দুই কারণে শীর্ষে ঠিকানা

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৬:৫২ , অনলাইন ভার্সন
স্প্যাম ফোনের কথা এখন আগাম জানা যায়। স্ক্রিনে ভেসে ওঠেÑস্প্যাম। সুতরাং ধরো না। ধরিয়ো না। আজ সকাল (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে স্নো পড়ছে, সঙ্গে প্রবল বাতাস। এ দিনে বাইরে কেউ যায়? হাসি ও রুবাকে তো যেতেই হবে। ছুটি নেই। একজন জ্যাকসন হাইটস, আরেকজন ম্যানহাটন। বাসে, ট্রেনে। স্নো স্টর্মে বাসস্টেশনে যাওয়াটা আরেক সমস্যা। অবশেষে বউ-শাশুড়ি উবার ডেকে গন্তব্যে রওনা দিলেন। গভীর উদ্বেগের মধ্যে তাদের যাওয়াটা দেখলাম। কী আর করা! যা করার, লেপমুড়ি দিয়ে নিদ্রায় ঢলে পড়লাম। এ কাজে দিনরাত বলে কিছু নেই। যখন-তখন চলে যেতে পারি। কিছুটা ওষুধের প্রভাবও। ফোন বাজছে, বাজছেই, চেয়ে দেখি স্প্যাম। ঘুমাতেও দেবে না! কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও রিং। নাম ভেসে উঠল এম এম শাহীন। ফোনটা ধরে উঠে বসলাম।
Ñআমি তো জানি আপনি বাংলাদেশে। কবে এলেন?
Ñসপ্তাহ খানেক। কেমন আছেন, কী করছেন। ও, ঘুমাচ্ছিলেন! আজকের দিন তো ঘুমানোর। দুঃখিত ঘুম ভাঙালাম।
Ñআমার ঘুম! এই আছে এই নেই।
তারপর নানা বিষয়ে কথা হলো দুজনের। বললাম, ভালোই হলো, ঠিকানায় আরও বেশি সময় দিতে পারবেন। নিউইয়র্কের পত্রিকাজগৎ এখন বেশ বৈচিত্র্যময়। নতুন নতুন মুখ, নতুন পরিবেশনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। বেশ চ্যালেঞ্জিং। কমিউনিটি নেতৃত্বেও অনেক পরিবর্তন। প্রিন্টের চেয়ে অনলাইনের আকর্ষণ বাড়ছে দিনে দিনে।
শাহীন ভাই বললেন, আগামী সপ্তাহে ঠিকানা পঁয়ত্রিশ বছরে পদার্পণ করবে। আপনার অংশগ্রহণ থাকতে হবে।
Ñঅভিনন্দন। অবশ্যই থাকবে। জন্মে যেমন ছিলাম, পথচলায়ও তেমনি থাকব।
ঠিকানা ও আমার আমেরিকার বয়স সমান। নিউইয়র্কে আগমনের কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশিত হয় ঠিকানা। সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
আমি ওয়েস্টচেস্টারে বোনের বাড়িতে উঠেছি। একদিন মেট্রো ট্রেনে এলাম গ্র্যান্ড সেন্ট্রালে। প্ল্যাটফরমে উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটছি। এ সময় আমার নাম ধরে কে একজন ডাকলেন। তাকিয়ে দেখি আমাদের ওয়াকিল ভাই। জেনারেল ওসমানীর রাজনৈতিক দল জাতীয় জনতা পার্টির কর্মী। সাংসদ নূরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন। গ্র্যান্ড সেন্ট্রালে এক ফুড স্টোরের ম্যানেজার। বললেন, আমেরিকায় যখন থাকতে হবে, কাজ শুরু করে দিন। আমার স্টোরে।
পরদিন শুরু। অনভ্যস্ত কাজে ‘সিককল’ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হলো। কিছুদিনের মধ্যে এই চাকরির সমাপ্তি ঘটল, যখন ঠিকানার জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম পুরোপুরি। উন্নত জীবনের আশায় যা (সাংবাদিকতা) বিসর্জন দিয়েছিলাম দেশত্যাগের আগে, তাকেই আবার আলিঙ্গন করলাম। সে এক সুন্দর অনুভূতি, এক অনবদমিত নেশা। এর আগে ‘যে ঘরে ঠিকানার জন্ম’ শীর্ষক লেখায় শুরুর ইতিহাস কিঞ্চিৎ বলেছিলাম। মনে পড়ে, আমার অভিভাবক স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, স্ত্রী, দুটি সন্তান আছে আমেরিকায়, কমপক্ষে ৪০০ ডলারের চাকরি দরকার। কে শোনে এসব! ঠিকানার জন্মেই আমার আনন্দ। আমার ভবিষ্যৎ।
