জানের বদলে মালের অঙ্কে ব্যস্ততা ♦ অর্থনীতির তথ্যেও লুকোচুরি

অশনিসংকেত

প্রকাশ : ০১ অগাস্ট ২০২৪, ০৮:৪৫ , অনলাইন ভার্সন
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ণয়ে প্রাণহানি বা জানের চেয়ে মালের ক্ষয় জানান দেওয়ার দিকে ঝুঁকেছে সরকার। তা বেসরকারি খাতেও। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীর মৃত্যুর চেয়ে অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি প্রচারের চেষ্টা বেশি। এবারের আন্দোলন সরকারকে কাবু করেছে ধারণাতীতভাবে। শিশু-কিশোরসহ শিক্ষার্থীদের নিরীহ গোছের আন্দোলন এ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে, এ-সংক্রান্ত ন্যূনতম তথ্যও পায়নি সরকার। অভ্যন্তরীণ আকাল, বিদেশি ঋণ শোধের চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ার ক্ষতের মাঝে রেমিট্যান্স-প্রবাহে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের অনিশ্চয়তা।
চলমান পরিস্থিতির কারণে রফতানি, রেমিট্যান্সসহ দেশের অর্থনীতির সব খাতে  অনিশ্চয়তা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনেও তা ফুটে উঠেছে। এতে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদাসলে বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার শোধ করতে হয়েছে। এর মাঝে মূল ঋণ ২০১ কোটি ডলার, আর সুদ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। আর এর মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এর প্রভাবে জিনিসপত্রের দাম সামনে আরও বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার ওপর এই সময়েই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রফতানি আয় আরও কমে যাওয়ায় আরেক ধাক্কায় পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বহির্বিশ্বে ইন্টারনেট যোগাযোগ টানা কয়েক দিন বিচ্ছিন্ন থাকায় গার্মেন্টশিল্পসহ কয়েকটি খাতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আস্থার চরম সংকট। বিদেশি অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। নতুন অর্ডারেও বন্ধ্যাত্ব।
এই সঙ্গেই বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স-বিরোধী প্রচারণার ধকল। কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহতের প্রতিবাদে প্রবাসীদের একটি অংশ ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানো’র বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছে। নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনার কৌশলও এরই মধ্যে হোঁচট খেয়েছে। তা গোপন রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে লুকোচুরি চলছে। গত এক দশকে হরতাল-অবরোধের মতো অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া করোনাকালেও কিছু পণ্য জাহাজে উঠেছে। ক্রেতা প্রতিনিধিরা বাসায় বসেও কাজ করেছেন। এবারের পরিস্থিতি সব বরবাদ করে দিয়েছে। কেবল ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনীতি নয়, গোটা বাংলাদেশ সম্পর্কেই বাজে বার্তা গেছে বিশ্বময়। এমন কাঁহাতক অবস্থার মাঝেই দেশের তৈরি পোশাক, বস্ত্রকল, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, ইস্পাতসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানা চালু হয়েছে।
কোটা আন্দোলন, কারফিউ, সেনা মোতায়েন, বিপুলসংখ্যক প্রাণহানি চাপা রেখে ক্ষয়ক্ষতিকে বড় করে দেখানোর সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানো ও মিল-কারখানায় কর্মযজ্ঞকে ফোকাসের চেষ্টা করছে সরকার। ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে আছে প্রমাণের চেষ্টা আরও জোরদার। কিন্তু বিদেশিদের মন গলানো ও ভয় কাটানোর পথে এখন পর্যন্ত সাফল্যের লক্ষণ নেই। বিদেশে থাকা প্রবাসীদেরও আয়ত্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার দিনগুলোতে বাইরের দুনিয়ায় বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা বিক্ষোভ করেছেন। আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও এবার বিক্ষোভ হয়েছে। তা কেবল নজিরবিহীন নয়, ধারণারও বাইরে। এর অনিবার্য জেরে দেশে প্রবাসী আয় তলানিতে পড়ে গেছে। ২১ থেকে ২৭ জুলাই সাত দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১৯-২৩ জুলাই সময়ে সরকারি ছুটি ও সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা ছিল না। তার ওপর কারফিউ জারি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ৪০-৫০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১-২০ জুলাই আসে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
এর আগে জুনে আসা ২৫৪ কোটি ডলার প্রবাসী আয় ছিল গত তিন বছরের মধ্যে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি আবহের মাঝে বিদায়ী জুলাইর শেষ দিকে লাগা ধাক্কা সারানোর দৃশ্যত পথ নেই সরকারের হাতে। উপরন্তু অর্থসেক্টরে সরকারকে পেয়ে বসার মৌসুম হিসেবে নেওয়া মহল বেশ সোচ্চার। সরকারের মতো তারাও নিজ নিজ ক্ষয়ক্ষতির অঙ্ক দাঁড় করাতে ব্যস্ত। নিজস্ব বোঝাপড়ায় ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণসহ অর্থনীতিতে তথ্য আড়ালের চেষ্টা বেশ গতিশীল। চক্রবদ্ধ হয়ে তারা দেশের অর্থনীতির ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং কমে গেছে। তথ্যের এই অস্বচ্ছতাও বাংলাদেশের প্রতি বিদেশিদের আস্থা কমানোর আরেক কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, মার্চ মাস পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, এ সংখ্যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের মধ্যে অমিল সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে। খেলাপি ঋণের কারণে অর্থনীতিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায়  বাংলাদেশে কান্ট্রি রেটিং কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041