Thikana News
২৩ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

দিন শেষে ‘ওরা’ সাংবাদিক!

 কেউ ছবি তুলে বা ভিডিও করে হাত পাতেন আয়োজকদের কাছে  কেউ নিজের অপকর্ম ঢাকতে, কেউ সামাজিক মর্যাদার আশায় মিডিয়ায় যুক্ত হচ্ছেন
দিন শেষে ‘ওরা’ সাংবাদিক!
শুভ্র কবীর  : কেউ ছবি তোলেন, কেউ ভিডিও ধারণ করেন। কারো ছবি ছাপা হয় সংবাদপত্রে, আবার কারো ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয় অনলাইনে, সোস্যাল মিডিয়ায়। প্রযুক্তির এই যুগে ছবি ও ভিডিও’র চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সবই চলছে সাংবাদিকতার নামে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, কেউ ছবি তুলে বা ভিডিও করেই হাত পাতেন আয়োজকদের কাছে। যে অর্থ পান, তা নিয়ে ঘরে ফিরে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে আহার তুলে দেন। এতেই খুশী তারা। এসব কোনো কল্পকাহিনী নয়, নিউইয়র্কের সাংবাদিকতা এখন এমনই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। অপসাংবাদিকতার আড়ালে ঢাকা পড়ছে সাংবাদিকতার মত মহান একটি পেশা। 
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এই পেশাটিও ধান্ধাবাজদের খপ্পড়ে পড়েছে। নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে এখানে সাংবাদিকতার নামে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কেউ কিছুর তোয়াক্কাও করছেন না। 
এদিকে কারো ধান্ধা পরিবারের আহার জোগাড় করা, আবার কেউ নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং সামাজিক মর্যাদার আশায় যুক্ত হচ্ছেন মিডিয়ার সঙ্গে। ফলে এমন কোনো পেশার লোক পাওয়া যাবে না, যিনি দিনশেষে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় না দেন। অর্থাৎ সারা দিন অন্য পেশায় থেকে দিনের শেষে এসে ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন নিয়ে নেমে পড়েন সাংবাদিকতায়। 
সব পেশাই সম্মানের। অনেক সিনিয়র সাংবাদিক প্রবাস জীবনে সংসারের ব্যয় মেটাতে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। কারণ নিউইয়র্কে সাংবাদিকতা এখনো পেশা হিসাবে গড়ে ওঠেনি। অন্য পেশায় থাকলেও তারা সাংবাদিকতা পেশাকে ভালোবাসেন। এজন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছেন যে কোনোভাবে। নিয়মিত লেখালেখি করছেন। পার্টটাইম সাংবাদিকতা করছেন। কিন্তু ফুলটাইম বাটপারি করে সন্ধ্যাবেলা জ্যাকসন হাইটসে এসে সাংবাদিক হন, এমন বাটপারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বরং তাদের সংখ্যাই দিন দিন ভারী হচ্ছে। ঢাকায় দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করেছেন, খ্যাতিও পেয়েছেন, নিউইয়র্কে সুযোগ থাকার পরও তারা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। 
নিউইয়র্কের সাংবাদিকতায় যে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, তা হলো- সাংবাদিকতার নামে টাউট-বাটপারদের এই পেশায় যত্রতত্র বিচরণ। স্কুলের গণ্ডি পার করেননি, ‘ক’ লিখতে কলম ভাঙেন, এমন লোকও এই কমিউনিটিতে সাংবাদিক হয়েছেন। প্রবাসে ‘নীল ছবি’সহ পাইরেটেড সিডি বিক্রি করেছেন, এমন লোকও এখন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন। সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করে নিউইয়র্কে মিডিয়া গ্রুপ খুলে সাংবাদিকতার বারোটা বাজিয়ে চলেছেন, এমন লোকও আছে এই কমিউনিটিতে। দলে এখন তাদের সংখ্যাই বেশী। 
