নেতানিয়াহু’র নতুন হুশিয়ারি : এখন কী করবে ইরান-হিজবুল্লাহ 

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৩২ , অনলাইন ভার্সন
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু ‘প্রতিশোধহীন’ যাবে না। একইসঙ্গে তিনি পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। সেইসঙ্গে ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভা জরুরি ভিত্তিতে ডাকার আহবান জানিয়েছে। 

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর মূল সমর্থক ইরানকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলের যেকোনো জায়গায় হামলা চালাতে সক্ষম। হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে ‘ঐতিহাসিক মোড় ঘুরানো ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে আন্ত:সীমান্ত লড়াই অব্যাহত আছে। হিজবুল্লাহর দীর্ঘকালের নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ইসরায়েলের হামলায় নিহত হবার ঘটনা মূলত লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।

এটা সম্ভবত ওই অঞ্চলকে আরও বিস্তৃত ও বিপজ্জনক সংঘাতের আরেক ধাপ কাছে নিয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয়কেই টেনে আনতে পারে। 
শেখ হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে, শুক্রবার বৈরুতে এক হামলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সুতরাং পরিস্থিতি এখান থেকে আসলে কোন দিকে যাচ্ছে, এটি মূলত নির্ভর করে তিনটি মৌলিক প্রশ্নের ওপর।

হিজবুল্লাহ এখন কী করবে
একের পর এক আঘাতে জর্জরিত হিজবুল্লাহ। এক ডজনেরও বেশী শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডারের হত্যাকাণ্ডে এর কমান্ড কাঠামো বিপর্যস্ত। পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনায় এর যোগাযোগ কাঠামো এবং বিমান হামলায় এর অস্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মেদ আল-বাশা বলেছেন, হাসান নাসারুল্লাহকে হারানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে, গোষ্ঠীটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলকে পরিবর্তন করবে।

তবে ইসরায়েল বিরোধী এই সংগঠনটি হুট করে ক্ষান্ত দেবে এমন প্রত্যাশা কিংবা ইসরায়েলের চাওয়া অনুযায়ী শান্তির পথে আসবে তা সম্ভবত হবে না। হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যেই লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা আছে।

এদের অনেকেরই সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রতিশোধ নেয়ার দাবি করেছে। সংগঠনটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যার অনেকগুলোই দূরপাল্লার।

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার মতো অস্ত্র আছে, যা তেল আবিব ও অন্য শহরগুলোতে পৌঁছাতে পারে। নিজেরা আরও ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিণত হওয়া বা নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে সেগুলো ব্যবহারের জন্য গোষ্ঠীটির ভেতরে চাপ বাড়ছে।

কিন্তু ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে তারা সেটি যদি করে এবং তাতে বেসামরিক নাগরিক হতাহত হলে ইসরায়েলের জবাব হতে পারে আরও ভয়াবহ। তাতে লেবাননের অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এবং এমনকি সেটি বিস্তৃত হতে পারে ইরান পর্যন্ত।

ইরান কী করবে?
সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড হিজবুল্লাহর মতো ইরানের জন্যও একটি বড় ধাক্কা। দেশটি ইতোমধ্যেই পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছে। এছাড়া দেশটি তাদের নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনিকেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে গোপন জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। 

তেহরানের গেস্ট হাউজে ইসমাইল হানিয়ার অপমানজনক হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ ইরান এখনো নিতে পারেনি। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের বেশ কিছু সশস্ত্র সহযোগী গোষ্ঠী আছে। যেটি তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’।

হিজবুল্লাহর মতো ইয়েমেনে এর আছে হুতি এবং ইরাক আর সিরিয়ায় আছে কয়েকটি গোষ্ঠী। ইরান এসব গোষ্ঠীকে ইসরায়েলে এবং ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে হামলা করতে বলতে পারে। কিন্তু যেই পদক্ষেপই ইরান নিক না কেন সেটি হবে যুদ্ধের জন্য বন্দুকে চাপ দেওয়ার মতো, যাতে তারা জয়ের খুব একটা আশা করতে পারে না। 

