জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া আহত যোদ্ধাদের ১২৫০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট দেবে সরকার। প্রথম পর্যায়ে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ১ হাজার ৫৬০ জনকে। এজন্য ‘ঢাকার মিরপুর ৯নং সেকশনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে-২০২৪-এ কর্মক্ষমতা হারানো জুলাই যোদ্ধা পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রদানের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের মধ্যে এটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এমএ আকমল হোসেন আজাদ। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশসহ শিগ্গিরই ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির পিইসি সভায় বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জুলাই বিপ্লব দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ন্যায্য অধিকারের একটি মাইলফলক। এ বিপ্লবের মাধ্যমে একটি নতুন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা হয়। এজন্য সরকার আহতদের পুনর্বাসনের জন্য বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিরপুর হাউজিং এস্টেটে মিরপুর ডিওএইচএস-সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে এসব ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রকল্পটি তৈরি করা হয়নি। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো ৫০ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হলেই সেই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ভৌত পরিকল্পনা অনুবিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে সভায় বলেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, সংস্থাটির নিজম্ব অর্থায়নে এ সমীক্ষার কাজ চলছে।
পিইসি সভায় ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহামদ বলেন, বিনামূল্যে এসব দেওয়া হলেও জুলাই বিপ্লবে আহত যোদ্ধাদের জন্য সরকার কত টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট দিচ্ছে, সেটিও হিসাবে থাকা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে জমির মূল্যসহ এবং জমির মূল্য ছাড়া ফ্ল্যাটের দাম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্পে শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার জায়গা, ফ্ল্যাটে বাথরুমের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়ানোর জন্য মত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্পে সাপ্লাই অ্যান্ড সার্ভিসেস খাতে ৮০ লাখ টাকা, স্থাপত্য ড্রইং ও কাঠামোগত ডিজাইনে ৫০ লাখ এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে বলা হয়েছে। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিনিধি মো. মেহেদী হাসান বলেন, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি। যেমন লগফ্রেম যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে।
পিইসি সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি বলেন, প্রকল্পটির অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজনে ভবন নির্মাণ অঙ্গের মধ্যে কত তলায় কতটি ভবন নির্মাণ করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হবে।
ঠিকানা/এসআর