নিউইয়র্কে সাংবাদিকতার এই হালচাল নিয়ে এ প্রতিনিধি কথা বলার চেষ্টা করেছেন নিউইয়র্কের বেশকয়েকজন পেশাদার সাংবাদিকের সাথে। তারা কেউই এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাননি। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, নিজের পেশা নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ হয়। কি আর বলবো- উপরে থুতু ফেললে তা নিজের মুখেই এসেই পড়বে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি বিনির্মাণে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। একথা সবাই একবাক্যে স্বীকারও করেন। কিন্তু তারা অসহায় সাংবাদিক নামধারী বাটপারদের কারণে। এসব বাটপার নানাভাবে উত্যক্ত করেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। অনিয়মিত প্রকাশনা, আবার বিলুপ্ত এমন মিডিয়ার সাংবাদিকরা বিজ্ঞাপনের জন্য বিরক্ত করছেন তাদের। আর এতে অতিষ্ঠ হয়ে সাংবাদিকদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। 
একজন সিনিয়র সাংবাদিক সাম্প্রতিককালের একটি উদাহরণ টেনে বলেন, নিউইয়র্কে হঠাৎ করে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন একজন হোমকেয়ার ব্যবসায়ী। তার হোমকেয়ার নিয়ে যখন এন্তার অভিযোগ, নিজের সেই অপকর্ম ঢাকতে ওই ব্যবসায়ী পত্রিকা বের করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন পর পত্রিকাটির কথিত সম্পাদক সবকিছু ঠিক রেখে ভিন্ন নামে পত্রিকাটি আবার বের করছেন অনিয়মিতভাবে। 
কমিউনিটিতে বর্তমানে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনলাইন পোর্টাল। যে যেভাবে পারছেন অনলাইন মিডিয়া করে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মাঠে নেমে পড়ছেন। না আছে তাদের সাংবাদিকতার কোনো অভিজ্ঞতা, না আছে প্রয়োজনীয় শিক্ষাজ্ঞান, সাংবাদিক পরিচয় তুলে ধরাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। 
নিউইয়র্কে পেশাদার কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন- নিউইয়র্কে কয়েকজন কথিত সাংবাদিক আছেন, যারা প্রতিনিয়ত অপেশাদার কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছেন। একজন সাংবাদিক অনলাইন মিডিয়ার নামে সার্বক্ষণিক দৌড়ঝাঁপ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও লাইভ করছেন। কিন্তু তিনি নিজের মিডিয়ার জন্য যতটুকু না সক্রিয়, অন্য মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিভ্রান্ত করছেন। অন্য মিডিয়ায় নিউজ ছাপানোর কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। বলছেন, সব মিডিয়ায় তার পাঠানো নিউজ ছাপা হবে। এটা নিশ্চয় সাংবাদিকতা নয়। অর্থের বিনিময়ে যা হয়, সেটাকে বাটপারি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। 
তারা বলেন, নিউজের জন্য অর্থ দাবি করা অনৈতিক ও অপরাধ। কেউ যদি অর্থ নিয়েই থাকে তাহলে তার উচিত সাংবাদিকতার মত মহান পেশা ত্যাগ করে পাবলিক রিলেশন (পিআর) কোম্পানি করা। তাহলে এই পেশার মর্যাদা কিছুটা হলেও অক্ষুণ্ন থাকতো। 
নিউইয়র্কের পেশাদার সাংবাদিকরা বলছেন- নিউজ লিখতে পারেন না, এমন সাংবাদিকদের সংখ্যাই নিউইয়র্কে বেশী। সাংবাদিকতায় কম শিক্ষিত হলেও কমিউনিটিতে তাদের দাপট সবচেয়ে বেশী। তাদের অবাধ বিচরণ বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে। গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনেও অপেশাদার সাংবাদিকদের প্রাধান্য ছিল। সংবাদ সম্মেলনের প্রথম দিকের কয়েক সারি জুড়ে ছিল বিভিন্ন পেশার লোকদের দখলে। তাদের কেউ কেউ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেতে বিভিন্ন অনলাইনের পরিচয়পত্র জোগাড় করে মওসুমী সাংবাদিক হয়ে যান তারা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতা আছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগে থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দেন। 
এখন সময় এসেছেপেশার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের একজোট হয়ে অপেশাদার সাংবাদিক নামধারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার। 

 

কমেন্ট বক্স