ছোট ভাই আবু সাহেদ রাসেলকে হারিয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী সামিরা খান মাহি। ২৮ জুন (শনিবার) রাতে ফেনী থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রাসেল। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সেখানেই মৃত্যু হয় অভিনেত্রীর ভাইয়ের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কাজিনের মৃত্যুর খবর জানান অভিনেত্রী নিজেই। ৩০ জুন (সোমবার) ফেসবুকে প্রথমে ভাইয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, আমার ভাইটা চলে গেল। ওকে মেরে ফেলল আর আমরা কিছুই করতে পারলাম না।
ভাইয়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে সামিরা বলেন, শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আমার ভাই। দুই দিনের জন্য ফেনী গিয়েছিল বন্ধুর বিয়ে খেতে। ফেনী থেকে ঢাকায় ফিরছিল। কুমিল্লার ময়নামতি ক্রস করার পর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় ওর।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। অক্সিজেনও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ও নিতে পারছিল না। কারণ নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। ভাইয়ের পকেটে নাবিলের ভিজিটিং কার্ড ছিল। উদ্ধারকারীরা সেই নম্বর দেখে ওর মৃত্যুর সংবাদ দেয়।
সামিরার বাগদত্তা সাদাত শাফি নাবিল কাজিন শাহেদের মৃত্যুর খবর জানার পর দ্রুত সামিরাকে জানান। অসময়ে ভাইকে হারানোর শোক মেনে নিতে পারছেন না অভিনেত্রী।
এদিকে প্রথম পোস্টের ৪ ঘণ্টা পর ভাইয়ের বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন সামিরা। কালো কাপড় দিয়ে ভাইয়ের কবরের ছবিও আপলোড করেন। ছবির ক্যাপশনে জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর লোমহর্ষক বর্ণনা।
লেখেন, আমি গভীর শোকের সাথে জানাচ্ছি, আমার কাজিন, ছোট ভাই যে আমাদের সাথে আমাদের বাসায় থাকত একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। একটি নোহা গাড়ি দুই, তিন বার ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দেয়, গাড়িটি পানিতে পড়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট পর দুইজন মানুষ ওকে গাড়ির গ্লাস ভেঙে পানির নীচ থেকে তোলে। কিন্তু এরপর যা ঘটে, সেটা আরও ভয়ংকর।
হাসপাতাল ওকে ভর্তি নেয়নি। কারণ ওরা চিন্তা করেছিল-কোথাকার কে এসেছে, বিল দেবে কিনা, পরিবার কারা —এই সব হিসাব। একজন মানুষের জীবন তাদের কাছে মূল্যবান ছিল না। এরপর ওকে নেয়া হয় সরকারি হাসপাতালে কিন্তু সেখানকার ব্যবস্থাপনাও অগোছালো। যথাযথ চিকিৎসা হয়নি।
আমার প্রশ্ন, প্রথমে কী আসা উচিত—একজন মানুষের জীবন, না টাকা-পয়সার হিসাব? একটা মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকে আর একটি গাড়িও দাঁড়ায় না—এ কেমন মানবতা? মানুষ কি সত্যিই এতটা নির্দয় হয়ে গেছে?
এই সমাজ, এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এই মনুষ্যত্ব—সবকিছু আজকে প্রশ্নের মুখে। আমার ভাই আর নেই কিন্তু আমি চাই না অন্য কারো পরিবারের সাথে এমন হোক। আজকে আমার ভাই কাল আপনার। মানবতা ফিরে আসুক, মানুষের প্রাণই হোক অগ্রাধিকার।
প্রসঙ্গত, ধাক্কা দেয়া গাড়ির নম্বর না জানায় সামিরার ভাইয়ের মৃত্যুর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর কারণ জানতে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। কারণ পরিবার চায়নি মরদেহের কোনো কাটাছেঁড়া হোক। ২৯ জুন (রবিবার) রাত সাড়ে নয়টার দিকে মৃত আবু সাহেদ রাসেলের দাফন সম্পন্ন হয়।
ঠিকানা/এএস