কী ছিলেন? কোথায় নিপতিত হলেন?

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৪, ১১:৩৩ , অনলাইন ভার্সন
ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুলিশ অফিসার। ছিল বর্ণাঢ্য সিভিল সার্ভিস ক্যারিয়ার। ছিল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আকর্ষণীয় ফিগারের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার প্রয়োজনীয় সব গুণাবলি। ছিলেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সর্বোচ্চ পদাধিকারীÑআইজিপি, র‌্যাবের মহাপরিচালক। কিন্তু দিন শেষে প্রমাণিত হলো ওই পদগুলো আপনি অলংকৃত করতে পারেননি, বরং করেছেন চরমভাবে কলঙ্কিত। আপনার ছিল অপরিসীম ক্ষমতা। টইটম্বুর অহংকার। কিন্তু ছিল না সততা। অন্তরে ছিল না বিন্দু পরিমাণ বিবেক, মানবতা। সেখানে শুধুই ছিল উচ্চ পদের উচ্চাভিলাষ আর অপরিসীম অবৈধ সম্পদের লোভ। পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা বানানোর সীমাহীন লালসা। জানা ছিল ক্ষমতাসীন প্রভুদের প্রিয়ভাজন হওয়ার সমস্ত অপকৌশল। অঢেল টাকা আর প্রমোশনের লোভে ক্ষমতাসীনদের লাগাতার দিয়ে গেছেন সীমাহীন অতি উৎসাহী সব সার্ভিস। বিনিময়ে যা চেয়েছেন, সবই পেয়েছেনও। ‘গোপালি কর্মকর্তা’ হিসেবে চাকরিজীবনের পুরোটা সময়ই শুধু নয়, অবসরেও ভোগ করেছেন রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্রকে দিনের পর দিন পিষ্ট করেছেন বুটের তলায়। বিরোধী দল-মত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছেন অপরিসীম দানবিকতায়। নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় খালি করেছেন হাজারো মায়ের বুক। ‘পাবলিক সার্ভেন্টের’ দায়িত্বকে বুটের তলায় পিষিয়ে দেশের নাগরিকদের ওপর চালিয়েছেন নির্যাতনের স্টিম রোলার। শাপলা চত্বরে কয়েকশ আলেমকে হত্যা এবং হাজার হাজার আলেমকে আহত ও পঙ্গু করার কাজে যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছেন, ইতিহাসে সেটা নজিরবিহীন। নিবেদিতপ্রাণ সার্ভিসে তুষ্ট ক্ষমতাসীনেরাও আপনাকে মাথায় তুলে রেখেছিল। আর সেই সুযোগে করেছেন সীমাহীন দুর্নীতি। সরকারি টাকা মেরেছেন। সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে, অস্ত্র ঠেকিয়ে, জোর-জবরদস্তি করে আটকে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, জুলুম-নির্যাতন করে আদায় করেছেন অঢেল টাকা। চাকরিজীবনের পুরো সময়ে বেতন-ভাতা হিসেবে বৈধভাবে আয় করেছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। অথচ অবসরে যাওয়ার পরপরই অনুসন্ধানী মিডিয়া খুঁজে পেল নগদ টাকা, দামি জমি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গরু-মাছের খামার, বিলাসী ইকোপার্ক, সঞ্চয়পত্র এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ইত্যাদি মিলিয়ে হাজার কোটিরও বেশি টাকার সম্পদ। অপকর্ম বেশি দিন লুকানো যায় না। চাকরিরত অবস্থায় ক্ষমতার দাপট আর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দানবীয় প্রতিশোধের ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করতে না পারলেও এখন সবাই ঢেকে থাকা অপকর্ম শুধু প্রকাশই করছে না, বরং ‘বেনজীরের দুর্নীতি’ই হয়ে উঠেছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সাহসী প্রতিবেদন ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’-এর জন্য দৈনিক কালের কণ্ঠকে ধন্যবাদ। সেটাই ছিল এ ক্ষেত্রে ‘পাইওনিয়ারিং রিপোর্ট’। এরপর প্রায় প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদের নতুন নতুন সংবাদ। জেলায় জেলায়, শহরে শহরে মিলছে ফ্ল্যাট আর জমির হদিস। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও পাওয়া যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য। নিজের মেয়েগুলোর জীবন নিজেই কলঙ্কিত করে দিলেন। বাবার পরিচয়কে ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ওরা ঠিকই প্রতিষ্ঠিত হতে পারত। কিন্তু তাদেরকে সম্মানজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে না দিয়ে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিলেন কোটি কোটি টাকার কলঙ্কিত সম্পদ। অবৈধ টাকা হাতানোর কাজে ওদের তেমন কোনো দায় না থাকলেও আপনার সঙ্গে ওদেরকেও অসম্মানজনকভাবে দেশ থেকে পালাতে হলো। নিজেরা অপরাধ না করলেও বাকি জীবনে ওরা কি কখনো এসব অবৈধ সম্পদের দায় আর অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হতে পারবে?
