ফিলিস্তিনের উপর গত এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ইসরায়েল সেনাবাহিনীর বিমান ও স্থল হামলায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজাবাসী। হামলায় অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সাথে সাথে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য, জ্বালানী, পানি , বিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। গাজা অবরুদ্ধ করে রাখায় নতুন করে সাহায্যও পৌছানো যাচ্ছে না। তাই এরপরে পরিস্থিতি কোথায় যেয়ে দাড়াবে তা কেউ বলতে পারছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এ সময় গাজা উপত্যকার অন্তত ৮৪ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রয়েছে। গাজায় চলমান অবরোধ ও অব্যহত হামলায় ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন তারা। জরুরি ভিত্তিতে এই সন্তান সম্ভবা নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সিএনএনের সাংবাদিক জন ভাউসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্গারেট বলেন, ‘রাফাহ ক্রসিংয়ে (গাজা-মিসর সীমান্ত) অপেক্ষারত ট্রাকগুলোতে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি ৭৮ কিউবিক মিটার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উপকরণও রয়েছে, যা অন্তত ৩ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।’
‘কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে সেগুলো গাজায় পৌঁছাতে পারছে না। তাছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো। পাশাপাশি সারাক্ষণ হামলার আতঙ্ক তো রয়েছেই।’
‘আমরা কেবল চাইছি, সীমান্ত খুলে দিয়ে এই সহায়তা উপকরণগুলো গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। কারণ দিন দিন এই অপেক্ষা ভয়াবহ পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে আমাদের সবার জন্য।’
জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজার অন্তঃসত্ত্বা নারীরা প্রাথমিক যেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন, সেগুলোর জন্য রীতিমতো লড়াই করছেন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নারী আগামী মাসেই সন্তান প্রসব করবেন। তাদের জন্য এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজার ৮১৭ জনে। এই নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও নারী রয়েছেন। এর মধ্যে হামলায় আহতের সংখ্যা বাড়ছে ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসময় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়াও গত ১০ দিনের হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।
মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ড গাজার জনসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত এই জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
ঠিকানা/এসআর