আমার মন অনেক খারাপ হয়েছিল

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৫০ , অনলাইন ভার্সন
আমি ফান করতে পছন্দ করি। যারা আমার স্বভাব বোঝে, তাদের সাথে আমি অনেক খোলামেলা স্বভাবের। চোখমুখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো ফানও আমি করি। মাঝে মাঝে অর্ক অরিত্রি আমার সামনে থেকে টুপ করে উঠে যায়। বুঝতে পারে, বাবা এখন বিপজ্জনক লাইনে যাচ্ছে। অন্যরা ফান করলেও আমি এনজয় করি। প্রবল বেগে হাসতে থাকি। যেমন সোহেল। ওর সান্নিধ্য অনেক আনন্দের। কিন্তু জেসমিন খুব সিরিয়াস টাইপ। বিশেষ করে, আমি ফান করলে অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে যায়। মনে করে, ওকে নিয়ে করছি। শুধু লেখক মঈনুল আহসান সাবের এবং লুৎফর রহমান রিটনের হিউমার সে পছন্দ করে। হেসে কুটি কুটি হয়।
একদম অপরিচিত মানুষদের সামনে আমি একটু গুটিয়ে থাকা স্বভাবের। যেচে কথা বলতে আমার অসুবিধা হয়। কিন্তু একবার আমি একটা অপ্রত্যাশিত আচরণ করলাম। সেটা আজ থেকে বারো বছর আগের কথা। তখন ডিসেম্বর মাস। কনকনে ঠান্ডা। আমি টরন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকায় একটা বাঙালি গ্রোসারিতে ঢুকেছি। দেখি, এক ভদ্রমহিলা ‘ভোরের আলো’ পত্রিকাটা মেলে ধরে আছেন। ভদ্রমহিলার চোখ পত্রিকার চারের পাতায়। আমি আড় চোখে একবার দেখে নিয়েছি। এই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক তখন আমি এবং চারের পাতায় নিয়মিত আমার কলাম ছাপা হয়।
আমি কৌতূহল দমন করতে না পেরে তাকে বললাম, আপনি এই পত্রিকাটা লাইক করেন?
তিনি মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হু করি।
Ñকেন করেন!
Ñঅনেক কিছু থাকে। বিশেষ করে, এনার লেখার জন্য আমি পত্রিকাটা নিই। ইনি ওনার মায়ের কথা, বাড়ির কথা, শৈশব-কৈশোরের সাদামাটা জীবনের কথা লেখেন। সত্য কথা লেখেন। কোনো কিছু লুকান না। আমার সাথে অনেক মিল পাই। আমি যখন কাজে থাকি, সুযোগ পেলেই ওনার লেখা পড়ি। কোনো লেখা অনেকবারও পড়ি। পড়লে মনটা হালকা হয়।
আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক। তিনি হেসে বললেন, আপনি যার সাথে কথা বলছেন ইনিই তো এই লোক।
ভদ্রমহিলা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করলেন না। বললেন, এই লোক তো ইনি না। এনাকে দেখতে তো কেমন শুকনা লাগতেছে, রোগা। ছবির মানুষটা তো দেখতে বেশ ভালো, গোলগাল।
ভদ্রমহিলার কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি কি দেখতে এতই খারাপ হয়ে গেছি যে আমাকে চিনলেনই না! লেখার সাথে যে ছবিটা ছাপা হয়, সেটা একটু আগের হলেও আমারই তো ছবি! আমি মন খারাপ করে ঠান্ডার মধ্যে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকলাম..।
সম্পর্ক নিয়ে কত কথা
প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই একটা ভারসাম্য থাকা উচিত। ভারসাম্য ব্যাপারটা কী, এটা বুঝতে হবে। কোন সম্পর্কটা টেকসই হবে, কোন সম্পর্ক কোনো ঝড়-ঝঞ্ঝায় ভেঙে পড়বে না, মচকাবে না, অটুট থাকবেÑসেটা অনুধাবন করতে হবে। তাহলেই সম্পর্ক আনন্দময় হবে, তাহলেই সম্পর্ককে হালকা মনে হবে। এমন সম্পর্ক করা উচিত নয়, যা পাথরের মতো ভারী। এমন সম্পর্ক করা উচিত নয়, যা নিয়ে সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে সম্পর্ক কখনো মজবুত হবে না। সম্পর্কে নির্ভরতা, রেসপেক্ট, প্যাশন থাকতে হবে। একতরফা সম্পর্ক করা উচিত নয়। সম্পর্ক হতে হবে খোলা বইয়ের মতো। সম্পর্ক হতে হবে ফুলেল সৌরভমাখা, যেখানে কোনো কালো আঁচড় থাকবে না, দাগ থাকবে না। তাহলেই সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হবে।
