সুখের ঠিকানা

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ , অনলাইন ভার্সন
আইয়ুব বাচ্চুর একটি গান দিয়ে শুরু করা যাক :
‘সুখের পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়
যত আড়ালে রাখো, আসলে কেউ সুখী নয়
নিজ ভুবনে চির দুখী, আসলে কেউ সুখী নয়।’
গানটা যখন বেরিয়েছিল তখন কলেজে ছিলাম, অতটা বুঝতাম না। কিন্তু এখন ঠিক হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আসলেই তো, আসলেই কি আমরা সুখী? নাকি সুখের অভিনয় করি? আসলে সুখটা কিন্তু আপেক্ষিক, আমরা নিজেরা যদি নিজেকে সুখী মনে করি, তাহলেই আমরা সুখী। আর সেই সুখের জন্য কিন্তু খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে, পুরো পৃথিবী তাদেরকে এনে দিলেও তাদেরকে সুখী করা যায় না।
এই যে ধরুন, আমার এক বড়লোক বান্ধবী মিলির কথাই বলি। সে তার পরিবারসহ আমেরিকার ভার্জিনিয়ায় একটা আপ স্কেল এলাকায় দেড় মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। তার বর একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। সে নিজেও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো পজিশনে কর্মরত আছে। দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে, পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই মেয়ে একটা বড় ল’ ফার্মে চাকরি করছে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। বলা বাহুল্য, ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার খরচের টাকা পুরোটাই তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করা ছিল আগে থেকেই। তারপর তাদের চাকরি থেকে এবং ওজঅ রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ অর্থ আছে, তারা আজকেও যদি রিটায়ারমেন্ট নেয়, শেষ জীবনটা দিব্যি হেসেখেলে কাটাতে পারবে। বছরে দুই থেকে তিনবার ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকেশনে যায়। আজকে ইউরোপের কোনো শহর-প্যারিস, লন্ডন কিংবা ভেনিস, পরশু দেখি দুবাই কিংবা টার্কি, ফেসবুকের আপডেট দেখে জানতে পারি।
যাই হোক, ইদানীং তারা যে স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে, সেটা গত সপ্তাহে তার সঙ্গে কথা হওয়ার পর জানতে পারলাম। সমস্যাটা হচ্ছে তার বর স্টক মার্কেটে বেশ বড় একটা লস খেয়েছে। এটা নিয়ে তাদের দিনরাতের ঘুম হারাম। এখন কথা হচ্ছে স্টক মার্কেটে ইনভেস্ট করার সময় সবাইকে কিন্তু রিস্ক নিতে হয়। কারণ স্টক মার্কেটে লস হতে পারে, আবার গেইনও হতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, এত কিছু থাকা সত্ত্বেও যদি স্টক মার্কেটের একটা লসের জন্য জীবনের সুখ নষ্ট হয়, তাহলে তো সবকিছুই বৃথা।
এবার আমার এক মধ্যবিত্ত বান্ধবী রিমির কথা বলি। সে তার বর আর ছেলেসহ পেনসিলভানিয়ায় থাকে। রিমি একজন স্কুল টিচার এবং তার বর একটা কোম্পানিতে হিউম্যান রিসোর্সে জব করেন। মিডল ক্লাস একটা এলাকায় তাদের নিজের বাড়ি আছে। মাসে তাদের বাড়ির মর্টগেজ ২০০০ ডলার আসে। বাড়ির মর্টগেজ দেওয়ার পরও তারা তাদের বেতনের কিছুটা অংশ তাদের রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা করার পাশাপাশি সেভিংস অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু অর্থ জমাচ্ছে, ছেলের কলেজের খরচের জন্য। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখে থাকার জন্য যা যা দরকার, তারা সবকিছুই উপভোগ করছে। সপ্তাহে একবার বাইরে রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। সেটা ছাড়াও মাসে একবার তাদের বাসায় আশপাশের বাঙালি পরিবারদের আসা-যাওয়া আছে। বছরে একবার ওভারসিজ ভ্যাকেশনেও যাচ্ছে, আরেকবার আমেরিকার মধ্যে অন্য কোনো স্টেটে বেড়াতে যাচ্ছে। বেশ দিব্যি ভালোই দিন কাটাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করছে। তারাই হচ্ছে আসল সুখী। এটাই হচ্ছে সুখের ঠিকানা।
সুখী হতে কিন্তু খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না। নিজেকে সুখী মনে করলে কিন্তু সুখী হওয়া যায়। এই মুহূর্তে আমি কেমন আছি, আমি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকি, তারপর ইমোশনালি যদি ভালো থাকি, আমার রিলেশনশিপগুলো যদি ভালো থাকেÑএসব কিছু মিলেই হচ্ছে ভালো থাকা, আর সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। আমি আগামীকাল কেমন থাকব, এটা নিয়েই যদি শুধু চিন্তা করতে থাকি, তাহলে আমি বর্তমানে কখনোই সুখী হতে পারব না।
টাকা আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। ভালো থাকার জন্য, সুখে থাকার জন্য টাকার দরকার আছে। সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এত অতিরিক্ত টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে, নিজের রাতের ঘুম যদি হারাম হয়, তাহলে কি সেই টাকা কখনো সুখ দিতে পারবে? অনেককে দেখা যায় শুধু টাকার পেছনে ছুটছে। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতে করতে নিজের শরীর নষ্ট করে ফেলে। পরে যখন অনেক টাকা হয়, তখন উপভোগ করার মতো শারীরিক কিংবা মানসিক অবস্থা থাকে না। নিজের অজান্তে ছেলেমেয়েগুলো কখন বড় হয়ে যায়, সেটাও টের পাওয়া যায় না। একপর্যায়ে পড়াশোনা শেষে ছেলেমেয়েরা যখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যার যার অবস্থানে পৌঁছে যায়, তখন বসে বসে মনে হয় হায়রে দিন কোথায় চলে গেল। বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন সবাই হয়তো আমার কাছ থেকে কিছুটা সময় চেয়েছিল। জীবনের একপর্যায়ে দেখা যায়, বাবা-মা বেঁচে থাকে না। ভাইবোন একপর্যায়ে সবাই সেটেল হয়ে যায়। আত্মীয়স্বজন সবাই যার যার মতো জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। শেষ বয়সে এসে শুধু আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
একটা সময় মনে হয়, ইশ্্ আমার সেভিংস অ্যাকাউন্টে যদি ১০ হাজার ডলার থাকত, তাহলে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম, আমি সুখী হতে পারতাম। যখন ১০ হাজার ডলার হয়ে যায়, তখন ইশ্্ আমার অ্যাকাউন্টে যদি এক মিলিয়ন ডলার থাকত, তাহলে ভালো হতো। অ্যাকাউন্টে এক মিলিয়ন ডলার জমা হওয়ার পরও আমরা কি নিজেকে সুখী অনুভব করি। চাওয়া-পাওয়ার কখনো শেষ হবে না। যতই থাকবে, ততই আরও লাগবে। নিজের পরিবারকে সময় দেওয়া, কাছের মানুষ আপনজনদের খোঁজখবর নেওয়া, তাদেরকে দেখতে যাওয়া, সেটাই অমূল্য। কারণ সবকিছু টাকা দিয়ে কেনা যায়, কিন্তু সময় আর সুখ কেনা যায় না। জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে প্রাচুর্য আর আসল সুখের ঠিকানা।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041