Thikana News
২৩ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

জিএম কাদেরের রহস্যময়তা

জিএম কাদেরের রহস্যময়তা
এরশাদের জীবদ্দশায়ই জাতীয় পার্টি বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফা ভাঙন হয়েছে। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটি আবার ভাঙনের মুখোমুখি হয়েছে। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদেই ঘোষণা করেছেন, জাতীয় পার্টি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যদিকে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি না গভীর সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারটি তিনি পুরোপুরি ধোঁয়াশায় রেখেছেন।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের ব্যাপারে সংসদে ঘোষণা দেওয়ার আগে রওশন এরশাদ বিষয়টি নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে কথা বলেননি। পার্টির কোনো ফোরামে আলোচনাও করেননি। জিএম কাদেরও রওশন এরশাদসহ প্রেসিডিয়ামে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করেননি। নেতাদের মতামত নেননি। তবে পরস্পরবিরোধী এই মতামত ও অবস্থানের পক্ষে-বিপক্ষে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের, প্রেসিডিয়াম ও কেন্দ্রীয় কমিটির মত রয়েছে। বাকি আছে কেবল নেতাদের এই বৈরী অবস্থানের সাংগঠনিক স্বীকৃতি অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক বিভক্তি।
জিএম কাদের সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। বিজেপির নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনাও হয়েছে। বিষয় অবশ্যই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকেন্দ্রিক। জিএম কাদের ভারতের বিশ্বস্ত নন। তবে ভালো সম্পর্ক রয়েছে ভারতের সঙ্গে। জাতীয় পার্টির নেতৃস্থানীয় সূত্র জানায়, জিএম কাদের ভারত সফরে যান মূলত ভারতের সঙ্গে তার ও জাতীয় পার্টির অবস্থা উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং বিএনপির সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব কমিয়ে এনে সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্যে। এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে জিএম কাদেরের বোঝাপড়া রয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, সঠিক পথে সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে, এ বিষয়ে সংশয়-শঙ্কা রয়েছে। কারা নির্বাচনে লড়বেন আর কারা নির্বাচনে যাবেন না অনিশ্চিত। এখন পর্যন্ত আমরা চিন্তা করছি ৩০০ আসনে নির্বাচন করব। ভবিষ্যতে কী করব, সেটা ভবিষ্যতে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত, অস্বচ্ছ। জিএম কাদেরের এই মনোভাব ও বক্তব্য জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারি মহলও গভীরভাবে সন্দিহান। সরকার যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। তারা চাচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান। সেখানে সরকারের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির এই অনিশ্চয়তা তাদেরকে দুশ্চিন্তায় রেখেছে।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি এবং তার সমমনা, সহযোগী সংগঠনসমূহ নির্বাচন বর্জন করলে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে যাবে না। তারা বিএনপির অনুগামী হয়ে নির্বাচন বানচাল করতে ভূমিকা রাখবে না বটে, তবে তারা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেবে না। নেতাকর্মীদের নির্বাচনী ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।
অন্যদিকে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে শরিক হবেন। ৩০০ আসনেই তারা প্রার্থী দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার বাইরে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে নন। শেখ হাসিনাকে অসন্তুষ্ট করতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না তিনি। জিএম কাদেরের মতো নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কোনো রকম অনিশ্চয়তায় রাখতে চান না তিনি। কিন্তু কাদেরকে নেতৃত্বে রেখে তার নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও করতে পারছেন না। কারণ বিদ্যমান সাংগঠনিক ব্যবস্থায় দলীয় নির্বাচনী প্রতীক লাঙ্গল জিএম কাদেরের হাতে। যেকোনো মূল্যে লাঙ্গল প্রতীক দখলে নিতে চান রওশন। এ লক্ষ্য অর্জনে অক্টোবর মাসেই জাতীয় পার্টির বিশেষ কাউন্সিল করার পরিকল্পনা রওশনের। এই কাউন্সিলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে পারে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন জেপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তাদের মূল জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার পেছনে সরকারি মদদ ও সহযোগিতা রয়েছে। শারীরিকভাবে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও সাংগঠনিকভাবে দল পরিচালনার অবস্থায় নেই। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদকে চেয়ারপারসন পদে মেনে নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জন্য কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে তাকে সে পদে বসানো হতে পারে। মহাসচিব পদে শেখ শহীদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে। বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। কাজী ফিরোজ অথবা রুহুল আমিন হাওলাদারকে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগের প্রস্তাবও রয়েছে।
জাতীয় পার্টির বিভক্তি ঠেকানোর জন্য এই পার্টির কিছু সিনিয়র নেতা জোর তৎপরতাও শুরু করেছেন। জিএম কাদের আসলে কী চাচ্ছেন, ভারত সফর শেষে দেশে আসার পরই তিনি রওশনপন্থীদের বিপক্ষে এবং সরকারবিরোধী অবস্থান কেন নিচ্ছেন, জানার চেষ্টা করছেন তারা। নেপথ্যের উদ্দেশ্যই-বা কী জানতে চান। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেই কাদের নির্বাচন ও আগামী দিনের পথচলা স্থির করছেন কি না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে চান তারা। জাতীয় পার্টির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই জি এম কাদের নতুন করে মাঠে অবতীর্ণ হতে চাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে লালমনিরহাট থেকে তাকে আওয়ামী লীগ সমর্থন না-ও দিতে পারে। কাদেরের বিশ্বস্ত, একান্ত সহযোগীদেরও মনোনয়ন না-ও দেওয়া হতে পারে। রওশন এরশাদ দলীয় মনোনয়ন লাভ ও তাতে সরকারি দলের সমর্থন আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করে। কাদের তার নিজের ও সহযোগীদের মনোনয়ন ও সরকারি দলের সমর্থন সম্পর্কে নিশ্চয়তা পেতে চাচ্ছেন।
 

কমেন্ট বক্স