আমি মানুষের মনোজগৎ নিয়ে অনেক চিন্তা করি, রিলেশন ইস্যুগুলো আমার চর্চার একটা বিষয়। সব সময়ই আমি এসব ভাবতাম। আমি স্পর্শকাতর মানুষ, আবেগপ্রবণ। আপাত শান্ত মনে হলেও আমার ভেতরে একটা জেদি মন আছে। আমি একলা বড় হয়ে ওঠা মানুষ। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছি সব সময়। শৈশবকাল থেকেই আমি এমন। প্রথাবিরোধী এক বালক ছিলাম আমি। আমার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে আমি একদম মেনে নিতে পারি না। আমার মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এসব কারণে আমি জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এসব কারণে আমি অনেক একলা।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামাজিক অবস্থান একটি বড় ফ্যাক্টর। ধনীর সাথে গরিবের কখনো বন্ধুত্ব হবে না। যদি হয়ও সেটা বন্ধুত্ব নয়, সেটা একধরনের দয়া, করুণার সম্পর্ক। গরিবেরা সব সময় হীনম্মন্যতায় ভোগে আর ধনীরা সেটা উপভোগ করে। ধনীরা সব সময় গরিবকে চমকে দিতে চায়, মুগ্ধ করতে চায়, প্রশংসা শুনতে চায়। তারপর একসময় আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে দিতেও দ্বিধা করে না। গরিবের তখন নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। পৃথিবীজুড়ে ধনীদের জয়জয়কার। এই পৃথিবী তাদের। এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। এমপ্লয়ারের সঙ্গে কর্মচারীর কখনো বন্ধুত্ব হবে না। পরস্পরের প্রতি নির্ভরতা থাকতে পারে কিন্তু সেটা কখনো বন্ধুত্ব নয়। কর্মচারী কোনো ভুল করলে এমপ্লয়ার কখনো ক্ষমা করবে না। মনে রাখতে হবে, সবাই ধনী হবে না, কেউ কেউ হবে। ভাগ্যের বরপুত্র সবাই হতে পারবে না। ক্ষমতবানদের সাথে দুর্বলের কখনো বন্ধুত্ব হবে না। দুর্বল মানুষেরা ক্ষমতাবানদের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকে, পুলক অনুভব করে বটে কিন্তু সেটা প্রকৃতপক্ষে করুণামাখা। করুণা নিয়ে কে বাঁচতে চায়! সম্পর্ক রচনা নিয়ে আমি অনেক সতর্ক। সব সময় তা-ই ছিলাম। তার পরও কি আমার ভুল হয় না! অনেকই হয়! আমি কি ভুল সম্পর্ক করি না! করি। আমি অনেক সাধারণ, আমার কোনো ক্ষমতাও নেই। তা সত্ত্বেও আমি অনেক ক্ষমতাবানদের সান্নিধ্যে এসেছি, অনেক ধনাঢ্য মানুষ আমার বন্ধু তালিকায় আছে, সেটা কি বাস্তব জীবনে কি সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেক সেলিব্রেটি যেমন আছে, তেমনি আমার মতো সাধারণ মানুষও আছে। সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে আমি ইকুলিব্রিয়াম রক্ষা করে চলতে চাই। ক্ষমতাবান বা ধনীদের নিয়ে আমার আলাদা কোনো আবেগ হয় না। একজন সেলসম্যান, একজন উবার ড্রাইভার, একজন পিৎজা ডেলিভারিম্যান আমার কাছে যেমন, তেমনি একজন সেলিব্রেটি বা মিলিয়ন ডলার বাড়িতে থাকে সেও তেমনি। কড়াইল বস্তিতে যে থাকে সেও যেমন গুলশান বা বারিধারায় যে থাকে সেও তেমন।
