা দেশে তত ভোটারই নেই কোনো কোনো দলের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে- তা আরও পরিষ্কার করেছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা। বিবিসির প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নির্বাচনে তারা থাকবে কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
এর মাঝে ২৩ জুন সোমবার রাতে খুচরা রহস্যজনক ককটেল বিস্ফোরণ বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুষ্কৃতকারীরা এই হামলা চালিয়েছে দাবি করে এতে চারজন আহত হয়েছে বলে জানানো হয় এনসিপির পক্ষ থেকে। ককটেল হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এনসিপি। বিক্ষোভ মিছিলটি বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেন, সংস্কার ও বিচারকে বিলম্বিত করতেই তাদের দলের কার্যালয়ের সামনে হামলা করা হচ্ছে। হামলা করে তাদেরকে পিছু হটানো যাবে না। বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করা যাবে না বলেও দাবি করা হয় সমাবেশ থেকে। এসব মিলিয়ে রাজনীতির গোটা আবহে গোলমাল। দিনটি ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া কোথাও কোনো কর্মসূচির হাঁকডাক ছিল না। দলের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বিবৃতি প্রচার হয়েছে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। ১০২০ শব্দের দীর্ঘ বিবৃতিটিতে আন্দোলনে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কর্মী, সমর্থক তথা দেশের মানুষকে কী বার্তা দিয়েছে, তা অস্পষ্ট-অপরিচ্ছন্ন। তার পরও আওয়ামী লীগ নিয়ে জিজ্ঞাসা ঘুরছে। আর নির্বাচনের সময় নিয়ে সংশয়-সন্দেহের ঘুরপাক আরও বেশি। নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কারও অনিশ্চিত। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ইচ্ছাও পরিষ্কার নয়। তার গোটা সরকারের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে একটি পিকুলিয়ার সিনড্রম। কুম্ভকর্ণের নমুনা। শোনে কিন্তু সাড়া দেয় না। কথার নড়চড়ও ক্রমে লক্ষণীয়। প্রবণতাটি জাতীয় সনদ নিয়েও। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, সব রাজনৈতিক দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেগুলো ধরেই জাতীয় সনদ তৈরি হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন নানা ইস্যুতে একমত হতে চাপ দিচ্ছে। এতে তাদের পূর্বনির্ধারিত অ্যাজেন্ডা আঁচ করছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। কিন্তু জোর গলায় বলতে পারছে না অনিবার্য কারণে। এনসিপির অ্যাজেন্ডার সঙ্গে একমত না হলে সে ঐক্য বিরোধী-আগের সরকারের দোসর, এমন একটা ধারণা জোরালো হচ্ছে। তাদের চাওয়ামতো নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আয়োজন চলছে বলে কানাঘুষা আছে। নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলার অবস্থা নেই। কেউ বলছেন, তিনি রোজার আগে নির্বাচনের বিষয়ে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির শর্ত দিয়ে ‘হতে পারে’ বলেছেন। আগামী রোজার আগেই নির্বাচন হবে কি না, সে নিশ্চয়তা কেবল প্রধান উপদেষ্টাই দিতে পারেন।
নির্বাচনের সময় নিয়ে ‘যদি-তবে-কিন্তু’র ফেরে আরও অনেক কথা আসছে। ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।’ এখানেও অস্পষ্টতা। সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি বলতে কতটা অগ্রগতি তিনি চেয়েছেন, তা অস্পষ্ট। এনসিপিকে প্রস্তুত হতে সময় দেওয়ার জন্য এ অস্পষ্টতা রেখে দেওয়া হচ্ছে বলে সন্দেহ কারও কারও। এ ছাড়া ভোটার তালিকা নিয়েও সমস্যা আছে। বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইন অনুসারে প্রতিবছর ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হয়। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করতে হলে ডিসেম্বরের মাঝামঝি নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভোটার তালিকাও সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন না হয়ে এপ্রিলে নির্বাচন হবে, সে নিশ্চয়তাও নেই। এ বাস্তবতায় ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল- এ দুটোই কেবল তারিখ মাত্র। এগুলোকে নির্ধারক ধরে এগোনো হচ্ছে একধরনের বিভ্রম। এ বিভ্রম ২০২৬ ছাড়িয়ে নির্বাচনকে নিয়ে যেতে পারে ২০২৭ সালে। এ বিষয়ক গুঞ্জন ব্যাপক, যা দৃশ্যমান বাস্তবতার অন্তরালে সুদূরপ্রসারী এক নীতিকৌশলের পর্দার আড়ালে পরিচালিত সমীকরণ। পেছনে একটি ম্যাটিকুলাস নীলনকশা।

কমেন্ট বক্স