দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ৭ জানুয়ারি নির্ধারিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এমনকি জাতীয় পার্টি পর্যন্ত নির্বাচনের সময় কয়েক দিন পেছানোর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বিএনপির অপেক্ষায় আছে এখনো। ২০ নভেম্বর একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি যদি এখন নির্বাচনে আসতে চায়, তাহলে তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করতে রাজি আছেন তারা। স্পষ্টতই তিনি নির্বাচনের সময় পরিবর্তনের ব্যাপারে একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের মূল তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া দেবে না। বরং আওয়ামী লীগ মনে করে, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন এক-দুই দিন পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এখন নির্বাচনের মনোনয়নের জমা দেওয়ার দিন ৩০ নভেম্বর। সেই তারিখটি কিছুটা পরিবর্তন করলেও করা যেতে পারে এবং অন্যান্য দিনগুলো সমন্বয় করা যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের ভোটের তারিখ পেছানো যাবে না। আওয়ামী লীগ মনে করছে, নির্বাচনের তারিখ পেছালেই দেশকে একটি সাংবিধানিক সংকটের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেটি সম্ভব নয়।
তবে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতা বলেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের দিক থেকে, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংলাপের উদ্যোগ নিলে তারা ভেবে দেখবেন। তবে তার আগে ঘোষিত তফসিল বাতিল করতে হবে, কারাবন্দী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দিতে হবে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিপূর্ণভাবে খুলে দিতে হবে এবং নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
এদিকে গত ১৯ নভেম্বর রোববার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির নেতাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব রেখেছেন রওশন এরশাদ।
বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই একটি নতুন সংসদ নির্বাচনের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতীয় পার্টির দুই পক্ষ যখন দেখা করেছে, তখন রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলেছেন। নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর কয়েকটা দিন হাতে রাখতে হয় নানা রকম বাস্তবতায়। বিশেষ করে, কোনো আসনে যদি গোলযোগ হয়, কোনো আসনে যদি ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো রকমের সমস্যা হয়, সেগুলো মিটিয়ে এবং নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচনকে যাচাই-বাছাই করে তার পরই গেজেট প্রকাশ করবে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হলে গেজেট প্রকাশের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন সময় লেগে যেতে পারে। এমনকি একটি উপনির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল। কাজেই জাতীয় নির্বাচনে সবগুলো আসনের গেজেট প্রকাশ করার করার বিষয়টির জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, গেজেট প্রকাশের পর নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা আছে। সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এরপর যে দল বিজয়ী হবে, সেই দলকে রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত লাগবে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে। তাই সরকার কোনো অবস্থাতেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের তারিখ পেছাতে রাজি নয়।
সরকারের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, তারা ভেবেছিলেন যে নির্বাচন ৩ বা ৪ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই চার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। চার দিন অনেক বেশি সময়। তবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে নির্বাচনের প্রচারণা পর্যন্ত সময় একটা বড় ধরনের সময় দেওয়া আছে। এই সময়টাকে আঁটসাঁট করা যেতে পারে এবং নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো যেতে পারে।
বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও সরকার বারবার তা প্রত্যাখ্যান করছে। পাশাপাশি সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টির পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। সারা দেশে আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ভাগিয়ে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলের উদ্বেগ ও আপত্তি উপেক্ষা করে ঘোষিত তফসিল বাতিল করে এবং নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি মেনে সরকারের দিক থেকে সংলাপের উদ্যোগ নিলে তাতে সাড়া দেবেন তারা। কারণ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করছে জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সংবিধানস্বীকৃত সব অধিকার আদায়ের জন্য। জনগণের ভোগান্তি রোধে আন্দোলনে বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এর পরও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ছাড় দিতে চাই আমরা।