ঠিকানা রিপোর্ট 
ফোবানার সাবেক এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী এবং বেদারুল ইসলাম বাবলা সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সফর করেন। এই সফরে তারা কলকাতার অন্যতম উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গঙ্গা নদীর তীরে দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির এলাকায় যান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এ স্থানটি অন্যতম পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। সেখানে সফরে গিয়ে ফেসবুকে বেশকিছু ছবি পোস্ট করেন তারা। বর্ণনায় লেখেন, ‘মা গঙ্গা তোমায় প্রণাম’। এরপর ফেসবুকের এই স্ট্যাটাস নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে ফেসবুকে।
এই বিতর্কে গা ভাসিয়েছেন দেশ ও প্রবাসের বহু বাংলাদেশি। তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের বেশিরভাগই জাকারিয়া চৌধুরীর ফেসবুকে তীর্যক মন্তব্য করে বলেছেন, একজন মুসলমান হয়ে এ কাজটি করা তাদের ঠিক হয়নি। আবার অনেকে তাকে সমর্থন জানিয়ে ভুপেন হাজারিকার ‘গঙ্গা আমার মা’ গানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।
২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত ফেসবুকের ওই পোস্টে ১৮৪টি মন্তব্য করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু উল্লেখ্যযোগ্য মন্তব্য তুলে ধরা হলো।
আরকে লস্কর মিঠু লিখেছেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘গঙ্গা মা হবে কেন?’
এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, ‘প্রণাম শব্দ কী যুক্তিযুক্ত?’
অনিতা ইসলাম লিখেছেন, ‘এটা শিরক। আর শিরক যারা করেন, একমাত্র তাদেরকেই আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। মুসলমান যেমন অন্য ধর্মকে অবমাননা করেনা, তেমনি অনুকরণও করেনা।’
নাহিদ চৌধুরী মামুন লিখেছেন, ‘আপনি এবং বাবলা ভাই মুসলমান হয়ে এই কাজটি করেছেন দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। বাবলা ভাইও আলহাজ্ব বা হাজী। আল্লাহ আপনাদের উভয়কে ক্ষমা করুন। আমি দৃঢ়ভাবে এই পোস্টটি অপসারণ করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
নূরুল আফসার রাসেল লিখেছেন, ‘আপনি নিজেকে যতো বড় শিক্ষিত মনে করুন না কেন।
যদি কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা না থাকে তাহলে আপনি মুর্খ।’
রেজাউল করিম চৌধুরী লিখেছেন, ‘একজন মুসলিম হিসাবে আমার বিনীত অনুরোধ, দয়া করে এই পোস্টটি সরিয়ে দিন।’
অন্যদিকে আকবর হায়দার কিরণ লিখেছেন, ‘আপনার এই বিশেষ পোস্টিং দেখে খুব ভালো লাগলো। ভুপেন হাজারিকার সাথে অনেক চমৎকার সময় কাটাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো নি ইয়র্কে। আমরা কখনোই ধর্মান্ধ নই।’
মো. হামিদ লিখেছেন, ‘আমি দোষের কিছু দেখছি না।’
মোহাম্মদ আলম লিখেছেন, ‘যারা শিরকের কথা বলছেন তাদেরকে বলি, তিনি গঙ্গাকে মা বলেছেন, কিন্তু স্রষ্টা বলেননি। আমরা বাংলাদেশকে বাংলা মা বললে কি শিরক হবে?’
সুবল দেবনাথ লিখেছেন, ‘ যারা এই স্ট্যাটাসের সমালোচনা করছেন আপনাদেরকে বলছি, জননী, জন্মভুমি, দেশমাতৃকার কথা মানেন? না মানেন না? যদি না মানেন তাহলে আপনার সাথে কথা নেই।’
ইশতিয়াক রুপু লিখেছেন, ‘পোস্ট দেখে যত না অবাক বা আশ্চর্য হয়েছি, পাবলিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যবহৃত ভাষা ও মন্তব্য পাঠ করে মিশ্র অভিজ্ঞতা হচ্ছে। নদী সবার নিকট প্রিয়। আমার প্রিয় নদী সুরমা। যার তীর ঘেঁষা শহরে আমার নাড়ি পোঁতা। নিজের অনেক লেখা কবিতা বা স্মৃতি গল্পে প্রিয় নদীকে ভালবেসে অভিবাদন জানিয়েছি। রূপক অর্থে ভাষার ম্যাজিকে আকড়ে ধরেছি। সেখানে কেউ দোষের কিছু দেখেনি। নদীকে নিয়ে প্রেম বন্দনা লিখেছি। গীত রচনা করছি তাও ঠিক আছে। অভিবাদন বলুন আর স্যালুট বলুন কিম্বা প্রণাম, প্রয়োগের ভাষায় অর্থের কোন ভিন্নতা নেই। শুধুমাত্র একটি শারিরীক ভাষার ব্যবহার ছাড়া। আমি সরাসরি কোন সিদ্ধান্তে যাবো না। তবে দেশের রাজনৈতিক নেতারা যেখানে সমর্পন কিম্বা বিলিয়ে দেবার বেলা কৌশলী মৌখিক বা শারিরীক ভাষা ব্যবহার করেন। আপনারা দুজন উনাদের ফলো করতে পারতেন। গানের ভাষায় বলি- ‘দোষ না করিয়া হইলা বন্ধু দোষী, আজো মোরা খুঁজে বেড়াই, সওয়াব গুনাহ কোন কামে বেশি।’
গোপাল সান্যাল লিখেছেন, ‘ গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা। ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা-মেঘনা-যমুনা।’
এই বিতর্কের জেরে ফেসবুকে একটি ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘আজকে আমার একটা পোস্ট নিয়ে অনেকে অনেক রকম রিয়্যাক্ট করেছেন। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি- আমার মনে হয় আধুনিক সভ্যতার যুগেও আমরা এখনো অনেক ধর্মান্ধ রয়ে গেছি। ভূপেন হাজারিকার সেই গানটির কথা মনে হয় আমাদের কারো মনে নেই। গঙ্গাকে তিনি মায়ের সাথে তুলনা করেছেন। আর প্রণাম শব্দের অর্থ হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। প্রণাম শব্দের অর্থ হচ্ছে শ্রদ্ধা। গঙ্গাকে যদি শ্রদ্ধা করা হয় তাতে কি মানুষ নাস্তিক হয়ে যায়? এই ক্ষুদ্র বয়সে যতটুকু দেখেছি- যারা অতিমাত্রায় আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ করে তারা সবচেয়ে বেশি আকাম-কুকাম করে। গঙ্গা, মা, শ্রদ্ধা এই তিনটি শব্দের মধ্যে কোথায় ধর্মের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেলেন আপনারা? সবার আগে আমাদের মানুষ হওয়া অতীব জরুরি।’
