কোনো কোনো সময় আসে, যখন নানাভাবে নানা দিক থেকে সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায়। এ রকম সময়ে এ রকম প্রশ্নও দেখা দিতে পারে, সব চ্যালেঞ্জ কি সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব? প্রকৃত গণতান্ত্রিক কোনো দেশের সরকারকে সাধারণত এ রকম কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় না। ওই রকম গণতান্ত্রিক দেশে যেকোনো চ্যালেঞ্জ সাধারণত সব দলকে মিলেই মোকাবিলা করতে দেখা যায়। তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রের চর্চায় সব রাজনৈতিক দলের সে রকম শিক্ষাই প্রকাশ পায়। মাত্রায় কমবেশি হলেও হতে পারে। আমাদের মতো দেশে জাতির সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ালে, সরকারও জাতীয় সমস্যা জাতীয়ভাবে সবাই মিলে সমাধান করতে আর কাউকে পাশে ডাকে না, বিরোধীরাও পাশে এসে দাঁড়ায় না। বরং সে রকম সময়ে সরকারকে আরও বেশি বিপদে ফেলা যায় কি না, সেই পথ খুঁজতে থাকে।
এর বহু দৃষ্টান্ত টানা যাবে। খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি। যত দুর্যোগ তত বিভক্তি। জাতির সামনে যত বিপদই আসুক, জাতীয় ঐক্য হবে না। সরকার কখনো কখনো নমনীয় ভাব প্রকাশ করলেও বিরোধী দল অনড়, অটল। বরং মনে করে, এই সুযোগ ফেলে দেওয়ার। তখন তারা আরও বেশি করে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করে। স্লোগানে শক্তি বেশি প্রকাশ পায়। এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত দেশের সাধারণ নির্বাচন। দেশের সাধারণ নির্বাচন বা সংসদ নির্বাচন এলে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য আরও অবশ্যম্ভাবী রূপে দেখা দেয়। বিরোধিতা ভয়ংকর রূপ নেয়। দেশজুড়ে অসন্তোষ, আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ শুরু হয়ে যায়। সেসবই শেষ নয়, জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমা, আগুন-সন্ত্রাস। সাধারণ মানুষের প্রাণ সংশয় ও দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। রাস্তাঘাটে আতঙ্ক দেখা দেয়। হামলা-ভাংচুরের ভয়ে জিনিসপত্রের সরবরাহের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। অর্থনীতিতে ধস নামে। জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। উৎপাদনে কুপ্রভাব পড়ে। মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। অর্থনীতিতে ধস, জনজীবনের কষ্ট বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মনকে কমই স্পর্শ করে।
রাজনীতি যে সবচেয়ে বড় সেবামূলক কাজ, এ কথা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা প্রমাণ করার কোনো তাগিদ বোধ করেন বলে মনে হয় না। অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য দেশসেবা বা জনসেবা নয়, তাদের মূল লক্ষ্য ব্যক্তিস্বার্থ। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতালাভ। বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, মানুষের জীবনে আতঙ্ক ততই ঘনিয়ে আসে। মানুষ ঘরের বাইরে পা রাখলেই আতঙ্ক, ঘরে ফিরে আসা যাবে কি না!
ডিসেম্বর মাস বাঙালির গৌরবগাথা বিজয়ের মাস। ৫২ বছর পার করে এসে বাংলাদেশের এই দুর্ভোগের অবসান ঘটুক। সকল স্তরের মানুষের মিলিত সংগ্রামের সুফল স্বাধীন বাংলদেশ। মুক্তিযুদ্ধে রক্তের স্রোতধারায় মিশে আছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের রক্ত। সাধারণ মানুষ আর এই অনৈক্য, হানাহানি দেখতে চায় না।
জাতীয় সংকটে জাতীয় ঐক্য দেখতে চায় মানুষ। আগুন নয়, হানাহানি নয়। ঐক্য এবং ঐক্য। যে ঐক্য আমাদের স্বাধীনতা এনেছিল, সেই ঐক্য আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আরও এগিয়ে নিকÑএই প্রত্যাশা সবার। ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।’