যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে এক হবে ভারত-চীন-রাশিয়া?

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১০:৪২ , অনলাইন ভার্সন
ভারতে চলছে লোকসভা নির্বাচন। বিশ্বের জনবহুল এই দেশটির নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। কারণ বৈশ্বিক পরাশক্তি হয়ে উঠতে থাকা ভারতের নেতৃত্বে কে আসছেন, তার ওপর নির্ভর করছে বিশ্ব ভূরাজনীতির নানা সমীকরণ।
পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তিধর অনেক দেশই ভারত তথা দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাশে চায় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এই তালিকায় রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি রয়েছে চীনও। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির দ্বন্দ্ব। তা সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর নির্ভর করছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্বার্থ। কিন্তু ভারতকে কেন পাশে চায় দেশগুলো? এখানে কী স্বার্থ তাদের?  
মোদি, পুতিন ও শি’কে কেন প্রয়োজন বিশ্বের? : বিভিন্ন জরিপ ও বিশ্লেষকদের আভাস, ভারতে আবারও ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদি। বিজেপির বিরুদ্ধে মুসলিম বিদ্বেষের অভিযোগ থাকলেও বিশ্বে মোদির ভালো ভাবমূর্তি রয়েছে। 
তার আমলে ভারতের অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত অনেক সাফল্য হয়েছে বলে মনে করেন অনেক ভারতীয়ও। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন মোদি। 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনেক নেতার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছেন মোদি। 
এমনকি মিশর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মুসলিম দেশের সঙ্গেও সম্পর্কোন্নয়ন করেছে তার সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বৈশ্বিক নেতৃত্ব হয়ে ওঠা ভারতকে কাছে টানা এখন অনেকের জন্যই লাভের। 
শুধু তাই নয়; আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এখন মোদি, পুতিন ও শি’কে প্রয়োজন। কিন্তু কেন? কারণ, বিশ্ব এখন এমন এক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে যেখানে মার্কিন সাম্রাজ্য পতনের দিকে। বিশ্ব ব্যবস্থা এখন বহুমুখীতার দিকে যাচ্ছে, যেখানে কোনো একক দেশ নয়, অনেক দেশ ও অঞ্চলের হাতে ক্ষমতা থাকবে। 
বহুকাল ধরেই পৃথিবীজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন সাম্রাজ্য অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ডলারের আধিপত্যের অবসান, যার ওপর নির্ভর করে মার্কিন সমৃদ্ধি ও অগ্রাধিকারের বিষয়টি। অন্যদিকে চীনের উত্থান ঘটছে। মার্কিনিরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তারা সবার থেকে আলাদা- এসব কথা এখন আর ধোপে টিকছে না। 
বিশ্লেষকদের মতে, তাদের সাম্রাজ্যবাদের সময় ফুরিয়ে আসছে। ডলারের আধিপত্য কমে যাওয়া থেকে বিষয়টি অনেকটা অনুমেয়। গত দুই দশকে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রায় ডলারের শেয়ার ৭২% থেকে কমে ৫৮% হয়েছে। 
তবে নিজেদের আধিপত্য কমুক তা অবশ্যই চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দেশটি। আর এই কারণেই ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র।
একই কারণে গাজায়ও মার্কিন মদদে চলছে গণহত্যা। যার উদ্দেশ্যই হলো আঞ্চলিক যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা এবং ইরান ও তার মিত্রদের কোণঠাসা করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো, জাপান ও ফিলিপিন্সের মতো এশিয়ার দেশগুলোকে ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো। এমনকি ভারতকেও প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করা। 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী ইস্যুতে কানাডা-ভারত দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নয়াদিল্লিকে সমর্থন দেয়া ভারত সরকারের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক দরকষাকষির একটি কৌশল। যে সময় পশ্চিমা আধিপত্য শেষ হয়ে আসছে, বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থার উত্থান ঘটছে; সেই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ভারত স্বাধীন পথ অনুসরণ করবে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বার্তা দেয় নয়াদিল্লি। 
ঠিক এখানেই ভারতকে প্রয়োজন চীন ও রাশিয়ার। মার্কিন সাম্রাজ্যকে টেক্কা দিতে অন্যদিকে গ্লোবাল সাউথকে নেতৃত্ব দিতে একাট্টা প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটি। 
পাল্লা ভারী করতে ভারতকে জোটে ভেড়ানো উভয় দেশের জন্যই লাভের। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। নয়াদিল্লি-মস্কো-বেইজিং এক হলে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না বলেই মনে করা হয়। ভারতও সম্প্রতি রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে।   
মোদি-পুতিনের ভূরাজনৈতিক কৌশল : রাশিয়ার ব্রিকস সম্প্রসারণ নীতি। বর্তমানে এই জোটের প্রধান হিসেবে কাজ করছে রাশিয়া। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে ব্রিকস সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিকল্প শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় মস্কো। অবকাঠামোগত বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও অপার সুযোগ রয়েছে এখানে। চীন-ভারতও ব্রিকসের সদস্য। বিশ্লেষকদের মতে, আগামীতে প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্যে চীন ও ভারতের সঙ্গে কাজ করছে রাশিয়া। বিশ্বে এখনো প্রযুক্তির জোরে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতে তেল বিক্রি থেকে শুরু করে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অধীনে থাকা ভারতীয় স্টার্টআপগুলোতে রাশিয়ার অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। মস্কো অবশ্যই সেই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না।
পুতিনের দিকে ঝুঁকলেও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে খুব একটা বনিবনা নেই নয়াদিল্লির। তবে, নিজ স্বার্থ বিবেচনায় এই দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভবিষ্যতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দেখা যেতে পারে রাশিয়াকে- এমন আভাসও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য এমনটা হলে চীন-ভারত উভয়ের জন্যেই সুবিধা। 
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হলো বহুমুখী। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন তাদের প্রধান লক্ষ্য। রাশিয়া ও চীন যদি একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে, ভালো বন্ধু হতে পারে; তাহলে ভারত কেন এই জোটে যুক্ত হতে পারে না? বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কোন্নয়ন হলে কিছু সুবিধাই আছে। 


 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078