নীতি ও নৈতিকতা

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ১০:৪৬ , অনলাইন ভার্সন
নীতি হলো নিজের বিবেক দ্বারা জাজমেন্টের রায়কৃত চিন্তা-চেতনার ফলকে কর্মে বাস্তবায়ন করা। আর নৈতিকতা হলো নীতিকে নিজ অন্তরে লালন করা। প্রকৃতির কাছে নেই কোনো ক্ষমা, কাঁদাবে কোনো একদিন তুমিও, কাউকে কাঁদিয়ে যতই হাসো না কেন! আপন হাতেই বাজবে তার প্রতিশোধের বীন। আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর। আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর। হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান। বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
নীতি : বড়লোক হয়েও থাকে গরিবের পরিচয়, যদি কৃপণের মতো আচরণ পাওয়া যায়। সুন্দরী না হয়েও সুন্দর হওয়া যায়, যদি সুন্দর একটা মন গড়া যায়। মন ভালো হলেও থাকে খারাপ পরিচয়, যদি রাগ না কমানো যায়। ভালো কথা বললেও বাচালই বলা যায়। চোখের দৃষ্টিকে কুদৃষ্টিই বলা যায়, যদি মেয়েদের দেখলে সংযত না থাকা যায়। টাকা উপার্জন করলেও অভাবীই বলা যায়, যদি যথাস্থানে খরচ না করা যায়।
আমরা সবাই পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়েই অন্যের পাপ মাপি! অন্তঃসারশূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয় না, মলয় পর্বতের সংসর্গে বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না। যত দিন মানুষ অসৎ থাকে, তত দিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে ওঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না। মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যেই ব্যবহারটা করে, সেটাই তার আসল চরিত্র। অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র বেদনা ভালো। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।
সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। সর্বদা সত্য বলিবেন। এভাবে আপনি কী বলেছিলেন, তা মনে রাখতে হবে না। এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে। সত্য কখনোই অবাঞ্ছিত মনে প্রবেশ করে না। সত্য এত বিরল যে এটি জানাতে আনন্দিত হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধগুলো সংঘটিত হয় কলম দিয়ে অথচ মানুষ গালি দেয় অস্ত্রকে। সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়।
মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য বলে মনে হয়। সত্য প্রচার করুন এবং ভয়ে চুপ থাকবেন না। রাগকে শাসন না করলে রাগই সম্পূর্ণ মানুষটিকে শাসন করে। নৈতিকতা হলো জিনিসগুলোর ভিত্তি এবং সত্যই সমস্ত নৈতিকতার উপাদান। পৃথিবী সত্যের শক্তি দ্বারা সমর্থিত; এটি সত্যের শক্তি, যা সূর্যকে উজ্জ্বল করে এবং বাতাসকে উড়িয়ে দেয়; নিশ্চয় সমস্ত কিছু সত্যের ওপর ভরসা করে।
সত্যকে স্বীকার করতে শক্তি ও সাহস লাগে। অর্ধেক সত্য প্রায়ই পুরো মিথ্যাচার হয়। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক। যেই দেশে দেশপ্রেমিকের চেয়ে জ্ঞানীগুণী বেশি জন্মায়, সেই দেশে শান্তির চেয়ে অশান্তিই বেশি থাকে। মহত্ত্বের সন্ধান করবেন না, তবে সত্যের সন্ধান করুন এবং আপনি উভয়কেই পাবেন। যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সঙ্গে লড়াই করা কীভাবে শিখবে? যারা পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তার সন্তানকে ডোবায় নামতে দেন না, কীভাবে সে সন্তান আটলান্টিক পাড়ি দেবে?
একবার আপনি ভয়কে প্রত্যাখ্যান করলে, আপনি সত্যকে গ্রহণ এবং প্রতিফলিত করার জন্য নিখুঁত প্রার্থী হয়ে উঠবেন। আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। তারপর সেই মানুষকে ভয় পাই, যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না। সত্য সূর্যের মতো। আপনি কিছু সময়ের জন্য এটি বন্ধ করতে পারেন, তবে এটি আর যায় না। বাঙালি একশ ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হলেই বাঙালিকে পুরস্কার দেওয়া উচিত। তোমার এক বন্ধুর সঙ্গে অন্য কোনো বন্ধুকে পরিচয় বা বন্ধুত্ব করিয়ে দিলে মানে দুই বন্ধুকেই হারিয়ে ফেললে। একসময় দেখা যাবে তোমার ওই দুই বন্ধু একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেছে আর তুমি দুজনেরই শত্রু হয়ে গেছ।
সত্য হলো মশাল, যা কুয়াশার মধ্য দিয়ে তা সরিয়ে না দিয়ে আলোকিত করে। সৎ লোক সাতবার বিপদে পড়লে আবার ওঠে কিন্তু অসৎ লোক বিপদে পড়লে একেবারে নিপাত হয়। দলের সততাই দলের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে। সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে কথা বলে, সে ব্যক্তিত্বহীন। একসময় বিত্তশালীরা কুকুর পুষত, এখন মিডিয়া পোষে। ভীরুরা মরার আগে বারে বারে মরে। সাহসীরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে। সত্যি বলার অভ্যাস থাকলে তোমাকে কিছু মনে রাখতে হবে না। পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে কুঁড়েঘরে থাকাও ভালো, অতৃপ্তি নিয়ে বিরাট অট্টালিকায় থাকার কোনো সার্থকতা নেই।