এসব কারণে সম্পর্ক নিয়ে আমার মধ্যে কোনো টানাপোড়েন হয় না, কোনো উচাটন নেই। রাতের ঘুম নষ্ট হয় না। কারণ আমি কারও কাছে কিছু পেতে চাই না। ক্ষমতার কাছে মাথা নত করি না। টাকা দিয়ে আমাকে কেনা যায় না। যখন আমি ঠিকমতো খেতে পেতাম না, তখনো আমি এমনই ছিলাম। যেকোনো সম্পর্ককে আমি পেঁজা তুলোর মতো হালকা রাখতে চাই। অনেক ভার আমি নিতে পারি না। ধনী বা ক্ষমতাবানদের সাথে আমি ওঠাবাসা করে দেখেছি কিন্তু ঠিক স্বস্তি যাকে বলে আমি পাই না। আমার তেমন কথা থাকে না তাদের সাথে। এটা কোনো হীনম্মন্যতা নয় বা অবহেলা প্রদর্শনও নয়। আমি ওই লেভেলের নই বলে কোনো ঈর্ষাও কাজ করে না। আবার অপেক্ষাকৃত কম ভাগ্যবানদের সাথেও আমি ওঠাবসা করেছি। তারাও অনেকে আমাকে বুঝতে পারে না। তাদের মধ্যেও একধরনের ইনফ্রিয়ারিটি কমপ্লেক্স কাজ করে।
যতই মনোজগৎ নিয়ে চর্চা করি না কেন, মানুষের মনের রহস্য কিছুতেই ভেদ করা যায় না। কোনো মানুষই প্রকৃতপক্ষে পুরোপুরি মানবিক হয়ে উঠতে পারে না। আমিও পারি না। আমার মধ্যেও অনেক দ্বিধা আছে, হীনম্মন্যতা আছে, ঈর্ষা আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। অবচেতনেই এসব কাজ করে। নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য করতে পারি না। সম্পর্কের এসব জটিল সমীকরণ কিছুতেই মেলানো যায় না। জীবনে কিছুই অনিবার্য নয়Ñএই থিওরিতে বিশ্বাস করি। তাই সম্পর্ক রচনা নিয়ে আমি নির্ভার থাকতে পারি।
সবাই কি বন্ধু! সবাই বন্ধু নয়!
কখনো কারও শতভাগ মনের মতো হওয়া যায় না। আমরা সব সময় অন্যের কাছ থেকে শতভাগ আশা করি। কিন্তু আমরা কেউই শতভাগ দিতে পারি না। আমাদের সবার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, ত্রুটি আছে। এই পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট নয়। সুতরাং কারও কাছ থেকেই পারফেক্টনেস আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের মন তা মানে না। অবচেতন মন বন্ধুর কাছ থেকে, স্ত্রীর কাছ থেকে, স্বামীর কাছ থেকে, সন্তানের কাছ থেকে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে শতভাগ আশা করে। না পেলেই মনে করি, সে আমার হৃদয়ে নেই। তাকে পর করে দিই। দূরত্ব তৈরি করি বা একটা আলগা সম্পর্ক রেখে চলি। এমনটা আমার ক্ষেত্রেও ঘটে। যদিও আমার কারও কাছে খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। কিন্তু তার পরও অবচেতনে একটা প্রত্যাশ্যা থাকেই। স্ত্রীর কাছে থাকে, সন্তানের কাছে থাকে, বন্ধুর কাছে থাকে, ভাইবোনের কাছে থাকে।
প্রত্যাশাহীন কোনো জীবন হয় না। আশা ও স্বপ্ন নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। যদিও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধানটা সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতোই কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বপ্ন আর প্রত্যাশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আমিও স্বপ্ন দেখি, আমারও প্রত্যাশা আছে। আমিও চাই আমার ছোট ছোট স্বপ্নগুলো পূরণ হোক, আমিও চাই আমার জন্য কেউ কিছু করুক, আমার ডাকে সাড়া দিক। আবার আমি এটাও আশা করি, আমার কাছে কেউ বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে আসুক, আমাকে কাছে ডাকুক, পাশে থাকুক। শুধু আমি স্বার্থপরতা চাই না। শুধু পেতে চায়, দিতে চায় না এমন মানুষ চাই না। নির্বিকার মানুষ চাই না আমি। আমার চাওয়াগুলো একধরনের অধিকার থেকে উৎসারিত হয়, দাবি থেকে। সেটা হচ্ছে ভালোবাসার দাবি, বন্ধুত্বের দাবি, আত্মীয়তার দাবি।
