Thikana News
০৭ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় হট্টগোলের আশঙ্কা

আয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আ’লীগ ও মহানগর আ’লীগের বিরোধ

আয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আ’লীগ ও মহানগর আ’লীগের বিরোধ নিউইয়র্ক : জ্যাকসন হাইটসে আওয়ামী লীগ-বিএনপির হট্টগোল থামাতে পুলিশি তৎপতা 



 
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণসংবর্ধনায় হট্টগোলের আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের অভিজাত ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে এই সংবর্ধনা হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে  প্রধানমন্ত্রীর  সংবর্ধনা হয়ে আসছে। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ দাবি করেছে- এ বছর তারা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বিরোধী একটি গ্রুপ সবসময় সক্রিয় রয়েছে। বিগত কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারা ‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগান দিয়েছেন। তাদের এ ধরনের আচরণে প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু এ বছরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের অভিজাত ম্যারিয়ট মার্কি হোটেলে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার আয়োজক কারা হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়ে অসন্তোষ। হঠাৎ করে প্রথা ভেঙে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সংবর্ধনার দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে তারা প্রচারও শুরু করেছেন। চলছে ব্যয়বহুল ডিজিটাল প্রচার। বিভিন্ন পত্রিকার ইনার পেজে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। এমনকী নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগকে আয়োজক হিসাবে ঘোষণা করেছেন ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি। 
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেকে মনে করছেন, যেহেতু ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি সংবর্ধনার আয়োজক হিসাবে মহানগর আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাতে দলীয় প্রধানের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু ত্যাগী নেতা-কর্মীরা এ বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগকে সংবর্ধনার দায়িত্ব দিয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অপমান করা হয়েছে। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বের বিরোধিতা করা অথবা মহানগর আওয়ামী লীগকে সংবর্ধনার দায়িত্ব দেওয়া এক নয়। সিদ্দিকবিরোধী গ্রুপ এতে আরো কয়েকগুণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 
একাধিক সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের বিরোধ রয়েছে। অনেক নেতা-কর্মী তাদের সঙ্গে নেই। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীর সঙ্গে রফিকুর রহমান এবং ইমদাদ চৌধুরীর বিরোধ রয়েছে। জাকারিয়া চৌধুরী নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করছেন। তার সঙ্গে রয়েছে মহানগরের একদল নেতা-কর্মী। অন্যদিকে আরেক প্রভাবশালী যুগ্ম সম্পাদক নূরুল আমিন বাবুও সবার থেকে আলাদা। অন্যদিকে জাকারিয়া চৌধুরীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। তার নেতৃত্বে বড় একটি অংশ ‘নো মোর সিদ্দিক’ প্রচার চালিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনার দায়িত্ব রফিকুর রহমান ও ইমদাদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মহানগর আওয়ামী লীগকে দেওয়ায় এখন জাকারিয়া চৌধুরীও এটি মেনে নিতে পারছেন না। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে জাকারিয়া চৌধুরী সিদ্দিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে সিদ্দিকুর রহমানও মহানগর আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দেওয়ায় অসন্তুষ্ট। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছেন। পরে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন তিনি ও তার সমর্থকেরা। 
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগকে সংবর্ধনা আয়োজনের দায়িত্ব প্রদান কেন্দ্রের নাকি এটি একান্তই ড. গোলাপের সিদ্ধান্ত তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে উচ্চবাচ্য না করলেও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা রাগে ও ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা বিভিন্নভাবে ড. গোলাপের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু ড. গোলাপ বার বার এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের কথাই বলছেন। 
এখানে উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ নিজেদের আয়োজক দাবি করলেও সংবর্ধনার স্থান ম্যারিয়ট মার্কি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নামে বুক করা বলে জানা গেছে। এই ব্যয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নাকি মহানগর আওয়ামী লীগ বহন করবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 
এদিকে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে উডসাইডের গুলশান টেরেসে ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাজ আজাদ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিঞা, নিউইয়র্ক মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। এছাড়া ওই বেঠকে সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, লুৎফুল করিম, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী ও আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া এনাম, অর্থ সম্পাদক আবুল মনসুর খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সোলায়মান আলী, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা কামাল হোসেন রাকিব প্রমুখ। 
জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এরপর দীর্ঘসময় ধরে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি। রাত ১১টায় বক্তব্য শেষ করেন তিনি। তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ওই বৈঠকে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। কেউ কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, এত লম্বা সময় বৈঠক করা অর্থহীন, যদি কোনো সমাধানই না হয়। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ড. গোলাপ বোঝাতে চেয়েছেন যে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই মহানগর আওয়ামী লীগকেই সংবর্ধনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 
তবে একাধিক সূত্র থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংবর্ধনা হলে সেখানে ব্যাপক হট্টগোলের আশঙ্কা রয়েছে। অতীতে ক্ষুদ্র একটি অংশ ‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগান দিলেও এবার বড় একটি অংশ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে পারে। ফলে অনুষ্ঠানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। 
 

কমেন্ট বক্স