Thikana News
০৯ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় বহু মানুষ নিহত, সমালোচনার মুখে ট্রাম্প

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় বহু মানুষ নিহত, সমালোচনার মুখে ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ ঝড় ও বন্যায় বহু মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার পর দেশটির আবহাওয়া পূর্বাভাস ও সতর্কতাবিষয়ক সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে গুরুত্বপূর্ণ আবহাওয়া ও জলবায়ু সংস্থা—ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এবং ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস)—থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের সমালোচনা শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির। 

গত ৪ জুলাই ছুটির দিনে টেক্সাসের হিল কান্ট্রি অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টায় কয়েক মাসের সমান বৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এলাকাটি। শত শত মানুষ নিখোঁজ বা প্রাণ হারায়। ভেঙে পড়ে গাছপালা, কাদামাটিতে ঢেকে যায় শহর এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় অনেকের জীবন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের দুর্যোগে আবহাওয়া বিভাগ সময়মতো সতর্কতা দিয়েছিল, তবে ভবিষ্যতে যদি এনওএএ ও এনডব্লিউএস যথাযথভাবে কর্মী ও বাজেট না পায়, তাহলে বড় বিপর্যয় আরও বাড়তে পারে।

ছাঁটাই হওয়া এনওএএ-এর ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানী অ্যান্ডি হ্যাজেলটন বলেন, “আবহাওয়া দপ্তর ভালো কাজ করেছে এই ঘটনায়। আমি মনে করি না, এই দুর্ঘটনার পেছনে ছাঁটাইয়ের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। তবে এমন দুর্যোগের সংখ্যা ভবিষ্যতে বাড়তেই পারে যদি এনওএএ-তে কর্মী সংকট ও বাজেট কাটছাঁট চলতে থাকে।”

৬০০ জন কর্মী হারিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস এমপ্লয়িজ অর্গানাইজেশনের (এনডব্লিউএসইও) তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এনওএএ এবং এর অধীনস্থ সংস্থাগুলো থেকে ৬০০ জনের বেশি কর্মী বরখাস্ত, অবসর বা পদত্যাগ করেছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেটিওরোলজিস্ট, টেকনিক্যাল স্টাফ এবং বন্যা বিশেষজ্ঞদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীরা।

এনডব্লিউএসইও-এর আইনবিষয়ক পরিচালক টম ফাহি বলেন, “আমরা কেবল কর্মীই হারাইনি, হারিয়েছি গুরুত্বপূর্ণ মেধা ও দক্ষতাও।”

তার তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে অনেক আবহাওয়া অফিসে কর্মী সংকট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কানসাসের গুডল্যান্ড ও ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যানফোর্ড অফিসে ৬১.৫ শতাংশ মেটিওরোলজিস্টের পদ শূন্য। টেক্সাসের অ্যামারিলোতে শূন্যপদের হার ৩০.৭৭ শতাংশ, আর সাউথ ডাকোটার র‍্যাপিড সিটিতে ৪৬.১৫ শতাংশ।

ফাহি বলেন, “আমরা দেশের প্রতিটি অংশে কর্মী বাড়াতে চাই। কারণ, কঙ্কালসার জনবল দিয়ে আবহাওয়া অফিস চালানো যায় না। এখানে মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন জড়িত।”

অভিজ্ঞ জনবলের অভাব: জরুরি মুহূর্তে নেতৃত্ব নেই
টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও অফিস, যা সাম্প্রতিক বন্যার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেখানে প্রায় ১৮ শতাংশ পদ খালি। তবে এনডব্লিউএস জানিয়েছে, ওই সময় তারা অতিরিক্ত পূর্বাভাসদাতাকে দায়িত্বে রেখেছিল।

এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “ওরা কম জনবল নিয়েও অনেক কিছু করে। কিন্তু সেটা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে না। তারা হয়তো প্রকাশ্যে কিছু বলবে না, তবে নিশ্চিতভাবেই সেই পদগুলোর জন্য তারা অপেক্ষা করছে।”

তিনি জানান, এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের আগাম অবসর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পল ইউরা নামের একজন অভিজ্ঞ আবহাওয়া সমন্বয়কারী চাকরি ছাড়েন, যিনি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকদের প্রধান ভরসা।

ওই স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “তিনি আমাদের গাইড ছিলেন, আমরা তার দিকনির্দেশনা পেতাম। এখন কেউ নেই আমাদের কথা শোনার জন্য।”

আরও বাজেট কাটছাঁট আসছে?
জুনে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, নিয়োগে স্থবিরতা থাকা সত্ত্বেও এনডব্লিউএস ১০০টিরও বেশি নতুন পদে নিয়োগ দেবে। তবে পরবর্তী অর্থবছরের (২০২৬) জন্য এনওএএ তার বাজেট থেকে ১.৮ বিলিয়ন ডলার কাটছাঁটের প্রস্তাব দিয়েছে এবং ১৭ শতাংশ জনবল কমানোর পরিকল্পনা করেছে।

এই বাজেট প্রস্তাবে এনওএএ-এর আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণাগার এবং সহযোগী ইনস্টিটিউটের জন্য বরাদ্দ পুরোপুরি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং এনওএএ-এর সাবেক বিজ্ঞানী হ্যাজেলটন বলেন, “আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিনিয়োগ করব না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের চরম আবহাওয়ার সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।”

তিনি জানান, উচ্চ রেজ্যুলেশনের কিছু আবহাওয়া মডেল আগেই টেক্সাসে ভারী বৃষ্টির ইঙ্গিত দিয়েছিল, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করা অত্যন্ত কঠিন।

হ্যাজেলটন বলেন, “এই কারণেই এনওএএ-তে গবেষণায় বিনিয়োগ খুবই জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “যথাযথ জনবল ছাড়া এই সেবা চালু রাখা যাবে না। বিশেষ করে এখন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন মৌসুম চলছে।”

এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “প্রকৃতির ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমাদের নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। কিন্তু সরকার যদি আমাদের হাত-পা বেঁধে রাখে, তাহলে জীবন বাঁচানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে।”

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স