নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবিতে আন্দোলনে নামছে বিএনপি

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ , অনলাইন ভার্সন
দ্রুত নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই কর্মসূচি শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। এর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ অন্যান্য দাবিও থাকবে। ১৮ ডিসেম্বর (বুধবার) জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

এরই মধ্যে দলটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সম্ভাব্য সময়ের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ দেশে নানা অস্থিরতা নিয়েও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে নতুন কর্মকৌশল ঠিক করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে চলমান পরিস্থিতি, নির্বাচন ও মাঠের কর্মসূচির বিষয়ে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের বৈঠকে বসছে। আজ থেকে এই বৈঠক শুরু হচ্ছে।

সমমনাসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া অন্তত ৫০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার এই মুহূর্তে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে শুক্রবার লন্ডনে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার একাধিকবার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা আছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার কথা। এর আগে সালাহউদ্দিন আহমেদের লন্ডন সফরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শনিবার (আজ) থেকে ধারাবাহিক বৈঠক হবে। নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সেখানে আলোচনা হবে।’

এদিকে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের অন্তত দশজন শীর্ষ নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য ‘অস্পষ্ট’। তারা স্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ চান। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত। নেতারা এও মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে তুলতে বহু আয়োজন চলছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও নানা অশুভ চক্র। এসব বিবেচনায় রেখেই সরকারকে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের কাজের গতি ও দক্ষতা থাকলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। তারা আশা করেন, প্রধান উপদেষ্টা, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করবেন। যেন কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি না হয়।

জানা গেছে, বুধবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হয়। ওই সভায় নেতারা বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলম্বের প্রয়োজন নেই। এসংক্রান্ত সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত ভোটের আয়োজন করা সম্ভব।

জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে চলমান পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে বিএনপি। এদিন বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে নির্বাচন ও আন্দোলনের বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এখন পট পরিবর্তনের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ হলে জনগণও তা ভালোভাবে নেবে না।

আবার কালক্ষেপণের পেছনে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। যে কারও রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার আছে, এ ধরনের উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায়। তবে সরকারের ‘অনুকম্পা’ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল যেন না হয়। অতীত ইতিহাস বলে এই ধরনের উদ্যোগ জনগণ গ্রহণ করে না।

এ বিষয়ে শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনি রোডম্যাপ যে দিয়েছেন, সেটি একটু প্রলম্বিত রোডম্যাপ। এটা আমার মনে হয় সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ, কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা। আমরা গণমাধ্যম ও বিভিন্ন জায়গায় দেখছি, জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি রাজনৈতিক দল করছে, ভালো কথা।

এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেরা আছেন, খুবই ভালো কথা। গণতন্ত্রের পথে যখন যাচ্ছি, তখন যে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারেন। কিন্তু এটা যেন আবার রাজকীয় কোনো দল না হয়, এটা মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যদি কোনো দল গঠনের প্রক্রিয়া হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের যে গ্রহণযোগ্যতা তা নষ্ট হবে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর মানুষের বিপুল প্রত্যাশা। তারা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে তাদের দলনিরপেক্ষতা হারান তাহলে তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবাইকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে সংস্কার, জাতীয় নির্বাচনসহ দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, গুশশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। আমরা মনে করি ২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হওয়া দরকার।

দ্রুত নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা, উপদেষ্টাদের ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসে আমরা আন্দোলনের ডাক দেব।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরাও দ্রুত নির্বাচন চাই। কারণ মানুষ দীর্ঘ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। আমরা চাই একটা স্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ। সংস্কারের নামে নির্বাচনে কালক্ষেপণ করা ঠিক হবে না।

জনগণের নির্বাচিত সরকার চাই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেমন আন্দোলন করে তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, তেমনি আগামীতেও নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন হবে। আমরা আরেকটা ওয়ান-ইলেভেনের সরকার চাই না। এই সরকারের ছত্রছায়ায় আরেকটা কিংস পার্টি তৈরি হোক এটাও আমরা চাই না।

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078