ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। বাংলাদেশে ১০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ পাওয়া যাচ্ছে ১২ হাজার ৩০০ টাকা। কোনো কোনো মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান আরো বেশী দিচ্ছে। আর হুন্ডি ব্যবসায়ীরা যা দিয়ে পারছে বা নিয়ে পারছে। ডলারের এই চড়া দামে খুশী প্রেরণকারীরা। তারা সাময়িক লাভবান হলেও খুশী নন দেশের সাধারণ মানুষ। কারণ টাকা বেশী পেলেও নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে এই বাড়তি পাওনা কোনো কাজে আসছে না। 
এদিকে তীব্র সংকটের কারণে বাংলাদেশের বাজারে ডলারের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে নভেম্বরের শেষ নাগাদ এক ডলারের মূল্যমান ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ কারণে বাড়বে আমদানি ব্যয়। আর আমদানি ব্যয় বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে একই অনুপাতে। 
একাধিক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের ফলে বাজারে ডলারের দাম আরো বাড়বে। বিপরীতে কমবে টাকার মান। এতে আমদানি খরচের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। কমবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ফলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি বাড়বে বৈদেশিক দায়দেনা ও সরকারের খরচ। একই সঙ্গে কমে যাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ বাড়বে।
সূত্র জানায়, বাজারে ডলার কেনার ৫ থেকে ৬ ধরনের উপকরণ রয়েছে। উপকরণ ভেদে দামও ভিন্ন ভিন্ন। একই সঙ্গে ডলার বিক্রির উপকরণও রয়েছে ৪ থেকে ৫ ধরনের। এগুলোর দামও ভিন্ন ভিন্ন। দাম ভিন্ন হওয়ায় ডলার কেনার ক্ষেত্রে দামের পার্থক্য হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা। বিক্রির ক্ষেত্রে পার্থক্য আরও বেশি হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ডলারের দামের কোনো সমন্বয় নেই। একেক ব্যাংক একেক ধরনের দর নিচ্ছে। এতে আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও অন্যান্য গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে কেনার কথা ব্যাংকগুলোর। কিন্তু অনেক ব্যাংক ১২০ টাকা করেও কিনছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২২ টাকাতেও রেমিট্যান্স কিনছে। এ নিয়ে রপ্তানিকারকদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে। ছোট ব্যাংকগুলোতে দর বেশি হওয়ায় এখন ওইসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়ছে। কিন্তু যেসব ব্যাংকের বিদেশে বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে ওইসব ব্যাংকের দর কম হওয়ায় কারণে তাদের রেমিট্যান্স কমছে।
আইএমএফ বলেছে, ডলারের দামে এই বিশৃঙ্খলা রোধ করতে এর দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। ডলারের বিভিন্ন উপকরণ কমিয়ে বেচা ও কেনা এই দুই ধরনের দাম ঠিক করতে হবে। এতে সব খাতেই দাম বাড়বে। 
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যেখানে বেশী দাম পাচ্ছেন সেখান থেকেই রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশে। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার নিউইয়র্কে রিয়া মানি এক্সচেঞ্জ-এর রেট ছিল ডলার প্রতি ১২২ টাকা। সানম্যান গ্লোবাল এক্সপ্রেসের রেট ছিল ১২৪ টাকা ২ পয়সা। স্মল ওয়ার্ল্ড-এর রেট ছিল ১২১ টাকা ৯০ পয়সা। এর সঙ্গে রয়েছে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা। বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জের রেট ডলার প্রতি ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তারা দিচ্ছে ৫ শতাংশ প্রণোদনা। 
জ্যাকসন হাইটসে রেমিট্যান্স পাঠাতে আসা নাজনীন বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, ডলারের দাম বাড়লে খুব একটা লাভ নেই। কারণ দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। আগে স্বজনদের দুইশ ডলার পাঠালে সারা মাস চলতো। এখন চারশ ডলার পাঠাতে হচ্ছে। অথচ আগে ডলারের দাম কম ছিল। তারপরও সমস্যা হতো না। এখন ডলারের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে হু হু করে। 
প্রবাসী আশিকুর রহমান জানান, টাকার মান কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু দেশে উৎপাদিত সবজির দাম কেন চড়া? নতুন আলু উঠেছে। প্রতি কেজি আলুর দাম দেড়শ টাকা। আগের আলু কোনো সময়ই ২০-২৫ টাকার বেশী ছিল না। সেই আলু কিনতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। শাকসবজির বাজারেও আগুন। ডলারের দাম আরো বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কে জানেন।  
                           
                           
                            
                       
    
 
 


 ঠিকানা রিপোর্ট 
                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
                                                     
                                                
