কেমন কাটল ওদের ঈদ

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৩ , অনলাইন ভার্সন
ঈদ মানেই একটা অন্য রকম ভালো লাগা। নতুন জামা, নতুন জুতো, ঘর সাজানোর জিনিস, হরেক রকম খাবার, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, পার্ক, রেস্তোরাঁ, চিড়িয়াখানা ভ্রমণ, বাড়িতে অতিথিদের সরগরম, সর্বোপরি নিজ পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে খাওয়াদাওয়া, আনন্দ, সিনেমা দেখা, সুন্দর একটা সময় কাটানো। ছোটবেলা থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত এ রকমই আমরা দেখে এসেছি। কি দেশে, কি বিদেশে ঈদ আমরা উদ্্যাপন করি মনে অনেক আনন্দ ও উদ্দীপনা নিয়ে। ঈদ আমরা উদ্্যাপন করি সবার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।
কিন্তু এমনটা না হয়ে যদি অন্য রকম হয়। ঈদের আনন্দ যদি হারিয়ে যায় লাশ আর ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে। চারপাশের পরিবেশটা যদি হয়ে যায় মৃত্যুপুরি। আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভরা। সারি সারি লাশের মাঝে যদি মানুষ খুঁজে বেড়ায় তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান। এমনটা ভাবতেই গায়ের মধ্যে কাঁটা দিয়ে ওঠে। গিলতে গেলে গলার ভেতর খাবার আটকে যায়। এমন ঈদ তো আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। অথচ বাস্তবে এমনটাই হলো।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, মুসলমান-নিধনের প্রক্রিয়া চলছে, সারা দুনিয়া সেটা দেখে হতভম্ব, তাজ্জব, বিস্মিত। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরগুলো পড়ে এবং ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে চোখের পানি আটকে রাখা যাচ্ছে না। নিষ্পাপ, নিরপরাধ শিশুদের কান্না ও কষ্ট আর সহ্য করা যাচ্ছে না। যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের হৃদয় বিচলিত না হয়ে পারছে না। একুশ শতকে বসে এটা কী করে সম্ভব? পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত আর শক্তিশালী দেশ কেন চুপ করে বসে আছে? তাদের আয়ত্তের ভেতর এই যুদ্ধকে থামানো কোনো ব্যাপারই নয়। তবু তারা নিশ্চুপ।
পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী দেশে আমি বসে আছি। গত সাত মাস ধরে এই যুদ্ধ দেখছি। দিনের পর দিন দেখে চলেছি কেমন করে বড় বড় প্রভাবশালী দেশগুলো ও তাদের নেতারা মিটিং, আলোচনা, আর জরুরি কার্যক্রম বাতলাচ্ছে। তবু যুদ্ধ থামছে না। অথবা তারা থামাতে চাইছে না। যুদ্ধ বন্ধের কোনো কথা তাদের মধ্যে এগোচ্ছে না। এই যুদ্ধে কে ঠিক, আর কে বেঠিক, সেটি আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। কে যুদ্ধ আগে শুরু করেছে আর কে পরে, সেটা নিয়েও আমি কিছু বলব না। কোনো রাজনৈতিক আলোচনা আমার লেখার প্রতিপাদ্য নয়।
