নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজা সংলগ্ন বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট মুনলাইট কাবার অ্যান্ড গ্রিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্ধারিত মূল্য অনুসরণ না করে মাথাপিছু মাত্রাতিরিক্ত খাবারের দাম নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী। তবে এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, গত ১৮ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় মুনলাইট রেস্টুরেন্টে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর লেখা ‘আমার ব্র্যাক-জীবন’ শীর্ষক গ্রন্থের ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফার্মাসিস্ট লিয়াকত হোসেন। সঞ্চালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের মুখপত্র, সংস্কৃতিজনসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধি অংশ নেন।
ইব্রাহীম চৌধুরী অভিযোগ করেন, অনুষ্ঠানে ৩০-৩৫ জন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাদের আপ্যায়ন করা হয়। কিন্তু রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাকে ৭২ জনের খাবার বাবদ ৩ হাজার ২৪০ ডলারের বিল প্রদান করেন। বিল হাতে পেয়ে তিনি হতচকিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সাকুল্যে ১৭ প্লেট। প্রতিটি প্লেট প্রতি তিনজনের জন্য। অতিথিরা সামনে থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মাত্রাতিরিক্ত বিল নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এত বিল কেন জানতে চাওয়ার পর ২৪০ ডলারের ডিসকাউন্ট দেওয়া হয় তাকে।
ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, অতিথিরা সামনে থাকায় ওই মুহূর্তে কথা না বাড়িয়ে তিনি বিল পরিশোধ করে চলে আসেন। ভুলে এমন বিল হতে পারে ভেবে পরে ফোনে রেস্টুরেন্ট মালিক আজিজুল এইচ চৌধুরী মাসুমের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বিল নেওয়ার কারণ জানতে চান তিনি। কিন্তু মালিকপক্ষের কাছ থেকে সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাননি বলে জানান ইব্রাহীম চৌধুরী।
তিনি বলেন, রেস্টুরেন্টটিতে ৫০ জন বসার ব্যবস্থা নেই। ধারণক্ষমতাও নেই এত লোকের। অথচ ৭২ জনের খাবারের বিল নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ চ্যালেঞ্জ করলে সেখানে সর্বোচ্চ ৫২ জনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কিন্তু সবাই তাদের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন না।
ইব্রাহীম চৌধুরী জানান, তার কাছ থেকে তিন হাজার ডলারের বিল নেওয়া হলেও কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। পরে রশিদ চাওয়া হলে হাতে লেখা একটি রশিদ দেওয়া হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করার পর রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ৫০০ ডলার ফেরত দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা এটা মানিনি। তিনি বলেন, আমি চাই না, একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হোক। কিন্তু মুনলাইট রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ যা করেছেন তা অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের আরো অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় আমি আমাদের পত্রিকায় নিউজ করতে পারতাম। যেহেতু আমরা নিজেরাই ভুক্তভোগী, এ কারণে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে নিউজ করিনি। তবে আমরা আইনের আশ্রয় নিচ্ছি। আর এ কারণে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে। ২০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ইব্রাহীম চৌধুরীর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে মুনলাইট রেস্টুরেন্টের আজিজুল এইচ চৌধুরী মাসুম ঠিকানাকে জানান, ইব্রাহীম চৌধুরীর কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো বিল রাখা হয়নি। বরং তাকে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পুরো সপ্তাহের মধ্যে প্রতি শুক্র ও শনিবার বেচাকেনা একটু ভালো হয়। যেহেতু তাদের বুকিং ছিল শনিবার, এজন্য শুক্রবার প্রথম আলোর একজন কর্মীর সঙ্গে বিলের ব্যাপারে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন যে বিল নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
মাসুম জানান, সাধারণ কাস্টমারদের প্লেট অনুযায়ী বিল করা হয়। যেহেতু প্রাইভেট পার্টি থাকলে সাধারণ কাস্টমার আসতে পারেন না, তাই প্রাইভেট পার্টির জন্য আমরা মাথাপিছু বিল করি। বরং প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কম বিল করা হয়েছে। তিনি জানান, ৭২ জনের জন্য ৪৫ ডলার করে ৩ হাজার ২৪০ ডলার বিল করেছি। এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ও অ্যাপিটাইজার, কোমল পানীয়সহ অন্যান্য খরচও যুক্ত ছিল। মাত্রাতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন আজিজুল এইচ চৌধুরী মাসুম।