Thikana News
৩১ অক্টোবর ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫


কোন পথে বিএনপি?

কোন পথে বিএনপি?



 
আওয়ামী লীগের পর নির্বাচনের রাস্তায় নামল জাতীয় পার্টিও। তারা ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রিও শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে তিনটি দলকে শর্তহীন সংলাপে বসতে আহ্বান করেছিল, তাদের মধ্যে দুটিই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনমুখী অবস্থান নিল। চিঠি পাওয়া আরেক দল বিএনপি এখনো তাদের দাবিতে অনড়। বিএনপির রাজনীতি এখন হরতাল আর অবরোধেই সীমাবদ্ধ। তবে হরতাল-অবরোধ ডাকলেও কার্যত ভূমিকায় মাঠে নেই বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করে ফেসবুকে ছবি প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার গাড়ি কম চললেও ঢাকায় গাড়ি চলাচল চোখে পড়ার মতো। বিএনপির দলীয় কার্যালয় টানা প্রায় ২৫ দিন বন্ধ। ঝুলছে তালা। রয়েছে পুলিশের কড়া পাহারা। তফসিল ঘোষণার দিন কয়েকজন নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটক করে।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে সহিংসতার পর থেকে প্রকাশ্যে দলটির তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সহিংসতার ঘটনায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা এখন কারাগারে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় এবার নির্বাচন করতে পারবেন না। এর মধ্যে খালেদা জিয়া বেশ কয়েক মাস ধরেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তারেক রহমান ২০০৭ সাল থেকেই অবস্থান করছেন লন্ডনে। সেখান থেকেই তিনি দেশের রাজনীতি পরিচালনা করছেন। বিএনপির যে নেতারা এখন কারাগারের বাইরে আছেন, তারাও প্রকাশ্যে আসছেন না। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। এই কর্মসূচিগুলোর ঘোষণা আসছে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে।
বিএনপি বলে আসছে, তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না। তাদের দাবি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হলে আগে সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এখন পর্যন্ত দলটির নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
এদিকে বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাইলে নির্বাচন কমিশন পুনঃ তফসিলের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা। ২০ নভেম্বর সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। তবে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক নেতা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের দিক থেকে, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংলাপের উদ্যোগ নিলে তারা ভেবে দেখবেন। তার আগে ঘোষিত তফসিল বাতিল করতে হবে, কারাবন্দী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতাদের মুক্তি দিতে হবে, কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিপূর্ণভাবে খুলে দিতে হবে এবং নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি অতীতে বহুবার নির্বাচন বয়কট করে শেষবেলায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বয়কটের ঘোষণা দিয়ে শেষ মুহূর্তে অংশ নিয়েছিল তারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার অতীতের মতো ঘটনা ঘটবে না। এবার তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। ২০১৮ সালের লজ্জার ভরাডুবির পর তারা শিক্ষা নেয়। দলটি এবার দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যত দিন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানবে, তত দিন তাদের কর্মসূচি চলতেই থাকবে।
সূত্র বলছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে দলের তৃণমূল এবং দায়িত্বশীল নেতাদের হাইকমান্ডের নতুন এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেতাদের যথাসম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে রাজপথে থাকার কথা বলা হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা, কর্মসূচি আগামী দুই সপ্তাহ টেনে নিয়ে গেলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে এ সময়ের মধ্যে কোনো সমঝোতামূলক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এতে করে পেছাতে পারে তফসিল।
দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র আরও বলছে, তারা আসলে এখন পর্যবেক্ষণে রয়েছে। কারা দলছুট হয়ে আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দেয়, কিংবা সরকার তাদের গ্রেপ্তারের সময়সীমা কত দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, সেগুলো দেখা হচ্ছে। শিগগিরই তারা অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেবে। প্রয়োজনে এক ব্যানারে আসারও চিন্তা করা হচ্ছে। তখন সব দল সবকিছু উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসবে। আপাতত তাদের টানা কর্মসূচি চলবে।
এদিকে দাবি আদায়ে বিএনপির চলমান কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে পালন নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসা, ঢাকায় মহাসমাবেশের আগে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার এমনকি লক্ষাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সফলভাবে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার অভিযান চললেও সব নেতাকর্মী তো গ্রেপ্তার হয়নি। তাহলে বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা কেন রাজপথে নেমে শক্তভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না, কেন ঝটিকা মিছিলে কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। জনমনেও উঁকি দিচ্ছে এমন প্রশ্ন। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের পরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। মহাসমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। পুরো বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধরনও সে অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী বন-জঙ্গলে যারা রাত কাটাচ্ছে, তারা অনেকেই পরিবারের কাছে আসতে পারছে না। লাখ লাখ মামলা নিয়ে কঠিন জীবন যাপন করছে। এ পরিস্থিতিতে এবং কর্মসূচিতে তারা আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
 

কমেন্ট বক্স