আমি শুধু লিখতে চেয়েছি, গাজা উপত্যকার ওই মানুষগুলো যারা এখনো বেঁচে আছে, তাদের ঈদটা কেমন কাটল? আমি নিজেও জানি না তাদের ঈদটা কেমন কেটেছে। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ঈদের দিন তারা কেমন দোয়া করেছে। একই পৃথিবীতে বসে আমাদের বাচ্চারা ঈদের দিন নতুন কাপড় পরেছে, ঈদের জামাতে শরিক হয়ে কোলাকুলি করেছে, বাড়িতে বিশেষ খাবার খেয়েছে। আর ওই বাচ্চাগুলো কেঁদে কেঁদে ফিরেছে তাদের মা-বাবাকে খুঁজে, একটু খাবারের অন্বেষণে, একটু নিরাপত্তা আর আশ্রয়ের তাগিদে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। ওদের হেলিকপ্টারগুলো যখন আকাশ থেকে বাক্সে ভরা খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসাসামগ্রী ড্রপ করে, বাচ্চাগুলো দৌড়ে সেগুলো ধরার চেষ্টা করে। ওই বাচ্চাগুলো অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতায় শামিল হয়ে কে কার আগে পৌঁছাবে, সেই চেষ্টায় মত্ত থাকে। যারা প্রাণপণে দৌড়ে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে পারে, তারা ত্রাণের বাক্স বা বস্তা হাতে পায়। আর সেই আনন্দ, আমাদের সাজানো ড্রইংরুমে বসে ঈদের সেমাই খাওয়ার আনন্দের চাইতে অনেক বেশি। যখন মানুষের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার পথে যায়, তখন ধর্মীয় রীতিনীতি বা ধর্মীয় উৎসব উদ্্যাপনের উচ্ছ্বাস ফিকে হয়ে যায়।
গাজা উপত্যকার শতকরা ৮০ ভাগ জনসংখ্যা অর্থাৎ প্রায় আড়াই মিলিয়ন মানুষ এখন উদ্বাস্তু। দুর্ভিক্ষ ওদের দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত, উঁকিঝুঁকি করছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য ওরা মাঠের ঘাস, আগাছা সেদ্ধ করে খাচ্ছে। অথবা পশুপাখির খাদ্য পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগযোগ করছে। ক্যানের খাবার পাওয়া গেলেও বাজারে চড়া মূল্যে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে, যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। ইট, পাথর, কংক্রিট আর হাড়-খুলির ধ্বংসস্তূপের পাশে বসেই তারা ঈদের নামাজ পড়েছে। এ যেন প্রতিদিনকার বাস্তবতা। এ যেন ওদের অমোঘ নিয়তি।
সারা পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠী এক হয়ে ওদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। অর্থ, সেবা, প্রার্থনা দিয়ে চলেছে। বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং তাদের ত্রাণকর্মীরা অবিরাম কাজ করে চলেছে। তবে অসহায় মানুষগুলোর কাছাকাছি পৌঁছাতে এখনো অনেক সময় বাকি। আমেরিকাবাসী মুসলিম ও আরব জনগোষ্ঠীর লোকেরা এবার কোনো ঘটা করে রমজান বা ঈদ পালন করেনি। বাহারি পোশাক বা নিত্যব্যবহার্য জিনিস কেনার প্রতি তাদের কোনো ঝোঁক ছিল না। কেউ কেউ পুরো রমজান মাসে কোনো ইফতার পার্টিতে শামিল হয়নি। শুনেছি, আমাদের বাংলাদেশে, ছোট ছোট স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে ওদের সাহায্যে দান করছে। আহা, শিশুদের জন্য শিশুদের কী মায়া, কী উদারতা। এটাই বুঝি প্রকৃত ঈদ।
ওদের চোখে-মুখে ঈদের কোনো আনন্দ ছিল না। ছিল না উৎসব উদ্্যাপনের ঘনঘটা। নিজের দেশে বড় হওয়ার অধিকার নেই ওদের। নেই জীবনকে গড়ে তোলার নিশ্চয়তা। আমাদের মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় আনন্দের উৎসব ঈদের অর্থ ওদের কাছে আলাদা। ওদের ঈদটা হয়েছে শুধু নামেমাত্র। ঈদের দিন সকালে ওরা নামাজ পরে ভেবেছে, আমি আর কত দিন বাঁচব? আমার পরিবারকে কি আমি আর কোনো দিন দেখতে পাব? ইতিহাস কি বদলে দেবে তার বিবরণ? সময় কি পাল্টে দেবে ফলাফল? ওদের ঈদ কেটেছে ক্ষুধা, গুলি আর বোমা হামলাকে সাথি করে।
লেখক : ব্লগার, টেক্সাস
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041