জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ঘোষণা হতে পারে। ১২ ফেব্রুয়ারি হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জুলাই সনদপত্র বিকেলে ঘোষণা করার পর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জানাতে পারেন ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগেই নির্বাচন হবে।
সেই নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে ভোটের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। সামগ্রিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দিনক্ষণ বিশ্লেষণ করে নির্বাচন ও আইন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হবে।
সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,পরিস্থিতি যতই জটিল হোক না কেন সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ফ্যাসিবাদী আমলে বছরের পর বছর ভোট দিতে না পারায় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোটের স্বপ্ন সাধারণ মানুষের। ছাত্র গণ-ভুত্থানের এক বছরের মাথায় এসে ভোটারদের জিজ্ঞাসা কখন হবে বহুল প্রতীক্ষিত সেই ভোট, সহসাই নাকি অপেক্ষা আরও দীর্ঘ সময়ের—জনমনে আছে এমন নানা প্রশ্ন, সংখ্যা আর অনিশ্চয়তা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে আশার কথা হলো আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই হবে সংসদ নির্বাচন। জুলাই বিপ্লবে বিজয়ের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এমন ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সেই সম্ভাবনা আমলে নিয়ে ভোটের দিনক্ষণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ কবে হতে পারে? ২০২৬ সালে রোজা শুরু হতে পারে ফেব্রুয়ারির ১৭ কিংবা ১৮ তারিখ থেকে। রোজা শুরুর ঠিক আগের দুই-তিন দিন ভোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ১৩ ফেব্রুয়ারি জুমার দিন শুক্রবার। তাই সেদিনও ভোট হওয়ার নজির নাই। ফলে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে হলে ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম বলেন, ‘মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে রোজা আরম্ভ হবে। সম্ভবত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রোজা আরম্ভ হবে। সে কারণে রোজা আরম্ভ হবার অন্তত সপ্তাহখানেক আগে যদি নির্বাচনটা শেষ হয়, তাহলে আমার মনে হয় প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের জন্য, দেশের জনগণের জন্য সুবিধাজনক একটা পরিবেশ আমি মনে করি যে বিদ্যমান থাকবে।’
নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. জাকারিয়া বলেন, ‘নির্বাচনের একটা নান্দনিক প্রক্রিয়া হলো ভোটার তালিকা। ভোটার তালিকার কার্যক্রম ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন মোটামুটি শেষ করে নিয়ে আসছে। এর হালনাগাদ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শেষ করেছে।’
ভোট যদি হয় ১২ ফেব্রুয়ারি তাহলে তফসিল হবে কবে? গত ১২টি নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—তফসিল ঘোষণার পর থেকে সর্বনিম্ন ৩৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোট গ্রহণ। আগামী নির্বাচনে যদি ভোটের আগে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়, তবে তফসিল ঘোষণা করা হবে ১৪ নভেম্বর। ৬০ দিন আগে হলে তারিখটা হবে ১৪ ডিসেম্বর। আর যদি ভোটের প্রস্তুতিতে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়, তবে তফসিল ঘোষিত হবে ২৯ ডিসেম্বর।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হয়, তাহলে ডিসেম্বরের শেষে কিংবা ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভবত তফসিল ঘোষণা করা হবে। আমাদের চতুর্থ জাতীয় সংসদের ৬৮ দিন ছিল তফসিল আর সর্বনিম্ন হলো ৩৭ দিন। যেহেতু স্বাভাবিকভাবে সংসদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ হয়নি। তাই তফসিলের সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমাও নির্ধারণ করা নেই। তবে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই প্রচার-প্রচারণার জন্য কমপক্ষে ১৫ থেকে ২১ দিন সময় দিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য দিতে হবে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন। যাচাই-বাছাইয়ে দু-একদিন সময় দেওয়ার পাশাপাশি আপিল ও আপিল নিষ্পত্তিতে কমপক্ষে তিন দিন করে সময় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ যেটা বলা আছে, তফসিল ঘোষণার পর কত দিনে একটা টাইম ফ্রেম ওখানে মোটামুটি একটা ধারণা দেওয়া আছে। একটা আইনে একদম সুস্পষ্ট বলা আছে যে প্রত্যাহারের পর থেকে ভোট গ্রহণের তারিখ কমপক্ষে ১৫ দিন থাকতে হবে। তবে যদি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়, তাহলে ১২ ফেব্রুয়ারির আরও কয়েক দিন আগে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ঠিকানা/এনআই