মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অদম্য রাফছানের দেশসেরা হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশ : ১২-০৩-২০২৩ ০৭:৪৯:৩৮ পিএম , অনলাইন ভার্সন
রাফছান জামান। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করেছেন। দুটিতেই পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। ছোটবেলা থেকে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রাখা রাফছান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় করেছেন বাজিমাত। ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পাওয়ায় তার মাথায় উঠেছে দেশসেরা হওয়ার মুকুট।

এ কারণে ১২ মার্চ (রবিবার) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের কে ব্লকের রাফছানের সুনসান বাসায় হঠাৎ উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মিষ্টি ও ফুল হাতে ছুটে আসছেন আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বাসায় যে আসছেন তাকেই হাসিমুখে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন রাফছানের বাবা এ কে এম সামশুজ্জামান। তার চোখে আজ আনন্দের অশ্রু। খুশিতে তিনি যেন আত্মহারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাফছানের বাবা সিটি গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (শিপিং) হিসেবে কর্মরত। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রাফছান দ্বিতীয়। বড় বোন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আর্কিটেক্ট বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেছেন। তিনি স্নাতকে দ্বিতীয় হয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড মেধাবী রাফছান। পড়াশোনা ছাড়া তার কোনো ভাবনা ছিল না। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তিনি নিজেও কিছুটা অবাক হয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম আমি নিজেও অবাক হয়েছি। কারণ এ বছর প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছিল। তারপরও আমি নিজে এতোটা প্রত্যাশা করিনি। আমার মনে হয়েছিল বাংলাদেশে আমার চেয়ে অনেক ভালো স্টুডেন্ট আছে। যাই হোক প্রথম হয়ে অনেক ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, ভালো ফলের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারপর আমার মা-বাবা। তারা অনেক দোয়া করেছেন। এছাড়াও যারা শিক্ষক ছিলেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

পড়াশোনার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাফছান বলেন, এক্ষেত্রে আমার বিশেষ কিছু ছিল না। কলেজ লাইফের প্রথম থেকে আমি মেডিকেলের যেসব সাবজেক্ট সেগুলো ভালোভাবে পড়েছি। কোনো সময় নষ্ট করিনি। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।

দিনে কতো ঘণ্টা করে পড়েছেন জানতে চাইলে বলেন, নির্দিষ্ট সময় হিসেব করে পড়ালেখা করিনি। তবে ঘুমানো এবং খাওয়া-দাওয়া বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাকিটা সময় পড়ালেখা করেছি।

রাফছান বলেন, স্মার্টফোনের প্রতি আমার কোনো আসক্তি ছিল না। আমি তো ক্যাডেট কলেজে ছিলাম। সেখানে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যায় না। যে কারণে আমি এসব থেকে বেশ কিছুটা সময় দূরে ছিলাম। ক্যাডেট কলেজ থেকে আসার পর যে সময়টা পেয়েছি, আড়াই মাস বা তিন মাস, ওই সময়ে পড়াশোনার ব্যস্ততার কারণে ডিভাইস খুব দরকার ছাড়া ব্যবহার করতাম না। যেটুকু ব্যবহার করেছি পড়ালেখার উদ্দেশ্যেই করেছি। কোচিং থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্টস বা ফাইল পাঠানো হতো, এগুলো ডাউনলোড করে পড়েছি। এছাড়া মোবাইলে মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি।

বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ডিভাইসগুলো চাইলে ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে বর্তমানে তরুণরা অনেকে ভালোর চেয়ে খারাপ কাজে এসবের ব্যবহার করছে। যে কারণে আমার পরামর্শ হবে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে যতটুকু দূরে থাকা যায় ভালো হবে।

কোথায় কোচিং করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ক্লাসসহ রেটিনার চট্টগ্রাম শাখায় সম্পূর্ণ কোর্স করেছি। উন্মেষ কোচিংয়ে শুধুমাত্র মডেল টেস্ট দিয়েছি।

ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে পড়ালেখার ইচ্ছা আছে জানতে চাইলে রাফছান বলেন, মেডিকেল পড়ার সুযোগ পেয়েছি এটি অনেক বড় বিষয়। ডাক্তারির মধ্যে অনেক ভালো বিষয় আছে। তবে আমি নিউরোসায়েন্স বা নিউরোলজি নিয়ে পড়তে চাই।

রাফছানের বাবা একেএম সামশুজ্জামান বলেন, রেজাল্ট আমি এখনো দেখিনি। সবার কাছ থেকে শুনেছি। আমি অনেক খুশি। আমরা এতোটা আশা করিনি। কারণ পরীক্ষা দিয়ে এসে খুব একটা খুশি ছিল না এবং একটু হতাশ ছিল। তারপরও দেখলাম সে প্রথম হয়েছে।

ছেলের বিষয়ে সামশুজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকে রাফছান পড়ালেখার বিষয়ে খুব সিরিয়াস ছিল। রেজাল্ট একটু এদিক-সেদিক হলে মন খারাপ করত। যেটা পড়তো খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করত। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে রেফারেন্স বই পড়ত। যখন সে ক্লাস সেভেনে ছিল, তখন থেকে কলেজের বই নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করত। আমরা একটু তখন বকাও দিতাম। ছোটবেলা থেকে সে গণিতে খুব ভালো ছিল এবং সে মুখে মুখে বলে দিত। এবারও সে গণিতে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।

তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে তার মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল। সে পড়াশোনার কাজ ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহার করেনি।

আজ ১২ মার্চ (রবিবার) দুপুরে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন রাফছান জামান। তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৪ দশমিক ২৫। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দিয়েছেন।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ জন। পাস করেছেন ৪৯ হাজার ১৯৫ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। পরীক্ষায় সর্বমোট পাসের মধ্যে ছেলে ২০ হাজার ৮১৩ জন ও পাসের হার ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ। মেয়ে পাস করেছেন ২৮ হাজার ৩৮১ জন ও পাসের হার ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078