নেতানিয়াহু’র নতুন হুশিয়ারি
ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলি সেনাদের প্রশংসা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সঙ্গে হিজবুল্লাহর মূল সমর্থক ইরানকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলের যেকোনো জায়গায় হামলা চালাতে সক্ষম। আজ ২৯ সেপ্টেম্বর (রবিবার) এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

শুক্রবার বৈরুতে সিরিজ বোমা হামলায় হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পরবর্তীতে শনিবার হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে, নেতানিয়াহু ইরানের প্রতিও সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে মত দেন বিশ্লেষকরা। বহু বছর ধরে হিজবুল্লাহকে অস্ত্র, তহবিল ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করে এসেছে ইরান।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সমর্থনেই মূলত ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সমীহ জাগানিয়া শক্তিতে পরিণত হয় হিজবুল্লাহ।

ইরানকে হুশিয়ারি দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, 'যারা আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাই। মধ্যপ্রাচ্যে এমন কোনো জায়গা নেই যা ইসরায়েলের নাগালের বাইরে, এবং আজকেই আপনারা অনুধাবন করতে পেরেছেন, কথাটা কতটুকু সত্য।'
'ইসরায়েলের হাত ইরান পর্যন্তও পৌঁছাতে পারে', বলেন তিনি।
ইতোমধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিয়েছে তেহরান।

এই অভিযানের পর এটাই নেতানিয়াহুর জনসম্মুখে প্রথম বক্তব্য। যখন তিনি এই বক্তব্য দেন, তখনো লেবাননে ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। আইডিএফ ইতোমধ্যে লেবানন সীমান্ত অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। উদ্দেশ্য, ইরান থেকে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাচার বন্ধ করা। পাশাপাশি হামলার মাত্রা বাড়ানো ও স্থল অভিযান শুরুরও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখার পর দেশে ফিরে জেরুজালেমে বক্তব্য রাখেন নেতানিয়াহু।

তিনি বলেন, 'চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নাসরাল্লাহকে নির্মূল করা জরুরি ছিল। এই উদ্যোগের ফলে হিজবুল্লাহর প্রায় এক বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন রকেট হামলার মুখে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া ইসরায়েলিরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারার পথ সুগম হয়েছে।'

'নাসরাল্লাহ সাধারণ কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী', যোগ করেন তিনি।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, 'নাসরাল্লাহকে নির্মূল করা ছিল আমাদের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার অত্যাবশ্যক উপকরণ।'

'আমাদের লক্ষ্য উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং আগামী বেশ কয়েক বছরের জন্য এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দেওয়া', যোগ করেন তিনি।

'যতদিন নাসরাল্লাহ বেঁচে থাকতেন, তিনি খুব দ্রুতই হিজবুল্লাহর সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারতেন।

দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিলেন হাসান নাসরাল্লাহ। আততায়ীর হামলা থেকে বাঁচতে প্রায় এক দশকের বেশি সময় তিনি জনসম্মুখে আসেননি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি যুদ্ধও বিমান লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ অঞ্চলে হিজবুল্লাহর সুরক্ষিত ঘাঁটি ও সদর দপ্তরে বোমা হামলা চালায়। এতে নাসরাল্লাহ সহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হন। আহত হন আরও অনেকেই।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমানগুলো অন্তত ১৫টি দুই হাজার পাউন্ডের বোমা বহন করছিল। যার মধ্যে মার্কিন জিডিএএম কিটযুক্ত বিএলইউ-১০৯ বোমাও ছিল। এই বোমাগুলো ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। এগুলো 'বাংকার বাস্টার' বোমা হিসেবে পরিচিত।
জেরুজালেমে নেতানিয়াহু গাজার যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বলেন, নাসরাল্লাহর প্রয়াণে হামাস আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, '(হামাস নেতা ইয়াহিয়া) সিনওয়ার যখন দেখবেন যে হিজবুল্লাহ আর তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছে না, তখন তিনি (ইসরায়েলি) জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দেবেন।'

ঠিকানা/এসআর

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078