দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। মন্ত্রিসভাও সংরক্ষিত এমপি হতে গঠন করা হয়েছে। এবার সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনের পালা। আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন করতে হয়। ৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এসব আসনে সাধারণ আসনের চেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় দল বা জোট মনোনীত প্রার্থীরাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। যে কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীনেত্রীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। শুধু দলীয় নয়, এবার স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, অভিনেত্রী, উদ্যোক্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপিরাও পদ ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবিধানে জাতীয় সংসদের ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আছে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি ছয়জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিপরীতে একজন মহিলা সদস্য পাবে। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগ এবার ২২৩টি সাধারণ আসনের জন্য পাবে ৩৭টি সংরক্ষিত আসন। জাতীয় পার্টি বিজয়ী ১১ আসনের বিপরীতে পাবে ২টি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে তিনটি আসন জিতেছে। আওয়ামী লীগের এই শরিকেরা যৌথভাবে এলে তিনটির বিপরীতে একটি পাবে। আর স্বতন্ত্র ৬২ জন জোটবদ্ধ হলে পাবে ১০ আসন। স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ না হয়ে ছয়জন করে আবেদন করলে একটি করে আসন পাবে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অনুকূলে থাকা আসনগুলো জোটভুক্ত হবে নাকি আলাদা থাকবে, সেটি হিসাব-নিকাশের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। মনোনয়ন পেয়েও জোট বা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার পরেও যাদের নানা কারণে দলের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি, এমন নারীনেত্রীরা এগিয়ে থাকবেন সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের ত্যাগী ও নিবেদিত প্রয়াত নেতা-মন্ত্রীদের স্ত্রী-কন্যাদের যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, তারাও পেতে পারেন দলের সমর্থন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সমাজের বিশিষ্টজনদেরও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানিয়ে স্বীকৃতি দেবে আওয়ামী লীগ। বিবেচনায় এগিয়ে থাকবেন অভিনেত্রী-শিল্পী-ব্যবসায়ী-সমাজকর্মীসহ দলের প্রয়োজনে কাজ করা তারকারাও।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও তিন নেত্রীকে জোট ও শরিকদের জন্য আসন ছাড়তে হয়েছিল। তারা হলেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরুজা বারী ও গাইবান্ধা-২ আসনে মাহবুব আরা বেগম গিনি। সংরক্ষিত নারী আসনে তাদের এবার দেখা যেতে পারে। মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেত্রীরাও আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন দৌড়ে। তাদের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপি।
আলোচনায় আছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সরোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমীন সুলতানা লিলি। যুব মহিলা লীগের সাবেক দুই শীর্ষ নেত্রী নাজমা আক্তার ও অপু উকিল সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের আরও বেশ কিছু নেত্রী দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তারা চেষ্টা করছেন সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দলের মনোনয়ন পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। সংরক্ষিত নারী আসনের আলোচনায় তার নামও শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের মধ্যে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন, এমন নেত্রীদের মধ্যে মুন্নুজান সুফিয়ানের নাম রয়েছে আলোচনায়। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে হেরে যাওয়া দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সানজিদা খানমও চাইছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুর্দিনের ত্যাগী নেতাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের অনেকের নামও আসছে সংরক্ষিত আসনের এমপি পদের আলোচনায়।
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নাটোর-৪ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সুলতানা কামালের ভাতিজি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার আছেন আলোচনায়।
এ ছাড়া অভিনেত্রী তারিন জাহান, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখও আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের আলোচনায়। সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অভিনেত্রী তারানা হালিম, সাবেক সংরক্ষিত ও সংসদীয় আসনের এমপি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হওয়ার দৌড়ে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনাই বাছাই করবেন।