আমি তেমন যোগ্য মানুষ নই কিন্তু আমার প্রাপ্তিগুলো আমার যোগ্যতার চেয়েও বেশি। মাছে মাঝে মনে হয়, নতুন কিছু ঘটছে না আর জীবনে। জীবন নিস্তরঙ্গ হয়ে যায় কখনো কখনো। একঘেয়ে। পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতার জায়গাটা অনেক যান্ত্রিক হয়ে গেছে বলেই এমন মনে হয়। মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। একলা বাঁচতে চাইছে। সম্পর্কগুলো মেকি হয়ে গেছে। বিশেষ করে, আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো স্বার্থের সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে। যতক্ষণ দিতে পারবেন ততক্ষণই ভালো। না দিতে পারলে সব মুছে যাবে। কিছু বন্ধুত্ব আছে সার্কাসের তারের ওপর দিয়ে হাঁটার মতো বিপজ্জনক। সুবিধা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। এই ভালো, পরক্ষণেই সেই অনুভব আর থাকে না। তবে শেষ পর্যন্ত বন্ধুরাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। তারাই আমার অনুপ্রেরণা, আমার দাবি প্রতিষ্ঠার জায়গা। সবাই বন্ধু হয় না, কেউ কেউ হয়। আমি এখন জেনেছি প্রকৃত বন্ধু কে, কাকে বলে। প্রকৃত বন্ধুকে চিনে নিন।
টাকা তুমি সময়মতো আইলা না
ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়ি, তখন লেইজারে আমার বন্ধুরা মালেক ভাইয়ের মালাই আইসক্রিম খেত। আমার কাছে প্রায়ই পয়সা থাকত না বলে আমি আইসক্রিম খেতে পারতাম না। বন্ধুরা খেত, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। একবার আমার ক্লাসের ফার্স্ট বয় নাসির বলল, মল্লিক, আইসক্রিম খাবি! আমি তোকে খাওয়াই। তখন থেকেই আমার আত্মসম্মানবোধ প্রবল। আমি কখনো কারও কাছে কিছু চেয়ে নিতে পারতাম না। চেয়ে না পাওয়ার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব না। অপমানিত বোধ করতাম খুব। আমি নাসিরকে বললাম, না রে, আমার টনসিলের সমস্যা আছে, মা বলছে ঠান্ডা না খেতে। মনে আছে, বিকেলের দিকে আমাদের বাড়িতে একজন লোক ঘটি গরম বিক্রি করতে আসত। পায়ে ঘুঙুর লাগিয়ে রংচঙা পোশাক পরে ঘটি গরররররম বলে ডাক ছাড়ত। বাড়ির ছেলেমেয়েরা দৌড়ে যেত। ভিড় করত। আমি এমন একটা ভাব করতাম, যেন ওর চেয়ে পচা খাবার আর নেই। কিন্তু আমি জানি, সেই ঘটি গরম ছিল অতি সুস্বাদু। অসাধারণ তার সুবাস।
আমার পকেটে পয়সা থাকত না বলে আমি চিঠি লেখার স্টাম্প কিনতে পারতাম না। কলেজে উঠে আমি পত্রিকায় চিঠিপত্র লিখি। আমার শখানেক পেনফ্রেন্ড। আমি করতাম কি, আমাকে বন্ধুরা যে চিঠি লিখত, সেই চিঠি থেকে স্টাম্প উঠিয়ে আবার বসিয়ে দিতাম। বৃদ্ধ ডাকপিয়ন চাচা আমাকে যারপরনাই আদর করতেন, তিনি কিছু বলতেন না, সিল মেরে দিতেন। তখন থেকেই টাকার প্রতি একটা অনীহা তৈরি হয় আমার। তা সত্ত্বেও আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, বড় হয়ে যখন চাকরি করব, তখন অনেক আইসক্রিম খাব। আর যদি আমি বিয়ে করতে সক্ষম হই অর্থাৎ কোনো নারী যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় (তখন পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলাম আমাকে কেউ বিয়ে করবে না এবং আমি বিয়ে করেছিলাম টাকা-পয়সা ধার করে) এবং আমার যদি ছেলেমেয়ে হয়, তাহলে তাদের কোনো চাহিদাই আমি অপূর্ণ রাখব না।
