মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে গত মঙ্গলবার রাতে চমকে দেওয়া জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। কিন্তু নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে আফ্রিকা থেকে উঠে আসা ৩৩ বছর বয়সী এক মুসলিম তরুণ মেয়র হয়ে যাবেন, বিষয়টি কোনোভাবেই ভাবতে পারছেন না ট্রাম্প। আর তাই এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টের সাফল্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন সাময়িকী টাইমের খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা একাধিক পোস্টে ট্রাম্প নিউইয়র্ক রাজ্যের এই অ্যাসেম্বলি সদস্যের চেহারা, কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। মামদানির প্রগতিশীল রাজনৈতিক মতাদর্শের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প তাঁকে ‘শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিজ মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি, একজন শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি জিতে এখন মেয়র হওয়ার পথে। আগেও কিছু উগ্র বামপন্থী দেখেছি, কিন্তু এবার ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হয়ে গেছে। তাঁর চেহারা বিশ্রী, কণ্ঠস্বর বিরক্তিকর, আর বুদ্ধিও কম।’
আরেক পোস্টে ট্রাম্প মামদানিকে সমর্থন দেওয়া কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের নিয়েও ব্যঙ্গ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ। ট্রাম্প সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমারকে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘আমাদের মহান ফিলিস্তিনি সিনেটর।’ তিনি আরও বলেন, ‘কান্নাকাটি করা চাক শুমার মামদানির পেছনে ঘুরঘুর করছেন।’
মামদানি এখন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী। ফলে সাধারণ নির্বাচনের লড়াইটি জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, দেশের সবচেয়ে বড় শহরে প্রগতিশীল রাজনীতির ভবিষ্যৎ পরীক্ষার মঞ্চ হবে এই নির্বাচন। ট্রাম্পের আগেভাগেই এই নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা থেকে স্পষ্ট, রিপাবলিকানরা এটিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থী ঝুঁকের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।
২০২১ সাল থেকে কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া এলাকা থেকে রাজ্য অ্যাসেম্বলিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন মামদানি। মেয়র পদে তাঁর ঘোষিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—বাসভাড়া সম্পূর্ণ ফ্রি করা, ভাড়াবাড়ির ভাড়া বৃদ্ধির হার বন্ধ রাখা এবং সিটি করপোরেশনের নিজস্ব গ্রোসারি দোকান চালু করা। এসব পরিকল্পনার অর্থায়নে তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ধনীদের ওপর ১০ বিলিয়ন ডলারের কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ ছাড়া, মামদানি স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান নিয়েছেন, যার জন্য তাঁকে ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এর ফলে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনেও অপ্রত্যাশিতভাবে বিদেশনীতি আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, নিউইয়র্কে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তা কার্যকর করতেই এই পদক্ষেপ নেবেন তিনি। মামদানি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশনস’ (বিডিএস) আন্দোলনের পক্ষেও স্লোগান দিয়েছেন।
ঠিকানা/এসআর