নারী মানেই দেহসর্বস্ব নয়— এটা বোঝাতে আর কতদিন: ঋতুপর্ণা

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৩:৫৮ , অনলাইন ভার্সন
হতেই পারে— কোনো পুরুষের মধ্যে নারীসুলভ গুণ বা বৈশিষ্ট্য বেশি। তাতে সমস্যা কোথায়? আমার তো কোনো সমস্যা হয় না। উদাহরণ হিসাবে মনে পড়ছে ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা। ৮ মার্চ (শনিবার) নারী দিবস উপলক্ষ্যে একটি গণমাধ্যমে জানালেন তার মনের কথা। নারী মানেই দেহসর্বস্ব নয়, তাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তাও রয়েছে। এটা বোঝাতে আর কত যুগ কেটে যাবে বলে জানান টালিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। 

ঋতুপর্ণা বলেছেন, নারীদের লড়াইয়ের কোনো আদি-অন্ত নেই। লড়াই চলতেই থাকে এবং এর কোনো বিকল্প নেই। আমার জীবনে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে লড়াই। এই জায়গা থেকে আমার উপলব্ধি— লড়াই আর লড়াইয়ের ক্ষমতা নিয়েই বুঝি নারী জন্মেছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যে সে লড়ে যায়, লড়ে নেয়। যতদিন থাকব, থাকবে সে আমাদের সঙ্গে। তবে হ্যাঁ, লড়াইয়ের লক্ষ্য যেন স্থির থাকে। লক্ষ্যহীন লড়াই একটা সময়ের পর অর্থহীন, মূল্যহীন— অন্তত আমার কাছে তা-ই। এই লক্ষ্য নিজেকেই তৈরি করতে হবে। সেই লক্ষ্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। অনেক সময়েই হয়তো নানা কারণে পিছু হটতে হয়। তার পরও এগিয়ে চলাই কাম্য।

অভিনেত্রী বলেন, আমার মনে হয়, নারী যেন বহমান নদী। নদীপথে অনেক নুড়ি, বালি, কাঁকর জড়ো হয়। তাতে নদীর গতি রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নদী কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেসব পেরিয়ে এগিয়ে চলে। আমরা নারীরাও যেন তাই-ই। এভাবেই বাধা-বিপত্তি ঠেলে সরিয়ে প্রতিমুহূর্তে এগিয়ে যাই। যতক্ষণ না আমাদের কেউ এসে ধ্বংস করে দেয়। যদিও নারীকে ধ্বংস করা এত সহজ নয়।

তিনি বলেন, একুশ শতকেও নারী পণ্য না মানুষ— এই নিয়ে তর্ক হয়। আমার চোখে নারী স্বাধীন, নিজস্ব পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকা সম্পূর্ণ। যে নারী সংসার-সন্তান সামলে এগিয়ে চলেন। যিনি পারেননি, পারেন না বা করতে চান না— তিনিও। নারীকে দশভুজা হতেই হবে— এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সে যেমন, তাতেই সে পরিপূর্ণ। হ্যাঁ, একসঙ্গে অনেক কিছু করতে পারলে আরও ভালো। অবশ্যই সেটি তার বাড়তি গুণ। একইভাবে না থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই।

ঋতুপর্ণা বলেন, এগুলো যদি নারীর গুণ হয় তা হলে কোনো পুরুষ যদি নারীসুলভ হন সেটিও তার গুণ, অন্তত আমি মনে করি। হতেই পারে, কোনো পুরুষের মধ্যে নারীসুলভ গুণ বা বৈশিষ্ট্য বেশি। তাতে সমস্যা কোথায়? আমার তো কোনো সমস্যা হয় না! বরং যারা এই ধরনের মানুষদের কটাক্ষ করেন, ব্যঙ্গ করেন— আমার তাদের নিয়ে আপত্তি, তাদের নিয়ে সমস্যা। 

অভিনেত্রী বলেন, এটা তাদের অশিক্ষা। উদাহরণ হিসাবে মনে পড়ছে ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা। ঋতুদার সঙ্গে যতগুলো কাজ করেছি, সেগুলো আলাদা মাত্রা যোগ করেছে আমার জীবনে। আজ মনে হয়, ঋতুদা শরীরে-মনে নারীর বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছিলেন বলেই যে কোনো মেয়েকে খুব ভালো বুঝতে পারতেন। ওর ছবিতে নারী চরিত্র তাই অন্যভাবে ধরা দিত। ওকেও অনেক কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে। ঋতুদার জীবদ্দশায় ওর কাজ, ওর গুণের থেকে ওর নারীসুলভ আচরণ বেশি আলোচিত। এটা সমাজের অশিক্ষা, আমাদের সমস্যা। ঋতুপর্ণ ঘোষের নয়। এই জায়গা থেকেই বলতে ইচ্ছে করছে— নারী মানেই দেহসর্বস্ব নয়, তাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তাও রয়েছে। এটা বোঝাতে আর কত যুগ কেটে যাবে? 