আগে নিজের চরিত্র ঠিক না করে প্রগতিশীলতা দেখানো মানে ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সততা মাথায় করে থাকলেই অসততা নির্ভীক হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। যা তুমি দেখাও, তার চেয়ে বেশি তোমার থাকা উচিত। যা তুমি জানো, তার তুলনায় কম কথা বলা উচিত। যে ব্যক্তি ছোট বিষয়ে সত্যের প্রতি অসতর্ক, তাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ^াস করা যায় না। একদল অসৎ লোকের চেয়ে একজন সৎ লোক অনেক বড়, একদল অযোগ্য লোকের চেয়ে একজন যোগ্য লোক অনেক বড়, একদল অলস লোকের চেয়ে একজন কর্মঠ লোক অনেক বড়। প্রত্যেককে বিশ্বাস করা বিপজ্জনক, কিন্তু কাউকে বিশ্বাস না করা আরও বেশি বিপজ্জনক।
সত্যকে ভালোবাসো কিন্তু ভুলকে ক্ষমা করো। সততা খুবই দামি একটি উপহার। তা কখনোই সস্তা লোকের নিকট থেকে আশা করবেন না! কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষ অপেক্ষা শ্রেয়। ধার্মিকতা আর ধর্মান্ধতা এক জিনিস নয়। ধার্মিকতা মানুষকে আলোর পথে নিয়ে যায় আর ধর্মান্ধতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এ দেশের মানুষকে আমি ধার্মিক বলব না, কারণ এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই ধর্মান্ধ। শরীর ও অধিকার দ্বারা মানুষ শান্তি খুঁজে পায় না, বরং সততা ও জ্ঞানের মাধ্যমেই শান্তি পাওয়া যায়। আর সততা হলো জ্ঞানের বইয়ের প্রথম অধ্যায়। যে মানুষ যত বেশি সত্য গোপন করতে পারে, সে তত বেশি সচ্চরিত্রবান। যারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না, তারাই অন্যকে বিশ্বাস করে। আমার দোষ তুমি আমাকেই বলো।
যে সৎ হয় নিন্দা তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। আমি এত শক্তিমান, আগে জানা ছিল না। আজকাল মিত্র নয়, শত্রুদের সংখ্যা দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। যারা বন্ধুদের অপমান করে, বন্ধুদের অপমানিত হতে দেখে কাপুরুষের মতো নীরব থাকে, তাদের সঙ্গে সংসর্গ করো না। এমন কোনো মহত্ত্ব নেই, যেখানে সরলতা, মঙ্গলতা এবং সত্য নেই। নৈতিকতা-বিবর্জিত মানুষের চরিত্র বলতে কিছুই থাকে না। ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ, সফলেরা শয়তান। জীবনে করা প্রতিটি ভুলে ব্যর্থতাকে রোধ করার দ্রুততম উপায় হলো সততা। সততার নিকট দুর্নীতি কোনো দিনই জয়ী হতে পারে না।
নৈতিকতা : নৈতিকতার অধিকারী ব্যক্তি সর্বদা অন্যের প্রতি ভালো আচরণ করে। কখনো কারও ক্ষতি করে না। তবে বর্তমানে মানুষের মধ্যে নৈতিকতার বড় অভাব। অনেক নৈতিক মূল্যবোধ আছে, যা মানুষের মধ্যে থাকা উচিত। তবে তা জানতে হলে আগে আপনাকে নৈতিকতা নিয়ে উক্তি জেনে রাখতে হবে। তাই আজকে কিছু নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নৈতিকতা সম্পর্কে ঐশ্বরিক কিছু নেই, এটি একটি সম্পূর্ণরূপে মানব বিষয়। নৈতিকতা অস্থায়ী, প্রজ্ঞা চিরস্থায়ী। নৈতিক আচরণের গুণমান জড়িত মানুষের সংখ্যার বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়। পুরুষেরা তাদের চিন্তার চেয়ে বেশি নৈতিক এবং তারা কল্পনা করার চেয়ে অনেক বেশি অনৈতিক। সম্মান কেবল উচ্চতর পুরুষদের নৈতিকতা। নৈতিকতা হলো আমরা কীভাবে নিজেদের সুখী করতে পারি তার তত্ত্ব নয়, কিন্তু কীভাবে আমরা নিজেদের সুখের যোগ্য করে তুলতে পারি, তার তত্ত্ব। সাধারণ নৈতিকতা শুধু সাধারণ মানুষের জন্য। নৈতিকতা ছাড়া স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, বিশ্বাস ছাড়া নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। নৈতিকতা জিনিসের ভিত্তি এবং সত্য হলো সমস্ত নৈতিকতার উপাদান।
নৈতিকতা ছাড়া ধর্ম একটি কুসংস্কার এবং একটি অভিশাপ এবং ধর্ম ছাড়া নৈতিকতা অসম্ভব। নৈতিকতা আমাদের সততার চেয়ে সামঞ্জস্যের পরীক্ষা, যেখানে রাজনীতি বা অর্থনীতি আছে, সেখানে নৈতিকতা নেই।
নৈতিকতা ও ক্ষমতার সম্পর্ক খুবই সূক্ষ্ম। কারণ শেষ পর্যন্ত নৈতিকতা ছাড়া ক্ষমতার অস্তিত্ব থাকে না। নৈতিকতা হলো সঠিক এবং ভুল আচরণের বিধান। নৈতিকতার জন্য একটি ভালো উক্তি কী হতে পারে? নৈতিকতা ছাড়া স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, আর বিশ্বাস ছাড়া নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আমাকে অন্যের জন্য বাঁচতে হবে, নিজের জন্য নয়, এটাই মধ্যবিত্ত নৈতিকতা।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041