ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে বাংলাদেশির মৃত্যু

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৯ , অনলাইন ভার্সন
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত বাংলাদেশি যুবক নিজাম উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খারেরা মধ্যপাড়া গ্রামে চলছে মাতম। ভাইহারা বোনদের গগনবিদারী কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। পরিবারের সদস্যরা এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিহতের মরদেহ দ্রুত দেশের মাটিতে ফিরে আনার দাবি জানান।

নিজামের বাবার নাম মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খারেরা এলাকার বাসিন্দা।

নিহতের স্বজনেরা জানান, পরিবারের একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় ২০১২ সালে ধারদেনা করে নিজাম উদ্দিনকে লেবাননে পাঠায় পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তিনি নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। দীর্ঘ ১২ বছর পর দেশের মাটিতে আগামী মাসে ফিরে আসার কথা ছিল নিজামের। তবে গতকাল শনিবার রাতে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে মৃত্যুর খবরটি গ্রামে বাড়িতে পৌঁছালে শুরু হয় মাতম। পরিবারে মা-বাবাহারা এতিম নিজামের বোনরাই ছিল তারা আপনজন। তিন বোনের মধ্যে ইতোমধ্যে এক বোন মারা গেছেন হয়েছে। ভাইহারা বাকি দুই বোনের গগনবিদারী কান্না যেন থামছেই না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের বোন জাহেরা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইরে আমি ঋণ করে টাকা এনে বিদেশ পাঠিয়েছি। গত ১২ বছর ধরে সে দেশে আসে না। গত পাঁচ বছর আগে মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েও দেশে আসতে পারেনি নিজাম। ধারদেনা করে যাওয়া ঋণ এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। গতকাল বিদেশ থেকে ফোন দিয়ে বলছে, আমার ভাই মারা গেছে। সেই খবর পাওয়ার পর আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।’ তিনি এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তাদের ভাইয়ের মরদেহ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

নিহতের আরেক বোন পারুল আক্তার বলেন, ‘আমার আদরের ছোট ভাই ছিল সে। গতকাল তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে খবর দিয়েছে যে, আমার ভাই বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। আমার ভাইয়ের লাশ যেন সরকার দ্রুত আমাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে, সে দাবি করছি।’

এদিকে, এলাকাবাসী বর্বর এ হামলার নিন্দা জানিয়ে নিহতের লাশ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আশিক আহমেদ বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী হলো আমাদের কসবার খারেরা গ্রাম। আমরা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি নিজাম উদ্দিনের মরদেহ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিহতের পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। আমরাও এ ব্যাপার ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

উল্লেখ্য, ২ নভেম্বর (শনিবার) স্থানীয় সময় বিকালে একটি আবাসিক ভবনে কোনও সতর্কবার্তা ছাড়াই ইসরায়েল হামলা চালালে নিজাম উদ্দিনের মৃত্যু হয়। লেবাননে ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কোনও বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত নিজাম পরিবারে দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন।

লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, শনিবার বিকালে বৈরুতের হাজমিয়ে এলাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বিমান হামলায় আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলে নিজামের মৃত্যু হয়। বর্তমানে মরদেহ স্থানীয় একটি হাসপাতালের হিমঘরে আছে।

বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয় সময় বিকালে তিনি একটি কফিশপে অপেক্ষা করছিলেন।

দূতাবাস কর্তৃপক্ষের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান রেমিট্যান্সযোদ্ধা মরহুম মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এদিকে, যুদ্ধের কারণে ফ্লাইট না থাকায় নিজাম উদ্দিন মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৩ নভেম্বর (রবিবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘লেবাননে একজন বাংলাদেশি বিমান হামলায় মারা গেছেন। তার স্ত্রী লেবাননে আছেন। তার সঙ্গে লেবানন দূতাবাস কথা বলেছে এবং যোগাযোগ রাখছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফ্লাইট না থাকার কারণে মরদেহ বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে না বলে তাকে জানানো হয়েছে।’

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078