ফ্রিজে মায়ের লাশ

ছেলে খুন করেনি, নেপথ্যে ভাড়াটিয়া

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২২:১৩ , অনলাইন ভার্সন
সারাদেশে আলোচিত বগুড়ার দুপঁচাচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। এর আগে র‌্যাব-১২ ব্রিফিংয়ে বলেছিল, ছেলেই তার মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল। তবে পুলিশ রিমান্ডে অভিযুক্ত গৃহবধূর ছেলে পুলিশকে জানিয়েছে সে তার মাকে হত্যা করেনি। তবে জেলা পুলিশ বলছে, ভাড়াটিয়া মহিলার অনৈতিক কাজে বাধা ও তাকে বাসা ছেড়ে যেতে বলায় খুন হন গৃহ মালিক উম্মে সালমা। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তিন অভিযুক্তকে ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাদ বিন আজিজুর রহমানের বাসার চারতলার ভাড়াটিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৫০), তার সহযোগী গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৬) ও একই এলাকার নিখিল রবিদাসের ছেলে ভ্যানচালক সুমন রবিদাস (২৮)। 

১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার।

এর আগে, গত রবিবার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা উম্মে সালমার মরদেহ ফ্রিজে রেখে যান। দুদিন পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উম্মে সালমার ছোট ছেলেকে আটক করে র‌্যাব-১২ বগুড়ার সদস্যরা। পরদিন র‌্যাব জানায় উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান স্বীকার করেছেন তিনি নিজেই তার মাকে হত্যা করেছেন।

অন্যদিকে এখন জেলা পুলিশ বলছে, সাদ তার মাকে হত্যা করেননি। তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তার দুই সহযোগীকে নিয়ে হত্যা করেছেন উম্মে সালমাকে। মাবিয়া ও তার দুই সহযোগী সুমন চন্দ্র এবং মোসলেমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং দুটি মোবাইলের সূত্র ধরে তারা প্রথমে আটক করেন বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে।

মাবিয়া পুলিশকে জানায়, চার মাস আগে উম্মে সালমার ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি টের পাওয়ার পর উম্মে সালমা ও তার স্বামী আজিজুর রহমান ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে এক মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তার কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তার সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র সরকার এবং মোসলেমকে নিয়ে গেল শনিবার উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার সময় মাবিয়া প্রথমে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন দুই সহযোগী সুমন ও মোসলিমকে। তারা দুজন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তার নাক মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, আটকের পর মাবিয়া, সুমন ও মুসলিম উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছে। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে। বিকেলে তাদের তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার জন্য বগুড়ার আদালতে নিয়েছে পুলিশ।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, উম্মে সালমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বড় ছেলে বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তার ছোট ছেলে সাদকে গ্রেপ্তারের পর থানায় হস্তান্তর করলে তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আদালতে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের প্রথম দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সাদ পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত উদ্ধার ও তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। 

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে নিজ র‌্যাব-১২ কার্যালয়ে ব্রিফিং করে র‍্যাব-১২-এর বগুড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মো. এহতেশামুল হক খান বলেছিলেন, হাতখরচের টাকা নিয়ে মা উম্মে সালমার সঙ্গে ঝগড়া হয় ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানের (১৯)। একপর্যায়ে রাগ করে না খেয়ে তিনি বাড়ির বাইরে চলে যান। পরে ফিরে এসে মাকে হত্যা করে লাশ রেফ্রিজারেটরে লুকিয়ে রাখেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে কুড়াল দিয়ে আলমারি ভাঙচুর করেন, যাতে ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টা বলে মনে হয়। সেখানে র‌্যাব দাবি করেছিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041