ঋতুপর্ণা বলেন, প্রকৃতি নারীকে এভাবেই তৈরি করেছে, তাকে সাজিয়েছে। তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। সেই দেহকাঠামোই নারীর প্রতি লোলুপ করেছে পুরুষকে, আজও! আদিম, বর্বর যুগের কথা না হয় আলাদা। তখন মানুষের শিক্ষা ছিল না। নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদ নয়, সবাই মানুষ— এই বোধ তাদের ছিল না। এখন তো আমরা নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করি! তার পরও নারীদেহ কেন ভোগ্যপণ্য? কেন তার ওপর এখনো পাশবিক অত্যাচার চলবে? আমাদের সমাজের ত্রুটি। প্রকৃত শিক্ষার অভাব। তাই এখনও নারী পাশবিক অত্যাচারের শিকার। আরও সচেতনতার প্রয়োজন। আরও বেশি করে প্রতিবাদী হতে হবে। নারীর নিজের অধিকার নিয়ে সরব হতে হবে, তবে যদি অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ইদানীং কেন জানি মনে হয়, সহ্য করতে করতে নারী এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে সে-ও প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই নীরব!

অভিনেত্রী বলেন, হ্যাঁ, আমাদের পেশায় এখনো নায়করাই এগিয়ে। উপার্জন, সম্মান, যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি— সব দিক থেকে। ইদানীং কখনো-সখনো নায়িকা বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। সেটা যদিও খুব কমই ঘটে। এখন আগের তুলনায় নারীকেন্দ্রিক ছবিও বেশি তৈরি হচ্ছে। সেসব ছবিতে কাজ করে উপার্জনের ক্ষেত্রে হয়তো নায়িকা এগিয়ে থাকেন। কিন্তু তার সংখ্যাও খুবই কম। যেদিন নায়ক-নায়িকা উভয়েই সমান গুরুত্ব পাবেন, একমাত্র সে দিন এ সমস্যা মিটবে।

তিনি বলেন, এর সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। সেই নায়িকা যদি উচ্চাকাঙক্ষী হন, তা হলে কী হবে? কেন বললাম এই কথা? কারণ একজন নারীর এই চাওয়া পেশা এবং ব্যক্তিগত জীবন— দুদিকেই চরম অশান্তি ডেকে আনে। আশা ভোঁসলেজিও এই মত সমর্থন করে একসময় বলেছিলেন, এই মানসিকতার মেয়েদের সংসার করা উচিত নয়। মেয়েদের উচ্চাশা এখনো পরিবার, সমাজ এবং পুরুষ মেনে নিতে পারে না। নারীদের উচ্চাকাঙক্ষী হওয়াতে আমি দোষের কিছু দেখি না। উঁচুতে উঠতে কে না চায়?

অভিনেত্রী বলেন, এ প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুরের একটা কথা মনে পড়ছে। সুমন ঘোষ পরিচালিত ‘পুরাতন’ ছবি দিয়ে ১৪ বছর পর বাংলা ছবিতে ফিরলেন। ছবির প্রযোজনা এবং অভিনয়ের সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখলাম ওকে। পরিপূর্ণ এক নারী। সৌন্দর্য, শিক্ষা, রুচি, অভিনয় প্রতিভার সমাহার তার মধ্যে। পেশাজীবনের পাশাপাশি সংসার সামলানো, নিখুঁতভাবে স্ত্রী-মা-দিদার ভূমিকা পালন করা— একজন নারীই পারে এত কিছু করতে। আমার চোখে শর্মিলা ঠাকুর তাই আদর্শ নারী।

ঋতুপর্ণা বলেন, আর এক নারীর কথা না বললে নারী দিবস নিয়ে আমার ভাবনা যে অসম্পূর্ণ হবে। তিনি আমার মা নন্দিতা সেনগুপ্ত। মাত্র তিন মাস আগে মাকে হারিয়েছি। আমার জীবনপথের ধ্রুবতারা। সারাক্ষণ মাকে মনে পড়ছে। মায়ের বলা কথা, মায়ের গায়ের গন্ধ, মায়ের ভাবনা— আমাকে যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মা আমার জীবনকে যেভাবে গুছিয়ে দিয়ে গেছেন, তিনি না থাকলে আজকের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে কেউ পেতেন না। মায়ের কথা বলতে বসলেই ইদানীং চোখ ভিজে যায়, ‘মা হারানো কী যন্ত্রণা বোঝাই বলো কেমন করে।’

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078