আমার পুরো ছাত্রজীবন কেটেছে কষ্টেসৃষ্টে। হল জীবনে অনেক রাত আমি না খেয়ে কাটিয়েছি কিন্তু কখনো কাউকে বুঝতে দিইনি। কেউ জানতে পারেনি। এমনকি আমার একটা-দুইটার বেশি প্যান্ট-শার্ট ছিল না। বিচিত্রায় কাজ করে যা পেতাম, তাতে চলত না। কিন্তু বিয়ের পর আমার জীবন বদলে গেল। দুজনই চাকরি করতাম। ভালো চাকরি। কিন্তু টাকার প্রতি তেমন আগ্রহ জন্মায়নি। অথচ টাকা খরচ করতে আমি পছন্দ করি। চ্যারিটি করতে পছন্দ করি। চায়ের টেবিলে বসলে আমার সামনে কেউ বিল দিতে পারে না সহজে, আমার অস্বস্তি লাগে। আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছিলাম অন্যায়ের সাথে আপস করব না বলে। বিদেশে আসার সময় আমাকে পৈতৃক জমি বিক্রি করতে হয়েছিল অথচ সে সময় আমার সামনে টাকা আয়ের অঢেল হাতছানি আর প্রলোভন। ওসবকে উপেক্ষা করে আমি কানাডায় চলে আসি।
আমার ছেলেমেয়েরা এখন অনেক ভালো চাকরি করে, আমিও যা মন চায় করতে পারি। আইসক্রিম খেতে পারি, ঘটি গরম খেতে পারি, প্যান্ট-শার্ট কিনতে পারি, চিঠিতে স্টাম্প কিনে লাগাতে পারি। এতেই আমি খুশি। টাকা জিনিসটা আসলে একটা নেশার মতো। একবার এই নেশা পেয়ে বসলে সহজে ছাড়ে না। ড্রাগের নেশার চেয়েও ভয়াবহ টাকার নেশা।
হ্যাঁ, এটা সত্যি, সুন্দর জীবনযাপনের জন্য টাকা দরকার। টাকা বন্দুকের চেয়েও শাক্তিশালী, কলমের চেয়েও ক্ষমতাবান। টাকা থাকলে বাঘের চোখও মেলে প্রবাদের কথা হলেও খুব সত্য। টাকা থাকলে সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড জোটে, টাকা থাকলে বিদেশে গিয়ে ভালো চিকিৎসা করা যায়, টাকা থাকলে বড় বড় ক্লাবের মেম্বার হওয়া যায়, জুয়ার কোর্টে লাখ লাখ টাকা ওড়ানো যায়। টাকা থাকলেই গাড়ি-বাড়ি হয় এবং দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করা যায়। গাড়ি-বাড়িওয়ালা বন্ধু জোটে। টাকার জোরে ক্ষমতায় আসা যায়। ভোট কেনা যায়। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। টাকার জোরে অন্য দেশ দখল করা যায়, বোমা মেরে মানুষ মারা যায়। টাকার জোর থাকলে অন্যের বউ ভাগিয়ে নেওয়া যায়Ñটাকায় সব হয়। টাকা থাকলে দান-খয়রাত করা যায়। টাকার চেয়ে ক্ষমতাবান কিছু নেই। তাই মানুষ টাকার জন্য মরিয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সবাই টাকার দেখা পায় না। টাকা উড়লেও সবাই ধরতে পারে না। এই যেমন বাংলাদেশে শুধু টাকার গল্প চারদিকে। ছোটবেলায় এক পয়সা দুই পয়সা হলেই চিনাবাদাম কিনতে পারতাম, পাঁচ টাকা দশ টাকা হলে বেড়াতে যেতে পারতাম। তারপর শত টাকা, হাজার টাকা বা লক্ষ টাকার গল্প শুনতাম। একুশ পরিবার ছিল কোটিপতি একসময়। এখন কেউ কোটি টাকার গল্প করলে সেটা হাস্যকর মনে হয়। গত পনেরো বছর ধরে সব আলোচনাই হাজার কোটি টাকার। একশ কোটি বা পাঁচশ কোটি এখন অতি তুচ্ছ ব্যাপার। দুর্নীতি ব্যাপারটাকে জাতে উঠিয়ে দিয়ে গেছে। শিল্পে রূপ দিয়েছে!
-টরন্টো
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041