দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ফাঁদে পড়ে গেছে। কার পাতা ফাঁদে কীভাবে যে তারা পা ফেলল, তা বুঝে ওঠার মতো প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী নেতৃত্বের অভাবও দলটিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কীভাবে এই করুণ পরিণাম থেকে দলটি পরিত্রাণ পাবে, তা-ও পরিষ্কার নয়।
বিএনপির অবস্থা এবং সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে অপরিপক্ব নেতৃত্বের মাশুল শঙ্কিত রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অপরিপক্ব তরুণ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত, কার্যকলাপের স্বাভাবিক পরিণতির পথ ধরেই হাঁটছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এই নেতৃত্ব যোগ্যতা প্রমাণের একটা সুযোগও দিয়েছে। নিজেকে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত রাখার হতে পারে এটাই শেষ সুযোগ।
তফসিল ঘোষণার পরই বিএনপির শতাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের ফাঁদে নেপথ্যে গভীর যোগাযোগ ও সমঝোতার ফলেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। তাদের সবাই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের পদাধিকারী। তবে সরকারের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার আঁধার কাটিয়ে একটা পথের সন্ধানও করে নিচ্ছেন তারা। তাদের কেউ কেউ হয়তো নির্বাচনে বিজয়ীও হবেন। নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিরাপদ নতুন দিনের সন্ধান এবং ভবিষ্যৎ গড়ার পথ করে দিতে পারবেন। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়ই বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক রয়েছেন। সরকার পতনের আন্দোলন এখন গতিহারা হওয়ায় বিপুলসংখ্যক কর্মী পথহারা হয়ে পড়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক সর্বশেষ অবস্থান তাদের পরিবর্তিত রূপেই প্রকাশ বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মহল মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে রাজনৈতিক সংলাপে বসে সংকট উত্তরণের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় বিএনপি সংলাপের ট্রেন মিস করেছে। যদিও বিএনপি ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শর্তসাপেক্ষে সংলাপের সমঝোতার কথা বলেছে। তবে জাতীয় পার্টি ও কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে।
নির্বাচন প্রতিহত করা যে বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না, দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষের কাছে তা-ও স্পষ্ট। বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতা বিএনপির নাম ব্যবহার না করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেছেন। শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও উল্লেখযোগ্য আসনে প্রার্থী দেবে। এসব দল মূল বিএনপির তেমন কোনো ক্ষতি করার মতো শক্তি অর্জন করতে পারবে না। তবে মূল বিএনপির নেতৃত্বের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা এবং আগামীতে সরকারি নির্যাতন-নিপীড়ন মোকাবিলার রাজনৈতিক, সাংগঠনিক মানসিক শক্তিও দলটির মাঠের নেতাকর্মীরা হারিয়ে ফেলেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও নতুন করে কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষে নয়, তাদের চাওয়া সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সে নির্বাচন তাদের গ্রহণযোগ্যতা পাবে নাÑসে ধরনের কোনো কথা, আভাস, ইঙ্গিতও দেয়নি। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে এ প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠেছে, তারা কি অদূরদর্শী নেতৃত্বের শিকার! পিটার হাসের কথার ফাঁদে পড়ে তারা পথহারা হয়ে পড়েছেন। নিজেদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিয়েই তারা শঙ্কিত। কোনো রকমে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার পর সরকার ও সরকারি দলের রোষানল থেকে তাদের কে রক্ষা করবে? আটক নেতারাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্তসাপেক্ষেই মুক্তি পাবেন। কেউ কেউ ছাড়া পেতেও পারেন। নেপথ্যে কথাবার্তা চলছে।



ঠিকানা রিপোর্ট