অবশেষে ঠিকানা তরতর করে উঠে গেল শীর্ষে, অভিষিক্ত হলো প্রবাসের সেরা পত্রিকার মর্যাদায়। বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। দিনে দিনে এর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে প্রবাসীও। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিশিগান, বাফেলো, টরেন্টো, মন্ট্রিয়েল, লন্ডন, প্যারিস, রোম, ভেনিস, সিডনিসহ আরও কিছু শহরে বাংলা মিডিয়ার প্রকাশনা আছে। এর মধ্যে নিউইয়র্ক, লন্ডন ও টরেন্টোর অবস্থান শীর্ষে। আরও শীর্ষে নিউইয়র্ক। আর একেবারে চূড়ায় আছে একটি, নাম তার ঠিকানা।
আমার ধারণা, এই সাফল্যের পেছনে প্রধান দুটি কারণের একটি হচ্ছে পাঠকের আকাক্সক্ষা পূরণ এবং অন্যটি হচ্ছে সঠিক নেতৃত্ব বা ব্যবস্থাপনা। পাঠকের কী চাহিদা, পাঠক কী চান, কী ভালোবাসেন তা অনুধাবন করা এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকা। কী ধরনের রিপোর্টিং, কী ধরনের কমার্শিয়াল কমিউনিটির উপকারে আসবে, তা নির্ধারণ করা। ইমিগ্রেশন, চাকরি, শিক্ষা, বৃত্তি, বাড়ি, সরকারি অনুদান, মূলধারার রাজনীতি, নিরাপত্তা, কর, ড্রাইভিংসহ শত আইটেম আছে, যেগুলো পাঠক পছন্দ করেন। এ নিয়ে ঠিকানা নিয়মিত এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন প্রকাশে যত্নবান ছিল। জনসম্পৃক্ততা বিষয়ে পত্রিকা খুব সচেতন। পাঠকের প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যেত তৎক্ষণাৎ।
কমার্শিয়াল প্রসঙ্গে ঠিকানার ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করা যায়। বাসা বা রুম ভাড়া, রুমমেট চাই, বাড়ি বা দোকান বিক্রি, কর্ম খালি, ড্রাইভিং, মুভিং, পাত্র-পাত্রী চাইÑএসবের জন্য পাঠক প্রথমেই খোঁজে ঠিকানা। আমি নিজে অনেককে পেয়েছি, যারা শুধু ক্লাসিফায়েডের জন্য ঘরে এই পত্রিকাটি আনেন।
নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনায় ঠিকানা কখনো আপস করেনি। যা-ই ঘটুক, পত্রিকা প্রকাশনার দিন সময়মতো স্ট্যান্ডে পৌঁছানো চাই। একইভাবে স্ক্যাজুয়েল অনুযায়ী ডাকযোগে সারা আমেরিকায় পত্রিকা পাঠাতে হবে। ক্রমাগত এই অভ্যাস পত্রিকার প্রতি পাঠকের আস্থা বাড়িয়ে দেয়।
ডাকযোগে ঠিকানার যত গ্রাহক, অনেক পত্রিকার মোট প্রচারসংখ্যাও ততটা নয়। আমি নিজে তার সাক্ষী। পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের স্বল্প মূল্যের সুবিধা পাওয়ায় অল্প খরচে সারা আমেরিকায় ঠিকানা পাঠানো সম্ভবপর হয়েছে। এই ডাক সুবিধাপ্রাপ্তি একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেকে উত্তীর্ণ হতে পারেন না। ঠিকানা পেরেছে। পত্রিকা যেদিন বের হয়, সেদিন সকল কর্মী ব্যস্ত থাকেন মেইল প্রস্তুতিতে। কেউ প্যাকেটে পত্রিকা ঢোকাচ্ছেন, কেউ অ্যাড্রেস লেবেল লাগাচ্ছেন, কেউ পুরছেন ব্যাগে। ডাকে আছে জোনিং সিস্টেম। কাজ কিছুটা টেকনিক্যাল। যিনি জানেন, তিনি সবকিছু তত্ত্বাবধান করেন। এভাবে হাজার হাজার পত্রিকা চারটার আগে পৌঁছে যায় পোস্ট অফিসে।
একদিনের কথা মনে পড়ে। মেইলিংয়ের কাজে ব্যস্ত সবাই। সাংবাদিক, কর্মচারী, কম্পিউটার অপারেটর। মালিকেরাও। হাতে হাতে তিন-চার ঘণ্টায় কাজটা সম্পন্ন হয়। এ সময় অফিসে ঢুকলেন ঢাকা থেকে সদ্য আসা এক সিনিয়র সাংবাদিক। সাংবাদিকদের এ কাজে দেখে তার চোখ ছানাবড়া। এক সাংবাদিকের (তিনি এখন কানাডায়) নাম ধরে ডাকলেন, ‘... এ কাজ তোমরা করছ?’
