আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা, প্রায় অর্ধশত জনকে আহত করা, যানবাহন ভাঙচুর, একজন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু, শত শত টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হটিয়ে দেওয়া, হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন কী বলছে? তাদের ভিসানীতির কার্যকারিতাই-বা কী! বিরোধী শিবির এবং সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনে ভিসানীতির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, কিছুটা ভীতিও ছিল। কিন্তু তার কিছুই পরিলক্ষিত হলো না গত ২৮ অক্টোবরের ভয়ংকর সব ঘটনাবলির পরও!
সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। পুলিশি বাধায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ায় তারা পরদিন অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে হরতাল ডাকে এবং হরতাল শেষে দুই দিনের অবরোধ পালন করে। এরপর আরও তিন দিন এবং সর্বশেষ বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের অবরোধ ডেকেছে বিএনপি ও সমমনারা। এসব হরতাল-অবরোধে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষার নামে কঠোর ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের মোকাবিলা করে পুলিশ। সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। ২৮ অক্টোবর এক পুলিশ সদস্যের প্রাণহানি ও অর্ধশতের আহত হওয়ার ঘটনা গোটা পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
অবশ্য বিএনপির ভাষ্য ভিন্ন। তাদের মতে, পুলিশই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। শত শত টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। আত্মরক্ষার জন্য তারা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। বিএনপির ডাকা হরতাল, অবরোধ কাক্সিক্ষত ফল এনে দেয়নি। প্রাইভেটকার কোনো সময়ই হরতালে রাস্তায় নামানো হয় না। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। বিআরটিসিসহ সরকারি, আধা সরকারি যানবাহন যথারীতি চলেছে। প্রাইভেট বাস, মিনিবাস মালিকরা ঢাকা শহরে সীমিতভাবে বাস চালিয়েছেন। আন্তজেলা বাস স্বল্পসংখ্যায় চলেছে। সরকারি-আধা সরকারি প্রাইভেট অফিস যথারীতি খোলা ছিল। কর্মচারী অফিসাররা অফিস করেছেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক ছিল।
সরকারের শাসন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুঃশাসনে অসন্তুষ্ট দেশের মানুষ। দ্রব্যমূল্যের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। মানুষ এ অবস্থার অবসান চায়। দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু জীবনযুদ্ধে জর্জরিত দেশের মানুষ হত্যা বা ধ্বংসযজ্ঞ চায় না। সাধারণ মানুষ এমন কর্মসূচি, আন্দোলনের নামে এমন কোনো কর্মকাণ্ড প্রত্যাশা করেন না, যা তাদের জীবনকে আরও দুঃসহ করে তোলে।
এবারের অবরোধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ, যানবাহন ভাঙচুর হয়েছে। এর জেরে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিরোধীদের আন্দোলন দমনেও পুলিশ ছিল মারমুখী।
কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এ অবস্থায় কোন পথ বেছে নেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তারা কি পুলিশ বা সরকারি-বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের ওপর তাদের ভিসানীতি কার্যকর করবে? নাকি ত্রিপক্ষীয় এই দামামা কেবল পর্যবেক্ষণ করেই যাবে?