পূর্বাচলে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে আপনার বিলাসী ডুপ্লেক্স বাড়িটির মূল্য নাকি কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। অথচ একটি সুখী, সুন্দর, সম্মানজনক জীবনের জন্য ৪৫ কোটি টাকার বাড়ির কোনো প্রয়োজন নেই। হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ সুখ ও সম্মানের কোনো গ্যারান্টি নয়। এতটা নজিরবিহীন দুর্নীতির কোনোই প্রয়োজন ছিল কি? চাকরি থেকে বেতন-ভাতা-পেনশন বাবদ যা পেয়েছেন, সেগুলো দিয়ে বাকি জীবনটা সম্মানজনকভাবে কাটিয়ে দিতে পারতেন। জীবন তো একটাই। এক জীবনে এত সম্পদের পাহাড় লাগবে কেন! একজন শ্রমজীবী মানুষ হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সৎ উপার্জনে কোনো এক বস্তির ছোট্ট কোনো ঝুপড়িতে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে পরম প্রশান্তিতে ঘুমাতে পারে। অথচ ৪৫ কোটির ডুপ্লেক্স, অসংখ্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাট আর হাজার কোটি টাকার সম্পদ ফেলে জন্মভূমি থেকে আপনাকে গোপনে পালাতে হলো। ‘সেকেন্ড হোম’-এর খুঁজে রিফুজি ভিসায় ঘুরতে হচ্ছে পৃথিবীর দেশে দেশে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে দার্শনিক সক্রেটিসের সেই উক্তিটি আপনার নজরে না আসার কথা নয়, যেখানে সক্রেটিস বলেছিলেন, How many things can I do without? সামগ্রীর বাহুল্য জীবনকে সুখী-সুন্দর করে না বরং অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বর্জনের মাধ্যমেই জীবনে প্রকৃত সুখ অনুভব করা যায়। সক্রেটিসের বিখ্যাত এই বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আপনিও পারেননি। তাই আপনার কাছে অঢেল টাকা আর সম্পদের পাহাড়ই ছিল সুখের সামগ্রী।
অভিশপ্ত, অস্থির জীবনের এই দুঃসময়ে দুই মিনিট সময় নিয়ে একটু ভেবে দেখার চেষ্টা করবেন-কী ছিলেন? আর কোথায় নিপতিত হলেন? আপনাকে অবলম্বন করে যারা নিজেদের আখের গুছিয়েছিল, তারাও এখন আপনার সঙ্গে নেই। যারা একটু সান্নিধ্য পেতে কিংবা কোনো অজুহাতে আপনার সঙ্গে একটা সেলফি নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করত, তারাও এখন আপনার পরিচয় ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ করছে। মানুষের ঘৃণার বন্যায় আপনি এখন আকণ্ঠ নিমজ্জিত। আপনাকে ব্যবহার করে যারা নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করেছিল, তাদের কাছেও আপনি এখন ব্যবহৃত টয়লেট টিস্যু। তারাও এখন আপনাকে বিচারের আওতায় আনতে (অন্তত বক্তৃতা-বিবৃতিতে হলেও) তৎপর। আপনি এখন শহরের সবচেয়ে দুর্গন্ধময় আবর্জনার স্তূপে নিক্ষিপ্ত। দুনিয়ার সীমিত জীবন শেষে একদিন তো মরতেই হবে। দুদকের তদন্ত ও ইহকালের বিচার-প্রক্রিয়া নানা কারণে বাস্তবায়িত না-ও হতে পারে। তবে পরকালের বিচার শতভাগ নিশ্চিত। শেষ বিচারের সেই কঠিন দিনে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গলায় ঝোলানো অবস্থায় মহান সুবিচারক আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে পারবেন তো?
-নিউইয়র্ক, ১৮ জুন ২০২৪
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041