সেই সাংবাদিক উত্তর দিলেন, ‘... ভাই, একটু অপেক্ষা করুন, এরপর আমরা ঘর ঝাড়ু দেব, ডেটল দিয়ে ফ্লোর মুছব...।’ সিনিয়র সাংবাদিক অপেক্ষা না করে দ্রুত অফিস ত্যাগ করলেন। পরে শুনেছি, চাকরির আশায় তিনি এসেছিলেন। সে আশা ত্যাগ করে দেশে ফিরে যান। ঢাকা ও নিউইয়র্কের পার্থক্য যারা বোঝেন, তাদের জন্য কাজ করা সহজ হয়। এখানে কোনো আব্দুল নেই, নিজের চা নিজে বানিয়ে বা কিনে খেতে হয়।
নেতৃত্ব প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ টানব। নব্বই দশকের প্রথম ভাগে এস্টোরিয়ায় রাস্তাঘাটে দিনে-দুপুরে ডাকাতি, রাহাজানি, হাইজ্যাক, হামলা, মারধর মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। ভয়ে মানুষ বাইরে বেরোতে পারে না। এ রকম এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে হ্যামিলনের বংশীবাদক হিসেবে হাজির হন ঠিকানার সম্পাদক এম এম শাহীন। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এস্টোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংঘবদ্ধ করেন। পিএস ১৭ স্কুলে   পুলিশ ও হাজারো জনতার সভা হয়। পুলিশ জনগণকে আশ্বস্ত করে, অভয় দেয়। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির ব্যবস্থা করে। এরপর এই ক্রাইম ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে। মানুষ নিঃশ্বাস ফেলে স্বস্তি ও শান্তিতে। এর সুফল ভোগ করে ঠিকানা।
এ লেখা শেষ করার আগে ঠিকানায় আমাদের এক সহকর্মীর কথা উল্লেখ করব। গত সপ্তাহেও তাকে নিয়ে আলাপ করেছি আবু তাহের (বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভি) ও আমি। মূলত তিনি একজন প্রকৌশলী। দু-চার প্যারা টাইপ ও গল্পসল্প করে কিছুটা সময় আমাদের সঙ্গে কাটান। আমেরিকায় তার বৈধতা ছিল না। খুব সৎ ও পরহেজগার। মুখে সব সময় হাসি। একদিন অফিসের এক টেবিলে ফোন বাজছে। সেই টেবিলের অধিকারী তাকে অনুরোধ করলেন, ফোনটি ধরুন, আমাকে কেউ চাইলে বলবেন অফিসে নেই। ফোন ধরলেন, অপর প্রান্ত টেবিলের ভদ্রলোককেই চাইল। প্রকৌশলী সাহেব কখনো মিথ্যা বলেন না। এখন কী করবেন? মুহূর্ত চিন্তা করে বললেন, দুঃখিত, এই উত্তর আমি দিতে পারব না। আমি আরেকজনকে দিচ্ছি বলেই পাশের এক সহকর্মীর কাছে ফোনটি হস্তান্তর করলেন। সবচেয়ে অবাক ঘটনা ইমিগ্রেশনে। তার বন্ধুবান্ধবের অনুরোধে অ্যাসাইলাম পিটিশন সাবমিট করা হয়েছে ইমিগ্রেশনে। শুনানির দিন জজকে তিনি বললেন, এই পিটিশনের বিষয়গুলো সত্য নয়। আশ্রয় মঞ্জুর হয় বলে দরখাস্তে মিথ্যা বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এর কোনোটাই সত্য নয়। এরপর জজের কী করা থাকতে পারে?
এখন তিনি কোথায় আছেন, জানি না। কেউ কেউ বলেন কানাডায়। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041