Thikana News
৩০ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ঢাকায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যু

ঢাকায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যু ছবি সংগৃহীত



 
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানসহ সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। স্বজনদের দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড; পুলিশ প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়াকে কারণ হিসেবে দেখছে।

নিহতরা হলেন—সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন (৫২), তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৩৮) এবং ১৮ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম। মনির হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের ঈমান আলী ব্যাপারী বাড়ির মো. মনুহার মিয়ার ছেলে। মনির-স্বপ্না দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে নাঈম ছিলেন সবার বড়। তাদের অপর দুই ছেলে যথাক্রমে অষ্টম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মনির হোসেনের আত্মীয় মো. রাশেদ জানান, প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমের চিকিৎসার জন্য মনির হোসেন সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসেন। শনিবার (২৮ জুন) সকালে মনির হোসেন তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও ছেলে নাঈমকে নিয়ে ঢাকার মগবাজারে আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ডাক্তারের সিরিয়াল না পেয়ে রাতে পাশের আবাসিক হোটেল সুইট স্লিপ-এ অবস্থান করেন তারা। বিকালে ওই হোটেলে নাশতা খেয়ে রাত ১১টার দিকে একই হোটেল থেকে রাতের খাবার নিয়ে রুমে যান।

রোববার (২৯ জুন) সকালে তিনজনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মনির হোসেনের চাচা রফিক উল্যাহকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি ও স্বজনরা মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় মনির হোসেন, স্বপ্না বেগম ও নাঈমকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে তারা তিনজনই মৃত্যুবরণ করেন।

মনির হোসেনের চাচাতো ভাই মো. জাকির হোসেন জানান, ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে দেশে আসেন তিনি। তার তিন ছেলের মধ্যে বড় নাঈম শারীরিক বাকপ্রতিবন্ধী। ঢাকায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে তার চিকিৎসার জন্য কিছুদিন পরপরই নিয়ে আসা হতো। এ জন্য সপরিবারে শনিবার সকালেও ঢাকায় এসেছিলেন। তবে চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় মগবাজার এলাকার ওই হোটেলে উঠেছিলেন।

জাকির জানান, রোববার বিকালে গ্রাম থেকে জাকিরকে ফোন করে ঘটনাটি জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আদ-দ্বীন হাসপাতালে এসে তিনজনের লাশ দেখতে পান।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা আলামত সংগ্রহ করে এবং এ ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

রমনা থানার গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ডাক্তারের সিরিয়াল না পেয়ে আবাসিক হোটেলে রাতযাপন করেন। সেখানেই খাবার খেয়ে বমি করেন। পরে তাদের আদ-দ্বীন হাসপাতালে আনা হয়, যেখানে তারা তিনজনই মারা যান। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল।’

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘নিহতদের শরীরে বিষক্রিয়ার আলামত মিলেছে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

এদিকে একই পরিবারের তিনজনের আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যুতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম।

রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল বাসার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘হোটেলের খাবার খেয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। তবে খাবারের সাথে কোনো বিষক্রিয়া ছিল কি না, সেটাই দেখার বিষয়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স